22/12/2020
বাজরিগার পাখি পালনঃ ৫০ টি টিপস
(১) ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। পাখি কেনার আগে পরিকল্পনা করুন, পাখি নিয়ে আপনার ভাবনা পরিষ্কার করুন।
(২) পাখি কেনার আগে আপনার পরিচিত কোন পাখি পালকের সাথে কথা বলুন, তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো জানুন।
(৩) আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতামত নিয়ে নিন।
(৪) পাখি কোথায় রাখবেন তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করুন।
(৫) আগে খাঁচা আর আনুসঙ্গিক জিনিষপত্র কিনে আনুন।
(৬) পরিচিত কারো কাছ থেকে পাখি কিনুন।
(৭) “পাখি কবে ডিম-বাচ্চা দিবে?” -এই প্রশ্ন মাথায় আনবেন না। যদি এই ভাবনা থেকে বাজেরিগার কিনতে চান, তাহলে সম্ভবত এই পাখি আপনার জন্য উপযুক্ত নয়।
(৮) ৩-৪ মাস বয়সী পাখি কিনবেন।
(৯) পাখি কিনে বাসায় আসার পর তাদের খাবার আর পানি দিয়ে ১-২ দিন নিরিবিলি থাকতে দিন।
(১০) বাজার থেকে পাখি পালনের উপর কোন বই কিনে আনুন।
(১১) পাখিদের চিনা-কাউনের পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি আর ডিম খেতে দিন।
(১২) প্রাপ্তবয়ষ্ক না হওয়া পর্যন্ত ছেলে ও মেয়ে পাখি আলাদা রাখুন।
(১৩) ৮-৯ মাস বয়স হবার পর ব্রীডিং মুডে থাকলে তাদের জোড়া দিন।
(১৪) জোড়া বাধার পর বড় মাপের হাড়ি দিবেন।
(১৫) এক জোড়া পাখির জন্য কমপক্ষে ১৮-১৮-১৮ মাপের খাঁচা দিবেন।
(১৬) সবসময় ক্যাটলফিস বোন আর মিনারেল ব্লক খাঁচার রাখবেন।
(১৭) এর পর আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।
(১৮) তাদের বেশি বিরক্ত করবেন না।
(১৯) আপনার যে কোন সমস্যা অভিজ্ঞজনদের জানান ও তাদের পরামর্শ নিন।
(২০) অসুখ হলে দেরি করবেন না, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
(২১) দোকানী বা অনভিজ্ঞদের কথায় কোন ঔষুধ খাওয়াবেন না।
(২২) অযথা ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়াবেন না।
(২৩) ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পর থেকে সফট ফুড দিন।
(২৪) পাখির খাবার ও পানি সন্ধ্যার পর সরিয়ে রাখবেন, পরদিন সকালে পরিষ্কার পানি আর ফ্রেশ খাবার দিবেন।
(২৫) পচনশীল খাবার ৩-৪ ঘন্টার বেশি খাঁচায় রাখবেন না।
(২৬) মাসে এক বার এসিভি কোর্স করাবেন।
(২৭) পাখির ঘরের তাপমাত্রা ২৫-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখবেন।
(২৮) পাখিদের ব্রিডিং মেশিন মনে করবেন না।
(২৯) এক জোড়া পাখিকে বছরে ৩ বারের বেশি ব্রিডিং করাবেন না।
(৩০) বিশ্রামের সময় ছেলে ও মেয়ে পাখি আলাদা রাখুন।
(৩১) বাচ্চাদের বয়স ৩ সপ্তাহ হয়ে গেলে ফিমেল পাখিকে আলাদা করে দিন।
(৩২) এক খাঁচায় এক জোড়ার বেশি পাখি রাখবেন না।
(৩৩) পাখিদের নিয়মিত গোসল করাবেন।
(৩৪) নতুন কোন খাবার দিলে তারা সাথে সাথে নাও খেতে পারে। তাই নতুন খাবার প্রতিদিন দিতে থাকুন যতদিন না তাদের অভ্যাস হয়।
(৩৫) প্রথম বাচ্চাদের বিক্রি করবেন না। কারন তারাই আপনাকে সবচেয়ে ভালো ফল দিবে।
(৩৬) এক ঘরের বাচ্চা জোড়া দিবেন না।
