12/07/2022
বেট্টা মাছে যত্ন
#বৈজ্ঞানিক নাম: Betta splendens
#অন্যান্য নাম: “Siamese fighting fish” or “labyrinth fish”
#অরিজিনঃ
বেট্টা মূলত এশিয়ান মাছ। অনেকেই বলেন, থাইল্যান্ডের ধানক্ষেত থেকে এদের উৎপত্তি। কিন্তু এই তথ্যগুলো এখন আর তেমন প্রাসঙ্গিক না, কারণ আপনি দোকানে যে বেট্টা মাছগুলো কিনতে পাবেন তার সবগুলো মূলত ব্রীডিং ফার্ম থেকে এসেছে। এ রকম অনেক ফার্ম বাংলাদেশে রয়েছে আর আশার কথা হলো বর্তমানে অনেক সৌখিন বেট্টা ব্রিডার রয়েছেন।
#মজার ইতিহাসঃ
বেট্টা মাছ কে কেন ফাইটার মাছ বলা হয়? বেট্টা মাছ খুব এগ্রেসিভ। বেশ কয়েকটা কে একসাথে রেখে দিলে মারামারি করতে শুরু করে দেয়। প্রথমিক দিকে এদের গায়ের রং এত রঙিন ছিল না। কিন্তু এরা যখন এক্সাইটেড থাকে বা আক্রমণ করে তখন কালার ফুটে উঠতে দেখা যায়। অনেকের মতে অনেকগুলো মাছ কে একসাথে রেখে এদের ফাইটিং দেখার ব্যবস্থা করা হতো বিনোদনের জন্য। আর এভাবেই এদের নাম হয়েছে ফাইটার ফিস।
#জীবনকালঃ
বেট্টা মাছ গড়পড়তায় তিন থেকে চার বছর বাঁচে।
বর্তমানে জেনেটিক্স বা ব্রীডিং লাইন ঘনঘন পরিবর্তন করার ফলে এরা এক-দেড় বছরের বেশি সাধারণত বাঁচেনা।
#আকার আকৃতিঃ
খুব সুন্দর একটা মাছ, আকারে দুই থেকে চার ইঞ্চির বেশি বড় হয় না।
খুবই ইউনিক ফিনেজ আর কালারের হয়ে থাকে।
লেজের আকার আকৃতি এর দিক দিয়ে ভিত্তি করে এটাকে ক্রাউন, রোজেট, হাফমুন, ডেন্টা এরকম বহু নাম দেয়া হয়ে থাকে। যদি একটা একটা করে বর্ণনা দিতে থাকি তাহলে এই লেখা অনেক লম্বা হয়ে যাবে, তাই বাদ দিলাম।
এদের গায়ের রং অসম্ভব সুন্দর হয়ে থাকে যে আপনি প্রেমে পড়ে যাবেন, আপনার মন যে রকম রং কল্পনা করতে পারে আপনি প্রায় তার সবগুলোই এদের মধ্যে পেয়ে যাবেন, সিলেক্টিভ ব্রিডিং এর কারনে।
#ন্যাচারাল হ্যাবিট্যাটঃ
অগভীর জলাশয়, নালা, কিছুটা কম স্রোতের বয়ে যাওয়া পানিতে পাওয়া যায়।
#প্রাকৃতিক পরিবেশে স্বভাব/ মেজাজ মর্জিঃ
এরা হাইলি টেরিটোরিয়াল। একটা মেল (পুরুষ) নিজ প্রজাতির অন্য আরেকটা মেলকে দেখলে আক্রমণ করার জন্য সাথে সাথে তেড়ে আসবে।এমনকি আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে এরা ফ্লার করতে থাকে। কাজেই একটা পুরুষ বেট্টা মাছের সাথে কোনভাবেই আরেকটা পুরুষ বেট্টা মাছ রাখা যাবে না, ভয়ানকভাবে টেরিটোরিয়াল হওয়ায় এরা মারামারি শুরু করে দেবে এবং একজন শেষ হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে। এমনকি ব্রিডিং-এর সময় ছাড়া মহিলা বেট্টাও এদের সাথে রাখা যাবে না।
অনেক বেশি জায়গা নিয়ে থাকতে পছন্দ করে কেননা এরা অন্যান্য কম্পিটিটর আর প্রেডিটর থেকে বেঁচে থাকতে চায়।
বেট্টা মাছ কম অক্সিজেনযুক্ত পানিতে টিকে থাকতে পারে।
#বিশেষ বৈশিষ্ট্যঃ
