11/10/2020
যে প্রবলেমটা আমরা সব থেকে বেশি ফেস করি ছোট বড় সকল পাখালরাই সেটা হলো হিট স্ট্রোক
#হিট_স্ট্রোক সম্পর্কে সবার কিছুটা ধারণা নেওয়া খুবই জরুরী। একটু কষ্ট করে পড়ে নিবেন 👇👇👇👇
#হিট_স্ট্রোক_কেনো_হয় :
পাখির ত্বকে বা চামড়ায় কোন ছিদ্র না থাকার কারণে অতিরিক্ত তাপ বাইরে আসতে পারে না। ফলে অতিরিক্ত তাপ সহ্য করা এদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে পাখির শরীরে পানি এবং অক্সিজেন দুটোরই অভাব দেখা দেয়, তাই এসময় আমরা পাখিকে ঘন ঘন শ্বাস নিতে দেখি । এই পানি এবং অক্সিজেনের অপ্রতুলতার কারণে পাখির মস্তিষ্ক থেকে রক্ত শরীরের অন্যান্য অংশে প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে মস্তিষ্কে রক্তের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয় এবং পাখি স্ট্রোক করে। অন্যান্য অঙ্গে রক্ত না পৌঁছানোর কারণে পাখি এ সময় ওড়ার বা দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে।
#লক্ষণ :
সর্বপ্রথম লক্ষণ হলো পাখির হাঁপানো। তবে তার মানে এই না যে পাখি ঠোঁট ফাঁক করা মানেই সে স্ট্রোক করবে ! হাঁপানোর ভঙ্গিটা হবে খুবই দ্রুত এবং জোরে জোরে। অনেক সময় পাখির মুখ থেকে বমির মত কিছু বের হয়ে আসতেও দেখা যায়। শেষদিকে যেয়ে পাখির হাঁপানো আরো দ্রুততর হবে এবং কাছে গিয়ে অনেক জোরে শব্দ করলেও সে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। শুধু চোখ বন্ধ করে হাপাতে থাকবে এবং যেমনটা আগে বললাম, রক্তের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শরীরের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রন থাকবে না। বসার লাঠি থেকে নিচে পড়ে যাবে এবং উল্টাপাল্টা কয়েকটা ডিগবাজি দিয়েই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে । :-( :-(
#প্রতিরোধ :
হিট স্ট্রোক জিনিসটা অনেকটা ভূমিকম্পের মত। মুহুর্তের মধ্যে সব ধ্বংস করে দেয় ঠিকই, কিন্ত প্রথম থেকে অল্প কিছু নিয়ম মেনে চললে এটি এড়ানো সম্ভব।
গরমের শুরুতেই অনেকবার বলা হয়েছে তৈলাক্ত বীজ ও এগফুড জাতীয় খাবার একদমই কমিয়ে দিন। কিন্ত দূর্ভাগ্যবশত, কিছু লোক সবাইকে বলে বেড়াচ্ছিল যে, "আমি প্রতিদিনই এগফুড দিই, কেজি কেজি তৈলাক্ত বীজও দিই, আমার পাখির কিছুই হয় না। অথচ একটু গরম পড়ার সাথে সাথেই তাদের একটার পর একটা পাখি স্ট্রোক করছে, সেই সাথে যারা তাদের সাজেসন ফলো করেছিল তাদেরও। বিষয়টা হচ্ছে, এগুলো কোনো বিষ না, যে আপনি দিবেন আর পাখি মারা যাবে। এই খাবার গুলোতে প্রচুর ফ্যাট থাকে যা ধীরে পাখির শরীরে জমা হয় এবং এই ফ্যাট যেসব ধমনী দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয় সে সব ধমনীর প্রসস্ততা কমিয়ে দেয়। ফলে অতিরিক্ত গরমে রক্তের সরবরাহ আরো অসম্ভব হয়ে ওঠে। যারা সাইন্সের স্টুডেন্ট তারা সহজে বুঝতে পারবেন বিষয়টি। মানুষের স্ট্রোক বা হার্ট এ্যাটাকের ক্ষেত্রেও এই কারণ টা দায়ী। যাইহোক, ফ্যাটের পাশাপাশি, ডিম হলো একটি প্রাণীজ আমিষ, যা পাখির পক্ষে সহজে হজম করা সম্ভব হয় না এবং গরমের মধ্যে সহজেই বদহজম হয়ে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। আর ডিমটা যদি ফার্মের মুরগীর হয় তাহলে আরো সমস্যা। সুতরাং এগুলো প্রচুর পরিমাণে খাওয়ানোর ফল হাতেনাতে না পেলেও ভবিষ্যতে পস্তানো লাগতে পারে।
