20/03/2024
জিনিসপত্রের দাম কেনো বাড়ছে জানতে চান? আসুন একটু পড়াশোনা করি....
মুদ্রাস্ফীতি সম্পর্কে কিছু পড়াশোনা করেছিলাম কয়েক বছর আগে। সেটা নিতান্তই কৌতূহল বশত। বর্তমানে প্রবলভাবে উপলব্ধি করতেছি - মুদ্রাস্ফীতির সাথে খেলাপী ঋণ ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত।
প্রথেমেই বুঝতে হবে মুদ্রাস্ফীতি জিনিস টা আসলে কি? খুব সহজভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।
মুদ্রাস্ফীতিঃ কোন দেশে সর্বোপরি যতটুকু সম্পদ আছে তার মূল্য ওই দেশের বর্তমানের মোট মুদ্রামাণের(টাকা) সমান। মনে করুন, বাংলাদেশে সর্বমোট ১৫ টাকা আছে এবং এই দেশের সম্পদ বলতে সাকুল্যে আছে ৫ টি কমলা। আর কিছুই নেই। যেহেতু দেশের মোট সম্পদের মূল্য মোট মুদ্রামানের সমান, সেহেতু এই ৫ টি কমলার মূল্য ১৫ টাকা। অর্থাৎ, প্রতিটি কমলার মূল্য ৩ টাকা। এখন যদি আরো ৫ টাকা ছাপানো হয়, তাহলে মোট মুদ্রামান হয়ে যাবে ১৫+৫ = ২০ টাকা। কমলা কিন্তু বাড়েনি। তারমানে এখন[নতুন করে ৫ টাকা ছাপানোর পর] ৫ টি কমলার মোট মূল্য হয়ে গেল ২০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি কমলার বর্তমান মূল্য ৪ টাকা।
এই যে সম্পদ না বাড়িয়ে অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর ফলে কমলার দাম ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা হয়ে গেল, এইটাই সহজ ভাষায় "মুদ্রাস্ফীতি"। একই পণ্য আগের থেকে বেশি দামে ক্রয় করা মানেই মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে।
অর্থাৎ, আমরা বলতে পারি "কোন দেশের সম্পদের পরিমাণ না বাড়িয়ে টাকা ছাপালে মুদ্রাস্ফীতি হবে।"
এইবার আসি খেলাপী ঋণের প্রসঙ্গে। সহজ ভাষায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করলে সেই ঋণ কে খেলাপী ঋণ বলা যায়। আবার সেই ১৫ টাকা এবং ৫ কমলায় ফিরে আসা যাক।
মনে করুন, এই ১৫ টাকা থেকে এক ব্যক্তি ৫ টাকা ঋণ নিল। যতক্ষণ পর্যন্ত ঋণের ৫ টাকা দেশের মধ্যেই থাকছে, ততক্ষন দেশের মোট মুদ্রামান ১৫ টাকাই থাকে। মানে প্রতিটি কমলার মূল্য ৩ টাকাই থাকে। অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি এখন পর্যন্ত ঘটেনি।
এইবার ধরুন ওই ব্যক্তি ঋণের ৫ টাকা ডলারে কনভার্ট করে বিদেশে গিয়ে খরচ করে ফেলেছে এবং সে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম। ডলারে কনভার্ট করার মানে হচ্ছে ওই ৫ টাকা এখন আর টাকা নাই। ধরুন ১ ডলার হয়ে গেছে[ধরি, ১ ডলার = ৫ টাকা]। এখন ওই ১ ডলার কিন্তু আর বাংলাদেশে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। যে দেশের মুদ্রা শুধুমাত্র সে দেশেই ব্যবহার করা যায়। মানে ওই ৫ টাকা বাংলাদেশের মধ্যে আর নাই!! অথচ খাতা কলমের হিসাবে বাংলাদেশের মোট টাকার মান এখনো ১৫ ই আছে!!! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আছে ১০ টাকা। ওই খেলাপী ৫ টাকার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবার ৫ টাকা অতিরিক্ত ছাপানো হয়। অর্থাৎ খাতাকলমে মোট মুদ্রামান হয়ে যায় ২০। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ১৫ টাকা থাকে।
এইখানে দুইটা ভয়কংর ঘটনা ঘটেঃ
১)যেহেতু টাকা ছাপানো হয় নতুন করে, সেহেতু মুদ্রাস্ফীতি হবে। অর্থাৎ একই কমলার দাম আগে ছিল ৩ টাকা। এখন হয়ে যাবে ৪ টা।
২)উপরের সমস্যা টাও খুব একটা প্রভাব ফেলত না যদি সত্যি সত্যি দেশে ২০ টাকা থাকত। তাহলে পণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়ত। কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। কারন দেশে তো ২০ টাকা নাই। আছে ১৫ টাকা। ৫ টা গায়েবুল হাওয়া হয়ে গেছে। মানে আমাদের কাছে ১৫ টাকা। কিন্তু পণ্য কিনতে হচ্ছে এমন দামে যেন আমাদের ২০ টাকা আছে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর এর পর মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ১৬৮ কোটি টাকা। এর অর্থ এই হিউজ পরিমাণ টাকা আমাদের দেশে নাই। অথচ আমাদের পণ্য ক্রয়ের সময় এমন দাম দিতে হচ্ছে যেন ওই ১ লক্ষ ১৬৮ কোটি টাকা আমাদের মুদ্রামাণে যুক্ত আছে। কি ভয়ংকর!!! এইসব হিসাবেই গ্যাসের সিলিন্ডার আজ ১৪০০ টাকা, অথচ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সেই ৭০০ টাকা ই আছে।
ভয়ংকর ব্যাপার। আপনাকে টাকা না দিয়ে বলা হচ্ছে টাকা দিয়েছি, আছে তোমার পকেটে, বেশি দাম দিয়ে চাল, ডাল, তেল কিনবা। নাহলে না খেয়ে মরবা।
________©