বেট্টা মাছের ল্যাব্রিন্থ নামের একটা অরগ্যান আছে, বেট্টা মাছ এটার সাহায্যে সরাসরি বাতাসের অক্সিজেন থেকে নিজের অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করতে পারে। আর এভাবে বেট্টা মাছ পানিতে ডিজলভড অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকলে বাতাস থেকে ফুলকার সাহায্যে অক্সিজেন নিয়ে সরাসরি ল্যাব্রিন্থ-এ পাঠিয়ে দেয়। আর তার মানে কিন্তু এই না যে আমরা ইচ্ছা করে বেট্টা মাছকে পচাপানিতে রাখবো।
বেট্টা মাছকে খাবার দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয়ঃ প্রকৃতিতে বেট্টা মাছ খাবারের সন্ধানেই লেগে থাকে। একটা খাবার ধরার পরে তাকে লেগে থাকতে হয় পরবর্তী শিকার ধরার জন্য। কাজেই বেট্টা মাছকে ঘনঘন খাবার দেয়া যাবে না। দিনে দুইবারের বেশি তো কখনই নয়। আমার সাজেশন থাকবে দিনে একবার।অতিরিক্ত খাবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের বেট্টা মাছের মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে।
বেট্টা মাছের পেট ভর্তি খাওয়ার থাকলে তার সাঁতার কাটতেও কষ্ট হয়।
#খাবারঃ বেট্টা মাছ খাওয়ার নিয়ে আপনাকে কোনো বাড়তি প্যাড়া দেবে না।
বেট্টার সাধারণত কার্নিভোরাস বা মাংসাশী মাছ।প্রাকৃতিক পরিবেশে এরা জলজ পতঙ্গ আর লার্ভা খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু ফার্ম-এ বড় হওয়া বেট্টা মাছগুলো লাইভ খাবারের পাশাপাশি শুকনো প্যালেট স্বাচ্ছন্দ্যে খায়। ভালো থাকার জন্য এদেরকে ব্যালেন্সড খাবার দেয়া প্রয়োজন পড়বে। অবশ্যই সে ক্ষেত্রে প্রোটিনের মাত্রাটা বেশি থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফ্রজেন ব্লাড-ওয়ার্ম, শুকনা টিউবিফ্লেক্স দেয়া যেতে পারে।ব্রাইন শ্রিম্প খুব ভালোবেসে খেয়ে নেবে।
#কি পরিমাণে খাবার দেবেন?
কমন একটা ফিডিং রুল শেয়ার করিঃ প্রতিবেলায় মাছকে ততটুকু খাবার দেবেন যতটুকু সে দুই মিনিটের মধ্যে কঞ্জিউম করতে পারে। সেই পরিমাণ টা যেন মাছের শরীরের আকৃতির ৫ শতাংশের বেশি না হয়। #তাপমাত্রাঃ
বেট্টা মাছকে যতই হার্ডি বলা হোক না কেন সত্যি কথা বলতে এরা কিন্তু খুব টেম্পারেচার সেনসিটিভ হয়ে থাকে।এদের প্রেফারেবল তাপমাত্রা হলঃ ২৬-২৮°সেন্টিগ্রেড (78-82°F), যেটা ট্রপিক্যাল মাছের গড়পড়তা তাপমাত্রা থেকে একটু বেশি। যেহেতু এরা এশিয়ান অরিজিন, কাজেই ঠান্ডা পানি একেবারেই সহ্য করতে পারবেনা হিটার লাগবেই।
#অ্যাকুয়ারিয়ামের জন্য পরিবেশঃ
বেট্টা মাছ স্রোত পছন্দ করে না তাই ফিল্টার এর ফ্লো যেন কম থাকে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। শীতকালে অবশ্যই হিটার দিতে হবে যেন তাপমাত্রা কোনভাবেই ২৬°সেন্টিগ্রেড এর নিচে নেমে আসে।
#মিনিমাম ট্যাংক রিকোয়ারমেন্টঃ
