29/12/2021
Guinea Pig Lovers Of BD GPLBD
গিনিপিগ এর প্রাথমিক যত্ন :
বিভিন্ন বিষয নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাথমিক কিছু শিক্ষা নিচে বলা হলো।আশা করি নতুন পুরাতন সবার উপকারে আসবে এবং আপনার গিনিপিগের অবস্থা বুঝে যত্ন নিতে পারবেন।
⚠️ গিনিপিগ ধরার পদ্ধতি:
গিনিপিগ ধরার জন্য বুক বরাবর এবং পেছনের পা বরাবর এমন ভাবে ধরতে হবে যেনো ওর পুরো শরীর আপনার হাতের support এ থাকে। কান/ পা / ঘাড় ধরে উঠানো যাবে না। উপুড় / উল্টো করা যাবে না। জাপ্টে ধরা যাবে না।
⚠️ থাকার জায়গা :
গিনিপিগ সোজা সমতল জায়গায় থাকে। তারা উঁচু নিচু / খাঁড়া জায়গা ( মই, সিঁড়ি ) দিয়ে চলতে পারে না। তাদের মেরুদন্ড অন্য প্রাণীর চেয়ে নরম হয়ে থাকে। এছাড়া ওদের পা নরম মেঝের উপযোগী। তারা ইদুর বা হেম্সটার এর মত বাইতে পারে না। এবড়োথেবড়ো / পাথুড়ে জায়গা তাদের জন্য নয়।
তাই গিনিপিগ এর ঘর হবে সমতল, মেঝে তে কোনো গ্রিল বা তারজালি থাকবে না। পাখির গ্রিল এর খাঁচা গিনিপিগ এর উপযোগী না। কাচের একুরিয়াম এ গিনিপিগ রাখা যাবে না। কাঠ / প্লাষ্টিক frame / solid floor with গ্রিল এর দেয়াল দিয়ে বানানো খাঁচা দিতে পারেন। পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল এর সুব্যবস্থা থাকতে হবে। মেঝে অবশ্যই সমতল সলিড হতে হবে। মেঝে তে কাপড় / তোয়ালে / কাগজ এর স্তর দিতে পারেন।
কাঁচা মাটির ঘরে রাখা যাবে না। মাটি ঠান্ডা এবং গিনিপিগ এর পটির সাথে মাটি মিশে পোকা হতে পারে। গিনিপিগ মাঠে চড়ে বেড়ানো প্রাণী। তাই ওদের হাটা চলার জন্য বেশ খানিক জায়গা দিতে হবে। এর জন্য থাকার জায়গা কমপক্ষে ৩ ফুট লম্বা হতে হবে। তার সাথে লুকোনোর একটা জায়গা করে দিলে ভালো।
⚠️. দৈনিক খাদ্য তালিকা :
গিনিপিগ এর প্রধান খাদ্য হলো "ঘাস" এবং "খড়", যা দৈনিক খাবার এর ৮০% হতে হবে । ঘাস ও খড় দাঁত এর জন্য জরুরী।
এ ছাড়া গিনিপিগ ভিটামিন সি আছে এমন সবজি / ফল খেয়ে থাকে। যার মধ্যে আছে শাক, শশা, গাজর, ক্যাপ্সিকাম, ফুলকপি , ফুলকপির পাতা , ব্রুকলি , ব্রুকলির পাতা, লেটুস পাতা, পুদিনা পাতা, টমেটো, অন্যান্য গারো সবুজ সবজি।
ফলের মধ্যে দিতে পারেন কলা, আপেল, পেঁপে, কমলা, স্ট্রবেরি ইত্যাদি। তবে মিষ্টি ফল দৈনিক খাবার জন্য না। দৈনিক পরিষ্কার পানি দিতে হবে। পানি নোংরা হলে বদলাতে হবে। পানির বাতি / বোতল সপ্তাহে একবার পরিষ্কার করতে হবে। পানির পাত্রে শেওলা যেন না পরে।
🚫 গিনিপিগ কে যা যা দেয়া নিষেধ : মাছ, মাংস , ডিম্ , দুধ বা দুধের তৈরী খাবার , মশলা , লবন , অজানা গাছের পাতা বা ফল, আপেল / টমেটোর বোঁটা / পাতা , ভাত , ডাল, চিড়া, বিচি, পাখি বিড়াল হাম্সার এর খাবার ।
⚠️. পরিচ্ছন্নতা :
