![এফএমডি (Foot and Mouth Disease - FMD) হলো একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা গবাদি পশুর মধ্যে ছোঁয়াচে এবং অত্যন্ত সংক্রমক। এই রোগটি...](https://img4.voofla.com/330/017/597001973300177.jpg)
01/02/2025
এফএমডি (Foot and Mouth Disease - FMD) হলো একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা গবাদি পশুর মধ্যে ছোঁয়াচে এবং অত্যন্ত সংক্রমক। এই রোগটি মূলত গরু, ছাগল, ভেড়া, শূকর এবং অন্যান্য গবাদি পশুর পা, মুখ ও অন্যান্য অঙ্গের ক্ষত সৃষ্টি করে। এটি পশুর উৎপাদন ক্ষমতা এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এফএমডির কারণ:
এফএমডি একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়, যার নাম অ্যাকিউট প্যাথোজেনিক কক্সো ভাইরাস (Aphtovirus)। এটি প্রধানত গবাদি পশুর শরীরের তরল, যেমন লালা, মূত্র, ফিক্স, এবং অন্যান্য শরীরের তরল মাধ্যমে ছড়ায়।
লক্ষণসমূহ:
এফএমডির লক্ষণগুলো গবাদি পশুর মধ্যে দ্রুত প্রভাব ফেলতে পারে। এর প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
1. মুখে ক্ষত বা আলসার: পশুর মুখ, ঠোঁট, জিভ, গাল, এবং গলার ভিতরে ক্ষত বা স্ফীত হয়ে যায়, যা খাবার খেতে অসুবিধা সৃষ্টি করে।
2. পায়ে ফোসকা বা ক্ষত: পশুর পায়ের পাতায় ফোসকা সৃষ্টি হয়, যার ফলে হাঁটতে অসুবিধা হতে পারে।
3. জ্বর: আক্রান্ত পশুর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় (১০৪-১০৬°F)।
4. অস্বাভাবিক আচরণ: পশু অস্বাভাবিকভাবে দুর্বল, নীরব এবং খাওয়ার অরুচি দেখাতে পারে।
5. লালা ঝরা: পশুর মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা ঝরতে পারে।
6. পেটে ব্যথা: খাবার খাওয়ার সময়ে পেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে, এবং পশু হাবাচ্চি করতে পারে।
রোগের বিস্তার:
এফএমডি অত্যন্ত সংক্রমক এবং এর বিস্তার অনেক দ্রুত হতে পারে। সাধারণত এটি নিম্নলিখিত উপায়ে ছড়ায়:
পশুর শরীরের তরল দ্বারা: আক্রান্ত পশুর লালা, মূত্র, মাংস বা অন্যান্য শারীরিক তরল থেকে সুস্থ পশুর শরীরে ছড়িয়ে যায়।
দূরত্বের মাধ্যমে: ফ্লাই, মশা, বা অন্যান্য কীটপতঙ্গের মাধ্যমে এই ভাইরাসটি পশুর মধ্যে ছড়াতে পারে।
মানুষের মাধ্যমে: আক্রান্ত পশুর দ্বারা সংক্রামিত পশুর কাছে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বা সংক্রামিত পশুর পরিবেশে কাজ করা মানুষের মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে।
এফএমডির প্রতিকার:
এফএমডি একটি মারাত্মক রোগ হলেও সঠিক প্রতিকার এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা নিলে এই রোগ থেকে গবাদি পশুদের রক্ষা করা সম্ভব। এর জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচে দেওয়া হলো:
1. ভ্যাকসিনেশন: এফএমডির সবচেয়ে কার্যকর প্রতিকার হলো ভ্যাকসিন। গবাদি পশুর জন্য নিয়মিত এফএমডি ভ্যাকসিন প্রদান করা উচিত, যা তাদের শরীরে রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
2. আক্রান্ত পশু পৃথক করা: যদি কোনো পশু এফএমডিতে আক্রান্ত হয়, তা হলে তাকে দ্রুত সুস্থ পশুদের থেকে আলাদা করতে হবে এবং তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
3. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা: পশুদের রাখার স্থান নিয়মিত পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পশুদের ব্যবহৃত উপকরণ (যেমন খাদ্য, পানির ব্যবস্থা, এবং শয্যা) পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি।
4. কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ: মশা, মাছি এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গের মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে, তাই এগুলোর নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন।
5. প্রাথমিক চিকিৎসা: আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা করতে হবে যাতে এটি সংক্রমণের উৎস না হয়ে দাঁড়ায় এবং অন্যান্য পশুদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে। ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা ও সহায়ক ওষুধ প্রদান করতে হবে।
এফএমডি প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা:
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল) এফএমডির প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করতে নিয়মিত ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তারা আক্রান্ত এলাকার পশুদের পর্যবেক্ষণ করে এবং রোগের বিস্তার রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
এফএমডি একটি মারাত্মক এবং ছোঁয়াচে রোগ, তবে যদি দ্রুত সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যেমন ভ্যাকসিনেশন, আক্রান্ত পশু পৃথক করা, এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, তবে এ রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব। কৃষকদের এবং রাখালদের এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।