(৩৭) জোড়া বাধার আগে খাঁচায় হাড়ি দিবেন না।
(৩৮) পাখিদের গায়ে সরাসরি বাতাস লাগাবেন না।
(৩৯) সপ্তাহে ২ দিন তাদের সান-বাথ করাবেন।
(৪০) এক হাড়ি ৩ বারের বেশি ব্যবহার করবেন না।
(৪১) পাখির খাঁচা থেকে বাচ্চাদের নিরাপদ দূরত্বে রাখুন।
(৪২) পাখির ঘরের বারান্দা ও জানালায় নেটিং করে দিন।
(৪৩) সন্ধ্যার পর অযথা পাখির ঘরের বাতি জ্বালিয়ে রাখবেন না।
(৪৪) অসুস্থ্য পাখির চিকিৎসার জন্য একটি ছোট খাঁচা রাখুন।
(৪৫) যেখানে সবসময় লোকসমাগম থাকে সেখানে পাখি রাখবেন না।
(৪৬) বাতাস চলাচল করে না এমন জায়গায় পাখি রাখবেন না।
(৪৭) অভিজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া পাখিদের নতুন নতুন খাবার খাওয়াবেন না।
(৪৮) মনে রাখবেন পাখিদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ আছে।
(৪৯) তাদের মন ভালো রাখুন, খেলনা দিন।
(৫০) উপরের ৪৯টা আবার পড়ুন।
খাঁচাঃ
আমি ১৮*১৮*১৮ মাপের খাচা ব্যবহার করি যাতে তারা যথেষ্ট জায়গা পায়। এতে বাচ্চারা যখন হাড়ি থেকে বের হয় তখন খেলাধুলার জন্য অনেক জায়গা পায়।
হাড়ি সেটিংঃ
মেটিং দৃষ্টিগোচর হবার পর আমি হাড়ি দেই। নতুন হাড়ি হলে সমস্যা নেই, কিন্তু পুরাতন হাড়ি হলে সেটাকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে আগুনে পুড়িয়ে জীবানুমুক্ত করে তারপর খাঁচায় সেট করি। হাড়িটা এমন ভাবে ঝুলাই যাতে তারা হাড়ির উপর বসতে না পারে। হাড়ির জায়গাটা কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন হলে ভালো হয়। এটা করার জন্য আমি খাঁচার উপরে একটি কাপর দিয়ে দেই যাতে সরাসরি আলো প্রবেশ করতে না পারে। হাড়ি দেবার পর আবার তাদের পর্যবেক্ষণ করি। এর পর আসলে আমার তেমন কিছু করার থাকেনা কেবল মাত্র তাদের ঠিকমত খাবার দেয়া ছাড়া।
কম বয়সী পাখি কেনো
যখন তুমি পাখি পালন শুরু করবে তখন কম বয়সী পাখি কিনবে। তাদের তোমার নিজের পরিবেশে বড় কর, তারা তোমার পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিবে, তোমার দেয়া খাবারে অভ্যস্ত হবে তবেই তারা আগত বছরগুলোতে তোমাকে সর্বোত্তম ফলাফল দিবে।
জোড়া নির্বাচন
ভালো জোড়া নির্বাচনের কোন বিকল্প নাই। আপনি যদি স্বাস্থ্যবান বাচ্চা চান তাহলে সুস্থ্য জোড়া নির্বাচন করতে হবে।
ব্রিডিং এর জন্য প্রস্তুতি
আমি ৩-৪ মাস বয়স থেকেই ছেলে পাখি ও মেয়ে পাখি আলাদা রাখি। এতে করে সবচেয়ে বড় সুবিধা যেটা পাওয়া যায় সেটা হল যখন ব্রিডিং এর জন্য আমি তাদের এক খাঁচায় রাখি তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জোড়া নিতে কম সময় নেয়। আমি সারা বছর তাদের পুষ্টিকর খাবার দেই। যেমন এগফুড, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি।৮-১০ মাস বয়স হবার পর ব্রিডিং মুডে আসলে আমি ছেলে ও মেয়ে পাখি নির্বাচন করে এক খাঁচায় নিয়ে আসি। মনে রাখতে হবে এই সময় খাঁচায় কোন প্রকার হাড়ি দেয়া যাবেনা। এবং খেলনা কমিয়ে দিতে হবে। কেবল একটা দোলনা রাখি। এক খাঁচায় নিয়ে আসার পর আমি কমপক্ষে ৩০ মিনিট তাদের পর্যবেক্ষণ করি। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখি। যদি উভয় পক্ষ থেকে ভালো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় তাহলে সেভাবেই তাদের কিছু দিন রেখে দেই এবং লক্ষ্য রাখি যে তারা মেটিং করছে কিনা।