গিনিপিগ দিন এর অধিকাংশ সময় জেগে থাকে , চড়ে বেড়ায় এবং খাওয়া দাওয়া করে। স্বভাব বশতই মূল মূত্র করে থাকে। থাকার জায়গা বড় হলে পুরো জায়গা একসাথে নোংরা হবে না। মেঝে তে দেয়া কাপড় / তোয়ালে অবস্থা অনুযায়ী এক থেকে দুই দিন পর পর বদলে দিলে গিনিপিগ শুকনো থাকবে। এর জন্য একাধিক কাপড় / তোয়ালে আগে থেকে তৈরী করে রাখতে হবে। এক/২ দিন পরপর কাপড় পাল্টে নোংরা কাপড় ধুয়ে disinfect করে নিতে পারেন। গিনিপিগ ঘাস বা খড় দেয়া স্থানে সাধারণত মল মূত্র করে থাকে। তাই একটা নির্দিষ্ট জায়গা বা কোণ তার খাবার জায়গা করে দিতে পারেন। গিনিপিগ পটি ট্রেইন করা যায় না।
⚠️. গোসল এর নিয়ম :
গিনিপিগ নিজেকে নিজে পরিষ্কার করে। তাই গোসল এর প্রয়োজন খুব কম। গিনিপিগ গায়ে পানি দেয়া পছন্দ করে না। তাই সারা বছর এ দুই থেকে তিন বার গোসল দেয়াই যথেষ্ট। গিনিপিগ ঘন ঘন নোংরা হলে বুঝতে হবে ওর থাকার জায়গা টি পরিষ্কার না। তাকে পরিষ্কার জায়গা দিলে তবেই সে পরিষ্কার থাকবে।
মনে রাখবেন, গিনিপিগ সাঁতার পারে না। তাই গোসল এ গামলায় ১ বা ২ ইঞ্চি পানি নিতে হবে। পানি তে ডুবানো যাবে না। অল্প পানি তে দাঁড়াতে পারবে সে নিজে। গোসল করানোর জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে, তাহলে গিনিপিগ শান্ত থাকবে। ছোট কাপ বা মগ দিয়ে গায়ে আস্তে করে পানি ঢেলে ভিজিয়ে নিতে হবে। মুখে / চোখে পানি দেয়া যাবে না। হালকা খাঁর হীন সাবান / বাচ্চা দের শ্যাম্পু পানি তে গুলে হালকা করে নিতে হবে, এবং গা ঘষা যাবে না , নতুবা লোম পড়ে যাবে। নোংরা লোম ছোট নরম টুথ ব্রাশ দিয়ে আলতো ভাবে পরিষ্কার করা যেতে পারে। গিনিপিগ পিচ্ছিল হলে দৌড়ে পা মচকাতে পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। এটি এড়াতে গামলার ভিতরে তলায় তোয়ালে দিতে পারেন যাতে গিনিপিগ এর পা না পিছলে। গোসল এর সময় ৫ থেকে ১০ মিনিট এর বেশি হবে না, তাই আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। গোসল এর শুয়ে গিনিপিগ কে জাপ্টে ধরা যাবে না। গিনিপিগ কে উল্টো করে তার পেট পরিষ্কার করা যাবে না। মনে রাখবেন ওদের হাড় নরম।
গোসল শেষ হলে তোয়ালে দিয়ে মুছে দিতে হবে। হেয়ার ড্রাই মেশিন দূর থেকে সর্বনিম্ন সেটিং এ ব্যাবহার করা যেতে পারে। গোসল ছাড়া গিনিপিগ এর কোনো নির্ধিষ্ট লোম বা জায়গা পরিষ্কার করতে পারেন নারিকেল তেল দিয়ে। হাত এ অল্প তেল নিয়ে লোম আছড়ে দিতে পারেন। ওই অংশ পানি দিয়ে অবশ্যই মুছে শুকিয়ে নিতে হবে। এছাড়া মাসে একবার গিনিপিগ এর পায়ু স্থান কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছে দিতে পারেন।
গোসল এবং পানি , কোনোটাই গিনিপিগ এর পছন্দ নয়। বালি/ ছাই/ ড্রাই সাম্পু ব্যাবহার করা যাবে না। সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঘন ঘন গোসলের বদলে থাকার ঘর / স্থান পরিষ্কার রাখাই বুদ্ধিমান এর কাজ।
⚠️. দাঁত ও পা এর যত্ন :
গিনিপিগ এর সামনে উপরে ও নিচে চারটি দাঁত ছাড়াও মুখের ভেতর আরো দুই সেট দাঁত আছে। ছোট মুখ হওয়ায় সেগুলো দেখা যায় না। গিনিপিগ এর দাঁত খুব দ্রুত বড় হয়। দাঁত বড় হয়ে একটার সাথে আরেকটা লেগে খাবার এর পথ বন্ধ করে দিতে পারে। তাই গিনিপিগ কে সব সময় ঘাস / খড় দিতে হবে। ঘাস খড় চিবালে গিনিপিগ এর দাঁত ছোট থাকে, ভালো থাকে, মাড়ি সুষ্ট থাকে।
