11/03/2020
#পোষা_পাখি_পালনের_শখকে_সংখ্যায়_বেঁধে_দেয়ার_বিধিমালা_বাস্তবতা_বিবর্জিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বল্প মূল্যের নিরীহ পোষা পাখি পালনের শখকে সংখ্যা দিয়ে বেঁধে দিয়ে বন মন্ত্রনালয় বাস্তবতা বিবর্জিত বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। এবং এটি অধিক মূল্যের বন্য হরিন, কুমির, হাতি, সাপ পালনের বিধিমালার অনুরুপ। এবিধিমালার কারণে দেশের বেকার যুবকসহ গৃহিনীদের স্বল্প আয় অর্জনের ক্ষেত্রে আশার আলো নিভে যাবে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশ। এছাড়া এসব বিধিমালা শৌখিন পাখি পালকের পক্ষে মেনে চলা সম্ভব নয়।
এসব কথা বলেছেন এক্সোটিক বার্ড ব্রীডার্স এ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ। জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এক্সোটিক বার্ড ব্রীডার্স এ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সভাপতি আজিজুল হক ফরহাদ। উপস্থিত ছিলেন এভিয়ান কমিউনিটি নেতা মোঃ আলী চৌধুরী, এভিকালচারাল সোসাইটি অফ বাংলাদেশ ডঃ আমজাদ চৌধুরী এবং সিনিয়র ফটো সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয় বন অধিদপ্তর তাদের মন্ত্রালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে বৈধ বিদেশী পোষা পাখির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রধান পক্ষ শৌখিন পোষা পাখি পালনকারী ও প্রজননকারীদের সরকার রেজিষ্ট্রার্ড সংগঠনগুলোকে না জানিয়ে গোপনে এমন একটি বাস্তবতা বিবর্জিত বিধিমালা পাশ করিয়ে নিয়েছে। যা মূল আইন বন্যপ্রানী সংরক্ষন আইন ২০১২ এর অতিরিক্ত হিসেবে গেজেট করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে বন্য পাখি যেমন সবুজ টিয়া, চন্দনা টিয়া, ময়না, তিলাঘুঘু, বাবুই, মুনিয়া, দোয়েল, শালিক, কালেম, ধনেশ ইত্যাদি যা লালন-পালন করা অবৈধ। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এই পাখি পালনে, এমন বিধিমালা বা এর চেয়েও কঠোর বিধিমালাকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে খাঁচায় জন্ম নেওয়া আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত ও শুল্ক পরিশোধ করে আমদানীকৃত বৈধ খাঁচার পোষা পাখি (Cage Bird) লালন পালন ও প্রজনন (Free breeding) করানো সম্পূর্ন রুপে বৈধ। বিভিন্ন প্রজাতির পোষা পাখি বিভিন্ন মূল্যমানের হলেও বাংলাদেশের পাখি পালকেরা গড়ে ২০০-১০০০ টাকা মূল্যের পাখি পালন করে থাকেন। সেখানে দশটির অধিক পাখি পালনের জন্য ১০,০০০ (দশ হাজার ) টাকা লাইসেন্স ফি, প্রতি পাখির জন্য ২,০০০ (দুই হাজার) টাকা পজেশন ফি, পাখি জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন, ব্যয় বহুল পাখির রিং, অস্বাভাবিক খাঁচার মাপ, পদে পদে অজামিন যোগ্য জেল জরিমানা, আমদানির চেয়ে রপ্তানি ফি বেশি ইত্যাদির মাধ্যমে বন মন্ত্রনালয় এমন একটি বিধিমালা প্রণয়ন করেছেন, যা একজন শৌখিন পাখি পালকের পক্ষে মেনে চলা সম্ভব নয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বৈধ পোষা পাখির ক্ষেত্রে এমন কঠোর বিধিমালা বাংলাদেশের সকল বয়সের পাখি পালকদের আতঙ্কিত করে রেখেছে। তাদের মতে,বিদেশী পোষা পাখি পালনকারীদের বিধিমালা কার্যকরের আগেই এই বন্য আইন থেকে মুক্তি দেওয়া হোক ও বিধিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনে। এবং দেশের পোষা পাখির সেক্টর উন্নয়নে সরকারি রেজিষ্ট্রার্ড সংগঠনের প্রস্তাবনা সম্বলিত চিঠিকে গুরুত্ব দেওয়া হোক।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ পোষা পাখি পালকেরা প্রাণী সম্পদের অধীনে থাকা ফেন্সি কবুতরের মত বৈধ পোষা পাখি লালন-পালন করেন। এটি বেকার যুবক-যুবতী ও গৃহিনীদের স্বল্প আয় অর্জনের ক্ষেত্রে একটি আশার আলো। মাদকাসক্তদের মাদক থেকে মুক্তির একটি হাতিয়ার। কিন্তু স্বল্প মূল্যের নিরীহ পোষা পাখি পালনের শখকে সংখ্যা দিয়ে বেঁধে বন মন্ত্রনালয় যে বিধিমালা প্রণয়ন করেছেন তা অধিক মূল্যের বন্য হরিন, কুমির, হাতি, সাপ পালনের বিধিমালার অনুরুপ। ফলে এই বিধি মালা বাস্তবতা বিবর্জিত।এই বিধিমালা কার্যকর হলে কোন পাখি পালকগণ কোন বৈধ পাখি ক্রয়, পালন ও প্রজনন করাতে পারবেন না।
তারা বলেন, দেশে পোষা পাখির বাজার খুবই ছোট, রপ্তানি ক্ষেত্র তৈরী হয়নি। উন্নত বিশ্বের মত হাজার জোড়া পোষা পাখি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন বাণিজ্যিক খামার গড়ে ওঠেনি। বৈধ পোষা পাখির ক্ষেত্রে এমন কঠোর বিধিমালা বিশ্বের কোথাও নেই, যা আছে তা প্রয়োগ হয় শুধু বন্য প্রানী ও বিলুপ্তপ্রায় পাখি সংরক্ষনের জন্য। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “একটি বাড়ী ও একটি খামার” এর স্বপ্নের কথা বলেছেন, বৈধ বিদেশী পাখি পোষা শিল্পের সম্প্রসারনের মাধ্যমে তা সহজতর হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এই বিধিমালা “একটি বাড়ি ও একটি খামার’’ এর স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করবে। এই বিধিমালা বৈধ শৌখিন বিদেশী পাখি পালনকারীদের উপর প্রয়োগে চেষ্টা দেখলে মনে পড়ে যায়, পুলিশ আসামী ধরতে গিয়ে, আসামীকে না পেয়ে তার শিশু সন্তানকে ধরে আনার মত অবস্থা । বানিজ্যিক খামার পাইনি তো কি হয়েছে, আবাসিক পাখিঘরকেই ধরা হোক।
ঢাকা | সর্বশেষ আপডেট মার্চ ১১, ২০২০ ইং ১:২৮ অপরাহ্ণ
FacebookTwitterPinterest