কমপক্ষে ৫ গ্যালন ট্যাংক লাগবে, এর নিচে হবে না। আমি সাজেস্ট করি দৈর্ঘ্য প্রস্থ এবং উচ্চতা ১২ ইঞ্চি করে অর্থাৎ ১২ ইঞ্চ কিউব ট্যাংকে এদেরকে স্বাচ্ছন্দ্যে সাথে রাখতে পারেন। মাছ বিক্রির দোকান বা ডিসপ্লে তে আপনি এদেরকে ছোট গ্লাস, বোল, জার বা বয়মের মধ্যে দেখতে পাবেন। বিক্রি বা প্রদর্শনের সুবিধার্থে বাধ্য হয়ে হয়তো তাদেরকে এভাবে রাখতে হয় অল্প কয়েকদিনের জন্য, তার মানে কিন্তু এই না যে বেট্টা মাছ আজীবন একগ্লাস পানিতে কাটিয়ে দিতে পারবে। মনে রাখবেন এত অল্প পানি কোনক্রমেই বেট্টা মাছের জন্য উপযোগী নয়, স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে দিতে হবে। #ট্যাংকমেট/ ফিশ কম্পাটিবিলিটিঃ
বেট্টা মাছ অসাধারণ একটা মাছ, কিন্তু এটাকে ট্যাংকে একা রাখাই ভালো। এভাবেই সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।স্কুলিং ফিশের সাথে রাখলে সেগুলো বেট্টা মাছের লেজ ঠোকাতে থাকবে, ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই আপনার মাছ ন্যাড়া হয়ে যাবে।
নিজের স্বজাতির মাছতো রাখার প্রশ্নই আসে না।একান্তভাবে ট্যাংক মেট দিতে চাইলে করিডোরাস ক্যাট ফিশ, Harlequin Rasbora, Neon Tetra, Ember Tetra, Kuhli Loach বা এই ঘরানার কিছু মাছ দেয়া যেতে পারে।স্নেইল,শামুক দিতে পারেন।
#ব্রিডিংঃ
পুরুষ এবং স্ত্রী বেট্টা এর মাধ্যমে খুব সহজেই ব্রীডিং করা সম্ভব। তবে আজকের লেখায় ব্রীডিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব না। সেটা নিয়ে পৃথক লেখা হতে পারে আপনারা চাইলে।
#বাজারে প্রচলিত ভুল ধারনাঃ
বেট্টা মাছ অল্প এবং নোংরা পানিতে বেঁচে থাকতে পারে।
বেট্টা মাছ খুব হার্ডি মাছ।
#সাধারণত কেমন দাম হয়?
এগুলোর আসলে কোনো ধরাবাধা দাম নেই। মাছের চেহারা, কোথা থেকে আনা হয়েছ (ইম্পোর্টেড কিনা?), বাজারে ওই সময়ে মাছের সাপ্লাই-ডিমান্ড কার্ভ এর কি অবস্থা এগুলোর ওপর ভিত্তি করে দাম নড়াচড়া করতে থাকবে। আপনাকে বুঝতে হবে এটা একটা সৌখিন জিনিস, কাজেই শখ মেটাতে এইটুকু তো সেক্রিফাইস করতেই হবে। সাধারন একটা গাইডলাইন হিসেবে- দেশি ছোটখাটো মাছগুলোকে 80 থেকে 100 টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।আর ইমপোর্টেড মাছ গুলোর দাম ৪০০ থেকে আরম্ভ করে ১২০০ টাকা বা তার উপরেও হতে পারে।
#কোথায় কিনতে পাওয়া যায়?
বেশিরভাগ একুয়ারিয়ামের দোকানে কিনতে পাবেন, তবে বেট্টা মাছ বললে নাও চিনতে পারে, ফাইটার মাছ নামেই বেশি পরিচিত।
সাধারণত মাসের শুরুর দিকে বিদেশ থেকে চালান আসে, কাজেই আমি সাজেস্ট করবো মাসের শুরুর দিকে কাঁটাবনে ঢু মারুন অথবা ফেসবুকের গ্রুপ গুলোতে নজর রাখুন- জেনে যাবেন কখন চালান আসতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আপনার চয়েজ করার অপশন অনেক বেড়ে যাবে।
এছাড়াও অন্যান্য সৌখিন ব্রিডার বা দেশি ব্রিডিং ফার্ম থেকে সরাসরি কিনতে পারেন, এরকম কয়েকটা ফার্মের লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম।
বেট্টা আমার আমার খুব পছন্দের একটা মাছ। সাধ্যমত চেষ্টা করেছি এই মাছের সব দিক তুলে ধরে আপনাকে প্রিপেয়ার করতে- যেন আপনার ভালবাসার বেট্টা মাছ সবসময় যত্নে থাকে। ভালো থাকবেন, হ্যাপি ফিশকিপিং।
collected from LEARNERS' TANK