গিনিপিগ এর পা খুব নরম ও কোমল। পা এর তলায় নরম মাংস আছে। গিনিপিগ তাই শক্ত , রুক্ষ, অসমতল জায়গায় চলতে পারে না। গিনিপিগরা ইঁদুর এর মতো পা দিয়ে কিছু আঁকড়ে ধরতে পারে না। তাই মেঝে গ্রিল বা তারজালির হলে ওদের দাঁড়াতে কষ্ট হয় , পা এর তোলা ফেটে যেতে পারে এবং সাথে ইনফেকশন হতে পারে।
গিনিপিগ এর পায়ে নখ আছে। নখ সাদা / কালো রং এর হতে পারে। আমাদের মতোই গিনিপিগ এর নখ কেটে দিতে হবে। নখ এর গোড়ায় রক্ত নালী দেখা যায়। কালো নখ হলে আলো দিলে গোড়ায় রক্ত নালী দৃশ্যমান হয়। রক্ত নালীর আগে কাটতে হবে। রক্ত নালী স্পর্শ করে কাটা যাবে না। নতুবা রক্ত ঝরতে থাকবে / আঘাত পাবে। নখ আগা থেকে অল্প করে কাটতে হবে। নখ না কাটলে বড় হয়ে পা বেঁকে থাকবে , যা ওদের চলা ফেরায় বেঘাত ঘটাবে , বড় নখ ধাক্কা লেগে ভেঙে আরো আঘাত পেতে পারে। তাই মাসে এক বার করে নখ কেটে দিতে হবে।
⚠️. খেলার সঙ্গী :
গিনিপিগ সামাজিক প্রাণী। একা গিনিপিগ কখনো ভালো থাকে না। আয়ু কমে যায়। গিনিপিগ একসাথে অবস্যই কমপক্ষে দুটো রাখা ভালো। গিনিপিগ একই লিঙ্গ এর সাথে রাখা ভালো। ছেলের সাথে ছেলে গিনিপিগ। মেয়ের সাথে মেয়ে গিনিপিগ।
ছেলে এবং মেয়ে গিনিপিগ একসাথে রাখা ঠিক না।
গিনিপিগ খুব দ্রুত বাচ্চা দেয়। একসাথে ২-৫ টি পর্যন্ত এবং পর পর বাচ্চা নেয়ার সামর্থ রাখে। তাদের বাচ্চা পেটে থাকার সময়কাল ৬০-৭৫ দিন । ৩-৪ মাস বয়স থেকেই তারা বাচ্চা দিতে পারে। কিন্তু , এত গুলো বাচ্চা পেটে রাখা এবং প্রসব করা গিনিপিগ এর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অধিকাংশ সময় বাচ্চা গুলো প্রতিবন্দি হয়ে থাকে এবং অনাকাঙ্খিত গর্ভপাত হয়ে থাকে । মনে রাখবেন গিনিপিগ নরম কোমল ছোট প্রাণী , তাদের হাড় নরম। অনুগ্রহ করে বাচ্চা হোয়ানো থেকে বিরত থাকবেন।
⚠. রোগ বোঝার উপায় :
গিনিপিগ এর অসুখ হলে সেটা সহজে বোঝা যায় না । যেহেতু গিনিপিগ স্বভাব বশত লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে, তাই ওদের অসুস্থতাও লুকিয়ে রাখে । এটা ওদের প্রকৃতিতে টিকে থাকার একটা নিয়ম ।
আপনার গিনিপিগ এর সুস্থতার সর্ব প্রথম পরিমাপক হলো ওদের মল মূত্র দেখে বোঝা । মানুষের মতোই ওদের ও ডায়রিয়া , পেটে গ্যাস , ইনফেক্শন , হতে পারে । ওদের মূল মূত্র লক্ষ্য করলে আপনি বুঝবে পারবেন ।
কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখলে আপনি নিজেই বুঝবেন ওদের রোগে হয়েছে কিনা :
১. মূত্রের রং রক্ত লাল হলে
২. মূল এর আকৃতি ভিন্ন হলে, ভেঙে গেলে, কিংবা নরম হলে , গন্ধ হলে
৩. দাঁত কিট কীট আওয়াজ করতে থাকলে
৪. লোম খাঁড়া / অজাচালো / উশখুশ দেখতে হলে
৫. লোম পরে গেলে / টাক হয়ে গেলে
৬. হাঁটার সময় হেলে দুলে হাঁটলে
৭. পেট ফুলে গেলে / পেট ফাঁপা বোধ হলে
৮. চোখ নাক থেকে পানি পড়লে / বেশি ভিজে থাকলে
৯. খাওয়ায় অরুচি হলে / খেতে না চাইলে
১০. পা ফুলে গেলে / ঘা হলে
জেনে রাখবেন , এগুলো কম বেশি common and serious রোগ এর মধ্যে সাধারণ লক্ষণ। ভয় পাবার কারণ নেই। তবে যত দ্রুত সম্ভব Pet doctor এর থেকে সহায়তা নিবেন।