হাড়ি সেটিং
মেটিং দৃষ্টিগোচর হবার পর আমি হাড়ি দেই। নতুন হাড়ি হলে সমস্যা নেই, কিন্তু পুরাতন হাড়ি হলে সেটাকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে আগুনে পুড়িয়ে জীবানুমুক্ত করে তারপর খাঁচায় সেট করি। হাড়িটা এমন ভাবে ঝুলাই যাতে তারা হাড়ির উপর বসতে না পারে। হাড়ির জায়গাটা কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন হলে ভালো হয়। এটা করার জন্য আমি খাঁচার উপরে একটি কাপর দিয়ে দেই যাতে সরাসরি আলো প্রবেশ করতে না পারে। হাড়ি দেবার পর আবার তাদের পর্যবেক্ষণ করি। এর পর আসলে আমার তেমন কিছু করার থাকেনা কেবল মাত্র তাদের ঠিকমত খাবার দেয়া ছাড়া।
চক্রাকারে ব্রিডিং
আমি মাত্র ২টি ব্রিডিং সেটআপ রেখেছি। আমি মুলত যা করি সেটা হল, একসাথে ২ জোড়াকে ব্রিডিং এ দেই। তাদের ব্রিডিং শেষ হয়ে যাবার পর নতুন আরো ২ জোড়া ব্রিডিং এ দেই এবং যাদের ব্রিডিং হয়ে গেছে তাদের ফ্লাইট খাঁচায় বিশ্রামে দিয়ে দেই। এভাবে একবার ব্রিডিং এর পর তারা বিশ্রামে চলে যায় এবং পরবর্তী ব্রিডিং এর আগে পর্যন্ত যথেষ্ট সময় পায়। এর আরেকটা সুবিধা হল যদি মেল-ফিমেল পরিবর্তন করতে চান তাহলে সহজেই করা যায়।
প্রধান খাবার
আমার সিড মিক্সে থাকে মূলত চিনা, কাউন আর পোলাও চালের ধান (এটা গ্রীষ্মকালীন সিডমিক্স)। পাশাপাশি আমি ১ দিন পর পর এগফুড আর শাকসবজি, ফলমূল দিতে চেষ্টা করি। ক্যাটলফিস বোন সবসময় খাঁচায় থাকে। প্রতিদিন পরিষ্কার পানি দেয়া আবশ্যক। খাবারও আমি প্রতিদিন সকালে বদলে দেই। এক জোড়া পাখির জন্য ২-২.৫ টেবিল চামচ সিডমিক্স দেয়া যথেষ্ট।
বাচ্চার খাবার
অনেকেই অনেক কথা বলেন। কিন্তু তাদের সেইসব যুক্তিহীন কথাবার্তা আমলে না নিয়ে আমি আমার জ্ঞানে যা শিখেছি বাচ্চাদের জন্য তাই করি। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পর থেকে আমি নিয়মিত নরম খাবার দিতে চেষ্টা করি। যেমন এগফুড সাথে ভুট্টা সিদ্ধ। অল্প ডিমের সাথে ভুট্টা সিদ্ধ মিশিয়ে দিলে বাবা-মা পাখির জন্য বাচ্চাদের খাওয়াতে সুবিধা হয় এবং বাচ্চা স্বাস্থ্যবান হয়ে বেড়ে ওঠে।
সময়
যে বিষয়টার কথা না বললেই নয়, সেটা হল সময়। আমি পাখি পালা শুরু করার ৮ মাস পর ব্রিডিং করাতে পেরেছিলাম। কিন্তু এখন দেখি বিশেষ করে নতুনরা ব্রিডিং জোড়া কিনতে বেশি আগ্রহী। ১ সপ্তাহের মধ্যে ডিম-বাচ্চা দিবে এই কথা শুনলে তারা অস্থির হয়ে সেই পাখি কিনে আনেন। আমার প্রশ্ন হল, যদি ১ সপ্তাহের মধ্যেই ডিম-বাচ্চা দিবে তাহলে বিক্রেতা সেই জোড়া বিক্রি করছেন কেন? যদি সন্তোষজনক জবাব পান তাহলে ভেবে দেখতে পারেন, নচেৎ নয়। আমার আজকের এই অবস্থানে আসতে ২ বছর লেগেছে। হয়ত আরো তাড়াতাড়ি সাফল্য লাভ করা যেত কিন্তু আমি তাড়াহুড়া করিনি। তাই যারা নতুন পাখি পালছেন তাদের জন্য আমার পরামর্শ, আপনারা ৩-৪ মাস বয়সী পাখি কিনুন, তাদের ঠিক ভাবে ব্রিডিং এর জন্য প্রস্তুত করুন, সাফল্য আপনার আসবেই।
