31/10/2024
কবুতরের খাবার মিক্স এবং আমার পছন্দ নিয়ে কিছু কথা।
কবুতরের খাবার উপাদানগুলোকে আমরা মুলত প্রধান তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।
(১) #কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার:
#কার্বোহাইড্রেট হচ্ছে কবুতরের আসল চালিকা শক্তি বা পেট্রোল।
অন্যান্য প্রানী এবং পাখিদের মতোই কার্বোহাইড্রেট কবুতরের মূল জ্বালানীর সরবরাহকারী। এটা দ্রুত ব্লাড সুগার সরবরাহ করে কবুতরকে উড়তে সাহায্য করে।
ধান, চাল, গম, ভুট্টা, বাজরা, চিনা, মিলেট, জব, বাকহুইট ইত্যাদি।
(২) #প্রোটিন জাতীয় খাবার:
#প্রোটিন দেহ গঠনের মুল উপাদান। শক্তিশালী দেহ এবং ডানা গঠনে এর কোন বিকল্প নেই।
ওড়ার ক্ষেত্রে কবুতরের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের জ্বালানী হিসেবে কাজ করে।
থর বা ব্রীডিং এর কবুতরের জন্য প্রোটিনের গুরুত্ব অপরিসীম। কবুতরের বাচ্চাদেরকে বাবা-মা যে পিজন মিল্ক খাওয়ায় তাতে প্রায় ৬০% প্রোটিন থাকে।
ডাবলি, ছোলা, মুশুরি, মুগ, রেজা, খেশারি, ফেলন, মটর, কালী, এংকর, ইত্যাদি।
(৩) #ফ্যাট/তেল জাতীয় খাবার:
#ফ্যাট ঠান্ডার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য কবুতরের মূল হাতিয়ার আর লম্বা সময় ওড়ার জন্য ৩য় পর্যায়ের জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ব্রীডিং এর কবুতরের জন্য ফ্যাট একটি গুরুত্বপূর্ন খাবার। পিজিন মিল্কে প্রায় ৩৬% ফ্যাট থাকে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে ১ ঘন্টা ওড়ার পর কবুতরের ব্লাড সুগার, যা সে কার্বোহাইড্রেট থেকে সংগ্রহ করে, শেষ হয়ে যায়। এর পর সে উড়ার জন্য দেহে জমা থাকা ফ্যাট ভেঙ্গে শক্তি সংগ্রহ করে। দেহে জমা ফ্যাট যখন নিঃশেষ হয়ে যায় তখন সে দেহের কোষ ভেঙ্গে ওড়ার শক্তি সংগ্রহ করে। দেহ কোষ ভাঙ্গা শেষ হয়ে গেলে কবুতরের জ্বালানী শেষ। এরপর কবুতর আর উরতে পারবে না, তাকে বিশ্রাম।নিয়ে পুনরায় জ্বালানী সংগ্রহের জন্য আকাশ ছেড়ে নেমে আসতে হবে।
সয়াবিন, হেম্প সীড, সরিষা, কুসুম ফুলের বীজ, তীসি, সূর্যমুখীর বীজ, তিল, কালিজিরা, বাদাম ইত্যাদি।
👉 কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং তেলবীজ এই তিন ধরনের খাবার থেকে অন্তত দুটি করে আইটেম মিশিয়ে খাবার মিক্স তৈরী করে নিলে ইনশা আল্লাহ কবুতর ভালো থাকবে। আইটেম যত বেশী হবে কবুতর তত বেশী পছন্দ করবে, কবুতরের দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য হবে দারুন উপকারী।
>> #পোল্ট্রি ফীড:
পোল্ট্রি ফীড কবুতরের জন্য একটি আদর্শ খাবার হতে পারে। বিশেষ করে খাচায় বন্দী ব্রীডিং এর কবুতরের জন্য এর থেকে ব্যালেন্সড খাবার আমাদের দেশে পাওয়া মুশকিল। অবশ্য খাবার এর উপাদান এবং এদের খাদ্যমান সম্পর্কে খুব গভীর ধারনা থাকলে অবশ্যই এর থেকেও ভালো মানের খাবার মিক্স তৈরি করা সম্ভব।
পোল্ট্রি ফীডের ভেতর যে খাবার দেয়া যাবে তা হলো, " #লেয়ার #গ্রোয়ার" অথবা " #লেয়ার #লেয়ার" পিলেট। মোট খাবারের ১০% থেকে শুরু করে ১০০% পর্যন্ত দেয়া যেতে পারে। অবশ্যই নামী কোম্পানীর ব্রান্ডেড খাবার দিতে হবে।
- কোনমতেই #ব্রয়লার বা #সোনালী ফীড দেয়া যাবে #না।
- বাজারের খোলা খাবার দিবেন না। অবশ্যই #ভালো কোম্পানীর #ব্রান্ডেড ফীড দিবেন।