তাই হিট স্ট্রোক থেকে পাখিকে রক্ষা করতে হলে আপনার করণীয় -
১। সপ্তাহে ১ দিনের বেশি এগফুড দিবেন না। এগফুড মূলত দেওয়া হয় প্রোটিনের জন্য, সুতরাং আপনি প্রোটিনের অন্যান্য উৎস, যেমন, সজনে পাতা, অঙ্কুরিত বীজ, বুটের ডাল সিদ্ধ, শীমের বিচি এগুলোকে বেছে নিন। এগুলো উদ্ভিজ্জ আমিষ, পাখির জন্য সহজপাচ্য। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন দিতে পারলে এগফুডের কোনো প্রয়োজন নেই।
২। ৫ কেজি সীডমিক্সের জন্য তৈলাক্ত বীজ, বিশেষ করে সূর্যমুখীর বীজ ২৫০ গ্রামের বেশি রাখবেন না।
৩। পাখিকে প্রতিদিন সকাল ১০-১১ টার দিকে গোসলের পানি দিন। নিজে থেকে না করলে স্প্রে করুন। খুব গরমের সময় দিনে ২ বারও করতে পারেন। আশেপাশের দেয়ালেও স্প্রে করে দিতে পারেন যাতে চারপাশ টা ঠান্ডা থাকে।
৪। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর ওপরে উঠলেই ফ্যানের ব্যাবস্থা করা উচিৎ। সাদা রং এর চারকোনা (এক্সাসটেড) ফ্যানগুলো সবচেয়ে ভাল। নাহলে ছোট টেবিল ফ্যানও দেয়া যেতে পারে। ফ্যানটিকে জানালার সামনে সেট করতে হবে। সিলিং ফ্যান দিয়ে তেমন একটা লাভ হয় না, পাশাপাশি প্রচুর খাবারের খোসা, ধূলাবালি ওড়ে।
৫। তাপমাত্রা আরও বেড়ে গেলে এবং পাখি বেশি হলে একটি পানিভর্তি বড় পাত্র ফ্যানের সামনে রাখতে পারেন, যাতে বাতাসটা পানিতে বাঁধা পায়।
৬। পাখিকে নিয়মিত ঘৃতকুমারীর দ্রবণ, ডাবের পানি এগুলো খেতে দিন। ঘৃতকুমারি সরাসরি কামড়ানোর জন্যও দিতে পারেন খাঁচায়।
৭। প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি এবং ফলমূল খেতে দিবেন। প্রতিদিন অন্তত একটা শাক বা সবজি বা ফল থাকবে। দেওয়ার আগে লবন মিশ্রিত পানিতে ডলে ডলে ধুয়ে তারপর দিবেন।
৮। কোনোমতেই গরমকালে পাখিকে ব্রিডে দিবেন না। কারণ গরমের মধ্যে এত স্ট্রেস নেওয়া পাখির পক্ষে সম্ভব হয় না এবং সহজেই স্ট্রোক করে।
#প্রতিকার :
পাখি হাঁপানো শুরু করলেই ফ্যান চালিয়ে দিবেন এবং হালকা স্প্রে করে দিবেন। ডাবের পানি খেতে দিবেন। তারপরও যদি জোরে জোরে হাঁপায় তাহলে পাখিটার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। জোর করে পানি খাওয়াতে যাবেন না। নিজে থেকে যদি না খায়, ড্রপার দিয়ে কয়েকফোটা ডাবের পানি ঠোঁটের কোণায় দিন, যাতে ভিতরে চলে যায়। যখন দেখবেন পাখিটা বাইরের কোনো শব্দে আর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না, ঠিকমত ব্যালান্স রেখে দাঁড়াতে পারছে না বা মাটিতে পড়ে গেছে, সাথে সাথে বের করে পানিভর্তি একটা ছোট পাত্রে ওকে বসান। পানিটা হালকা ঠান্ডা হলে ভাল হয়। পাখির পিঠে পানির ছিটা দিয়ে হাত বুলিয়ে সারা পিঠ ভিজিয়ে দিন। অথবা একটি ভেজা তোয়ালে পাখিটার গায়ে জড়িয়ে ধরুণ। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাখিটা স্বাভাবিক হয়ে উঠলে খাঁচায় ছেড়ে দিন এবং পূর্বে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে যত্ন নিন।
ধন্যবাদ😊