নিয়মিত চেক
প্রতিদিন তোমার পাখিদের দেখতে যাও। প্রতিটা খাঁচার সামনে কিছু সময় কাটাও, কৌতূহলী হও, পর্যবেক্ষণ কর, দেখ তোমার পাখিরা খুশি আছে নাকি গা ফুলিয়ে এক কোণায় বসে আছে।
পরের দিন বলে কিছু নেই
আমি অনেক পাখি হারিয়েছি কারন আমি গতকাল তাদের অসুস্থ্য দেখেছিলাম অথবা অসুস্থ্যতার লক্ষন ছিল, যেটা আমি আগামীকাল দেখবো বলে মনে করেছিলাম। বিশ্বাস কর, সেই আগামীকাল আর আসেনি। তোমার অসুস্থ্য পাখিদের অতিদ্রুত যত্ন নাও, আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করোনা, আজকেই কর।
অলসতা
আবার আমি অনেক পাখি হারিয়েছি তাদের প্রতিদিন দেখতে না যাবার কারনে। তাদের খাবার-পানি পরীক্ষা করিনি, তাদের হাড়িতে নজর দেইনি, তাদের বাচ্চাদের খেয়াল করিনি, তাদের অস্বাভাবিক আচরনের প্রতি মনোযোগ দেইনি। তোমার পাখিদের প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে চেক করতে যাও। অলসতা করে এটা ভেবো না যে আমি কাল আমার পাখিদের দেখতে যাবো। আবারো বলছি, পাখি পালনে আগামীকাল কখনো আসবে না।
সাধারন জ্ঞান, বিবেচনা ও বুদ্ধি
আমি এখনও কিছু বিষয়ে সাধারন জ্ঞান অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু এতোদিনের অভিজ্ঞতা লাভের পর বুঝতে পেরেছি যে সাধারন জ্ঞানের মাধ্যমে কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনলে বা প্রয়োগ করলে পাখি পালনে বিস্ময় সৃষ্টি করা যায়।
নতুন কৌশল শেখো
দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আমরা ভীষনভাবে বিশ্বাস করি যে আমরা আমাদের জেষ্ঠ্য ব্রিডারদের কাছ থেকে সব কিছু শিখে ফেলেছি। নতুন কৌশল শেখার চেষ্টা কর, সেগুলো প্রয়োগ কর, সেগুলো নিয়ে পড়াশুনা কর, সবার সাথে শেয়ার কর। পাখি পালন এর রীতির পরিবর্তন হয়েছে। আমি যদি নতুন ব্রিডারদের সাথে আমার জ্ঞানের তুলনা করি, তাহলে তারা অনেক বেশি জানে। তাদের জানার অনেক সুযোগ রয়েছে যেটা আমাদের তরুন বয়সে ছিলনা। আমি এটা বলছিনা যে, আমি সহ অন্য জেষ্ঠ্য ব্রিডারদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে কিন্তু যদি সেটা যুগোপোযুগী না হয় তাহলে যুগোপোযুগী করে নিতে হবে। আমি ইন্টারনেট কে সালাম জানাই যে এর কারনে আমি অন্যদের কাছ থেকে শিখতে পারছি। বই পড়, তোমার সহব্রিডারদের দেখতে যাও, আলোচনা কর, তাদের থেকে কিছু জানতে লজ্জা বোধ কোরোনা। বল যে আমি একটা ভুল করেছি, কিভাবে সেটা সংশোধন করা যায়। পাখি পালনে ইতিবাচক হও, নেতিবাচক চিন্তা বাদ দাও।
আমার একটা ইচ্ছার কথা আমি সবার সাথে শেয়ার করতে চাই। আমার ইচ্ছা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর চিড়িয়াখানাটি আমার হবে। আমার এখন মনে হয় বন্দী প্রজননের মাধ্যমে আমাদের বন্য প্রানী সংরক্ষণ করতে হবে। আমি যখন মারা যাবো, মানুষ আমাকে একজন “ভালো ব্রিডার” হিসেবে মনে রাখবে।