16/07/2022
ছা*গল জান্না*তের প্রাণী⁉
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
🔴প্রশ্ন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“তোমারা ছাগ*লের কদর করো এবং তার শরীরের ধুলোমাটি ঝেড়ে দাও। কারণ ছা*গল জান্না*তি প্রাণী।”
এ হাদিসটি কি সহিহ? সহিহ হলে এর ব্যাখ্যা কি?
🔵উত্তর:
হ্যাঁ, এ মর্মে বর্ণিত হাদিসটি সহিহ। নিম্নে এ সংক্রান্ত একাধিক হাদিস, হাদিসের মান, ব্যাখ্যা এবং ছা*গল সংক্রান্ত কিছু ইসলামের কিছু বিধিবিধান সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হল:
আবু হুরায়রা রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
صَلُّوا فِي مَرَاحِ الْغَنَمِ، وَامْسَحُوا بِرُغَامِهَا، فَإِنَّهَا مِنْ دَوَابِّ الْجَنَّةِ»
“তোমারা ছা*গল বাধার স্থানে (ছা*গলের খোয়াড়ে) সালাত আদায় করো এবং তার শরীরের ধুলোমাটি (ও নাকের ময়লা) মুছে দাও। কারণ তা জান্না*তের প্রাণী সমূহের অন্তর্ভুক্ত।”
❑ হাদিসটি উৎস এবং মান:
– ইমাম বাগভী বলেন, হাদিসটি হাসান। [সূত্র: শারহুস সুন্নাহ ১/১৪১]
– শাইখ আলবানি বলেন, হাদিসটি সহিহ। [সূত্র: সহিহুল জামে, হা/ ৩৭৮৯]
– ইমাম বাইহাকী বলেন, এ হাদিসটি মারফু এবং মউকুফ উভয়ভাবেই বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু মাওকুফ (সাহাবির বক্তব্য) হওয়াটাই অধিক বিশুদ্ধ। তবে এটি মারফু হাদিসের হুকুমে। [সূত্র: আস সুনানুল কুবরা ২/৪৪৯]
এ হাদিসের সমার্থবোধক আরও একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
عبدالله بن عمر وأبو هريرةعَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
عليكم بالغَنمِ ، فإنَّها من دوابِّ الجنةِ ، وصَلُّوا في مُراحِها ، وامسحُوا رِغامَها- صحيح الجامع-ا4073
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَكْرِمُوا الْمِعْزَى، وَامْسَحُوا بِرُغَامِهَا، فَإِنَّهَا مِنْ دَوَابِّ الْجَنَّةِ»، وَإِسْنَادُهُ ضَعِيفٌ، لَكِنَّهُ يُقَوِّيهِ هَذَا الْمَوْقُوفُ الصَّحِيحُ
❑ উপরোক্ত হাদিসটির ব্যাখ্যা:
◽১) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য উপকারী বিষয়ে তাদের সমাজ ব্যবস্থা ও অবস্থার আলোকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
◽২) উক্ত হাদিসে ছাগ*ল প্রতিপালন ও ছাগ*লের প্রতি যত্ন নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
◽৩) মুহাদ্দিসগণ বলেন, (هذا إشارةٌ إلى طَهارتِها) ছা*গল বাধার স্থান বা ছা*গলের খোয়াড়ে (ছা*গল যেখানে রাত কাটায়) সালাত আদায় করার দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, উক্ত স্থানটা পবিত্র। সুতরাং কেউ যদি সেখানে দরকার বোধে সালাত আদায় করে তাহলে তার সালাত সহিহ হবে।
◽৪) জান্না*তে দুনিয়ার পশু-পাখীর নামের অনুরূপ কিছু পশু-পাখী আছে-যেগুলোর প্রকৃত আকার-আকৃতি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।
প্রকৃতপক্ষে জান্না*তে যে সব পশু, পাখি, ফল-মূল ইত্যাদি রয়েছে বলে বিভিন্ন হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে সেগুলো কেবল নামের ক্ষেত্রে মিল আছে। বাস্তবে জান্না*তেরগুলো যে কত সুন্দর, সুস্বাদু ও মূল্যবান তা মানুষের কল্পনা করা সম্ভব নয়।
❑ ‘ছা*গল জান্না*তি প্রাণী’ এ কথার অর্থ কি?
◉ মুনাবী (মুহাম্মদ আব্দুর রঊফ আল মুনাবী, জন্ম: ৯৫১ মৃত্যু: ১০৩১-মিসর) তাইসির গ্রন্থে বলেন,
(الشَّاة من دَوَاب الْجنَّة) أَي الْجنَّة فِيهَا أشياه. وأصل هَذِه مِنْهَا، لَا أَنَّهَا تصير بعد الْموقف إِلَيْهَا؛ لِأَنَّهَا تصير تُرَابا؛ كَمَا فِي الخبر. انتهى.”