- ম্যাশ বা ভর্তা বা ভাংগা ফীড দিলে কবুতর শুধু ভুট্টা ভাঙ্গাগুলো খাবে, পাউডার খাবার খাবে না।
- পোল্ট্রি ফীড দুই ধরনের হয় - (১) এনিমেল প্রোটিন নির্ভর
(২) ভেজিটেবল প্রোটিন নির্ভর। অবশ্যই ভেজিটেবল প্রোটিন নির্ভর ফীড দিবেন। প্রতিটি কোম্পানীর ফীডের বস্তার গায়ে এ সম্পর্কিত তথ্য পাবেন।
- পোল্ট্রি ফীড হিট ট্রিটমেন্ট করে জীবানু মুক্ত করা থাকে, তাই খাবার পরিস্কারের বাড়তি ঝামেলার দরকার হয় না।
- এটি দামের দিক থেকে সাশ্রয়ী, সারা বছর প্রায় একই দামে পাওয়া যায়।
ফেন্সি কবুতরের জন্য পারিপার্শিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার মতে এটি একটি আদর্শ খাবার।
তবে এই ফীডের মূল সমস্যা কবুতরের ড্রপিংস। দ্রুত হজম হয়ে যায় বলে কবুতরের খাদ্য গ্রহন বেড়ে যায় আর তার সাথে অবশ্যাম্ভাবী ভাবেই বেড় যায় ড্রপিংস৷ সেই সাথে খারাপ গন্ধ।
👉 নিজস্ব মিক্স বানাবার জন্য নীচের রেশিও ব্যবহার করা যেতে পারে:
(১) গ্রীষ্মকালীন
৬০ - ৭০ % কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার
২৯ - ৩৯% প্রোটিন জাতীয় খাবার
১-২.৫% ফ্যাট জাতীয় খাবার
(২) শীতকালীন:
৬০ - ৭০ % কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার
২০ - ৩০% প্রোটিন জাতীয় খাবার
৫- ১০% ফ্যাট জাতীয় খাবার
(৩) মোল্টিং মিক্স:
মোল্টিং চলাকালীন সময়ে কবুতরের প্রচুর প্রটিনের প্রয়োজন হয়। কারন পালকের ৯০% এর বেশী প্রোটিন দিয়ে গঠিত হয়।
এসময় আমি যত ধরনের ডাল এবং তেল বীজ উপাদান আছে (তিসী বাদে) সবগুলো সমান পরিমান করে নিয়ে আলাদা একটা মিক্স বানাই। সবগুলো তেলবীজ যে পরিমান হয় সেই পরিমান তিসী মিক্সে মিশাই।
এরপর আমার স্বাভাবিক খাবার মিক্সের সাথে মোল্টিংমিক্স ১০% হারে যোগ করে দেই। অর্থাৎ ১ কেজি স্বাভাবিক মিক্সে ১০০ গ্রাম মোল্টিং মিক্স মিশিয়ে দেই।
** গরমে কোন তেল জাতীয় খাবার কম দেয়া ভালো। তবে থর বা ব্রীডিং এর কবুতরের ক্ষেত্রে দেয়া যেতে পারে। খাবারে ওমেগা রেশিও ধরে রাখার জন্য তীসি অবশ্যই থাকা প্রয়োজিন।
** সয়াবীন এবং হেম্পসীড এ প্রোটিন এবং ফ্যাট দুটোই বেশী মাত্রায় আছে।
👉 খাবার সবসময় ঝেড়ে, রোদে শুকিয়ে নেই। কখোনই খাবার পানি দিয়ে #ধুই_না। প্রয়োজন হলে চুলায় হাড়ীতে খাবার গরম করে নেই।
👉 #ফুটানো পানি দেবার চেষ্টা করি। ফুটাতে না পারলে এসিডিফাইয়ার মিশ্রিত পানি দেই৷
👉 #প্রতিদিন গ্রিট দেয়া আমার খুব পছন্দ, প্রয়োজনে গ্রিটে ক্যালশিয়ামের পরিমান কমাবার ব্যবস্থা করবেন।
👉 খাবারে #ভুট্টা_ভাঙ্গা এড়িয়ে চলি। ব্রীডিং মিক্সে দিলেও চুলাতে অবশ্যই গরম করে নেই। এটা সাল্মোনেলা সহ বেশীর ভাগ ব্যাক্টেরিয়াল রোগের একটি প্রধান উৎস।
👉 সয়াবীন এবং ভুট্টা নির্ভর খাবার মিক্সের খারাপ প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য আলাদা নিউট্রিশন বা টক্সিন কোন্ট্রোল সাপ্লিমেন্ট, ফুড কনভার্শন রেশিও (FCR) বাড়াবে এবং কবুতরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
#যেদিকে_খেয়াল_রাখা_দরকারঃ
খাবার মিক্স করার সময়ে খেয়াল রাখতে হবে যে, মিক্সে কার্বোহাইড্রেট বেশী হলে #গ্যাস হবে, প্রোটিন বেশী হলে ড্রপিংস #নরম হবে, ফ্যাট বেশী হলে #স্থুলতা দেখা দিবে।