“ছা*গল জান্না*তের প্রাণী” এ হাদিসের অর্থ হল, জান্না*তে ছা*গল আছে আর দুনিয়ার ছাগ*লের মূল হল সেগুলো। তার অর্থ এই নয় যে, হাশরের পর এ সব ছা*গল জান্না*তে যাবে। কারণ হাশরের ময়দানে সেগুলো মাটিতে পরিণত হবে যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।”
◉ “ছা*গল জান্না*তের প্রাণী” এ কথার ব্যাখ্যায় কানাযুঈ (القنازعي) শরহুল মুয়াত্তায় বলেন,
(فإنَّهَا مِن دَوَابِّ الجَنَّةِ)، يَعْنِي: هِيَ مِنْ طَعَامِ أَهْلِ الجَنَّةِ، قالَ اللهُ -جَلَّ وَعَزَّ- في أَهْلِ الجَنَّةِ: {وَأَمْدَدْنَاهُمْ بِفَاكِهَةٍ وَلَحْمٍ مِمَّا يَشْتَهُونَ} [الطور: 22] يَعْنِي بهِ: لَحْمَ الضَّأنِ. انتهى
“ছা*গল জান্না*তি প্রাণী’ অর্থ হল, তা জান্না*তবাসীদের খাবার। যেমন আল্লাহ বলেন, “আর আমারা তাদেরকে বাড়িয়ে দেব ফলমূল এবং গোশত যা তারা কামনা করবে।” (সূরা তুর: ২২) উদ্দেশ্য হল, ছা*গল বা ভেড়া*র গোশত।
❑ ইসলামে ছা*গল সংক্রান্ত কিছু বিধিবিধান:
কুরআন-হাদিস ছা*গল সংক্রান্ত অনেক আলোচনা এসেছে এবং এর সাথে বেশ কিছু বিধিবিধান জড়িত রয়েছে। যেমন:
◾১. কুরআনে বর্ণিত হয়েছে যে, মুসা আলাইহিস সালাম ছা*গল চরিয়েছেন। (সূরা ত্ব-হা ১৭ ও ১৮)
◾২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাল্যকালে ছা*গল চরিয়েছেন। (সহিহ বুখারি)
◾৩. বরং সকল নবী-রাসূল ছা*গল চরিয়েছেন।
روى البخاري في صحيحه من حديث أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «مَا بَعَثَ اللَّهُ نَبِيًّا إِلَّا رَعَى الغَنَمَ»، فَقَالَ أَصْحَابُهُ: وَأَنْتَ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ، كُنْتُ أَرْعَاهَا عَلَى قَرَارِيطَ لِأَهْلِ مَكَّةَ»
◾৪. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, السَّكِينَةُ فِي أَهْلِ الغَنَمِ “ছা*গল ওয়ালাদের মধ্যে প্রশান্তি রয়েছে।” (বুখারি ও মুসলিম)
◾৫. ইসলামে ছা*গল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি দ্বারা আকিকা দেয়া সুন্নত; উট, গরু ইত্যাদি দ্বারা নয়।
◾৬. যে সব গবাদি পশু দ্বারা কুরবানি দেয়া জায়েজ সেগুলো হল, উট, ছা*গল, ভেড়া ও দুম্বা (নর ও মাদী)।
◾৭. যে সব গবাদি পশু দ্বারা হাজিদের জন্য হাদি (হজ্জের কুর*বানি) দেয়া জায়েজ সেগুলো হল, উট, ছা*গল, ভেড়া ও দুম্বা (নর ও মাদী)।
◾৮. অধিক বিশুদ্ধ মতে, ওজু থাকা অবস্থায় ছা*গলের গোস্ত খেলে ওজু ভঙ্গ হয় না কিন্তু উটের গোশত খেলে ওজু ভঙ্গ হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম) যদিও এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে।
◾৯. ছাগ*লের খোয়াড়ে সালাত আদায় করা জায়েজ (পূর্বোল্লিখিত হাদিস) পক্ষান্তরে উটের খোয়াড়ে সালাত আদায় করতে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে।
◾১০. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াকে একটা মৃ*ত কানকাটা ছা*গল ছানার সাথে তুলনা করেছেন।
◾১১. এ ছাড়াও ছা*গলের গোশত খাওয়া, দুধ পান করা, ছা*গলের চামড়া পরিশোধন (ট্যানারি) করে কাজে লাগানো, ছা*গলের যাকাত প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে অনেক হাদিস রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জান্না*তবাসী হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।