13/03/2022
সুবিধাবাদী ইকোলাই ২ ( শেষ পর্ব )
E.Coli বা কলিব্যাসিলোসিস (Colibacillosis) কবুতরের গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন। সব বয়সের কবুতর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। E.coli সহ কবুতরের অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন প্রতিকারে কবুতরকে প্রতি সপ্তাহে ১ দিন একবেলা এপলসিডার ভিনেগার কিংবা যেকোন একটি এসিডিফায়ার প্রদান করা এবং এরপর ২ দিন, একবেলা যেকোন প্রোবায়টিকস অথবা প্রিবায়োটিকস কিংবা সিমবায়োটিকস প্রদান করা। কেউ চাইলে মাসে টানা ৫ দিন করে এসিডিফায়ার এবং প্রোবায়টিকস বা প্রিবায়োটিকস কিংবা সিমবায়োটিকস দিতে পারেন। তবে এসিডিফায়ার এবং প্রোবায়টিকস বা প্রিবায়োটিকস কিংবা সিমবায়োটিকস কখনোই একত্রে দিবেন না আর এসিডিফায়ার অবশ্যই আগে দিবেন তারপর প্রোবায়টিকস বা প্রিবায়োটিকস কিংবা সিমবায়োটিকস । এন্টিবায়োটিকস বা যেকোন মেডিসিন প্রয়োগের পরে টানা ৫ দিন প্রোবায়টিকস বা প্রিবায়োটিকস কিংবা সিমবায়োটিকস প্রদান করা। নিয়মিত ভিটামিন বি, ডি, সি এবং জিংক, ক্যালসিয়ামের এবং এইনজাইমের সরবরাহ নিশ্চিত করা। প্রতি ২ মাস পর পর কৃমির কোর্স করানো। সারা বছর কবুতরকে খাচাঁয় আটকে না রেখে ৩ বার ডিম বাচ্চা করার পরেই ফ্লাইং জোনে কিছুদিন রেস্টে রাখা, লফটে বায়ুচলাচল পর্যাপ্ত রাখা, কবুতরকে নিয়মিত গোসল করানো এবং রোদে রাখা , ধূলা বালি এবং পিজিয়ন ডাস্ট যাতে লফটে জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা , খাবার, পানির পট, ডিমের সরা এবং ট্রে নিয়মিত জীবানুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করা। ফাংগাস ও ধূলাবালি মুক্ত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা , নতুন কবুতর আনলে ১৪ দিন লফটের বাইরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা, ইদুঁর, তেলাপোকা, টিকটিকি কিংবা অন্যান্য বুনো পাখি যাতে লফটে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা বায়োসিকিওরিটি ১০০% মেনে চলার দ্বারা এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব । এর পরে ও যদি কোন কারনে কবুতর আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে সাথে সাথে আক্রান্ত কবুতরকে লফট থেকে আলাদা করতে হবে এবং সম্পূর্ন লফট ভাইরোসিড লিটারে ৩ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করে জীবানুমুক্ত করতে হবে এবং সুস্থ কবুতরকে অবশ্যই টানা ৭ দিন এসিডিফায়ার এবং তারপর ৭ দিন প্রোবায়টিকস বা প্রিবায়োটিকস বা সিমবায়োটিকস এই তিনটির যেকোন একটি দিতে হবে। উন্নত বিশ্বে অনেক ফেন্সিয়াররা E.coli প্রতিরোধে ভ্যাক্সিন ব্যাবহার করেন কিন্তু আমাদের দেশে যতদূর জানি E.coli এর কোন ভ্যাক্সিন নেই।
E. coli আক্রান্ত কবুতরের রোগের সিম্পটম অনুযায়ী বিবেচনা করে এন্টিবায়োটিক সিলেক্ট করে প্রয়োগ করতে হবে। সবুজ ডায়রিয়া সাথে টক্সিসিটির কারনে বমি, বদহজম হলে এক হিসাব আবার যদি শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমন, হা করে শ্বাস নেয়া, চোখে পানি, সর্দি, জয়েন্ট বয়েল, হঠাৎ করে খোঁড়ায় , ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যায় তাহলে অন্যহিসাব। যেহেতু প্যাথোলজিক্যাল টেষ্ট ব্যাতীত ১০০% কনফার্ম হওয়া সম্ভব নয় সেহেতু উপরের সিম্পটম গুলি প্রকাশ পেলেই E. coli ভেবে মুখস্ত মেডিসিন প্রয়োগ করা শুরু না করে অভিজ্ঞ ভেট কিংবা অভিজ্ঞ ফেন্সিয়ারের সাহায্যে নিন। উনারা আসলেই কি E.coli ইনফেকশন নাকি অন্য কোন ইনফেকশন এটা শিওর হওয়ার ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন এবং আপনার কবুতরের অবস্থা বিবেচনা করে সঠিক গ্রুপের এন্টিবায়োটিক এবং মেডিসিন সাজের্ষ্ট করতে পারবেন। সাধারনত এমক্সিসিলিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ফ্লোরফেনিকল, লিভোফ্লুক্সাসিন, এনরোফ্লুক্সাসিন, সালফোনামাইড ইত্যাদি এন্টিবায়োটিক E. coli কেসে ভাল কাজ করে তবে অবশ্যই ভাল রেজাল্ট পেতে এগুলোর সাথে কবুতরের অবস্থা বিবেচনা করে অন্যান্য মেডিসিন, টক্সিন বাইন্ডার, এনজাইম, ইমিউন বুস্টার, লিভারটনিক যোগ করতে হয়।
ভয়ের কথা হলো আমরা জানি সঠিক নিয়মে কোন এন্টিবায়োটিকস যদি কোন প্রানীকে প্রয়োগ না করা হয় তাহলে তার দেহে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্রেন্স গ্রো হবে যার কারনে পরবর্তীতে রোগাক্রান্ত হলে সেই গ্রুপের এন্টিবায়োটিকস আর কাজ করবে না।
যখন আমরা E. coli নির্ণয় করি তখন এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা শুধুমাত্র উপসর্গের উপর নির্ভর করে ডিসিশন নিতে পারি না , কারণ অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া, বিশেষ করে সালমোনেলা, মাইক্রোপ্লাজমোসিস, সাওয়ার ক্রপ একই রকম উপসর্গ সৃষ্টি করে। যদি আমরা সন্দেহ করি কোন কবুতর E. coli আক্রান্ত, তখন আমরা সংক্রামিত কবুতরের বিষ্ঠা এবং মৃতদেহকে যদি ল্যাবটেষ্ট করাতে পারি তাহলে E.coli সনাক্তকরা সহজ। যদি টেষ্ট করার পর E.coli পাওয়া যায় তাহলে কোন অ্যান্টিবায়োটিক টেস্টে পাওয়া সেরোটাইপে কাজ করবে তা নির্ধারণ করতে ল্যাবে সেনসিটিভিটি টেষ্ট করা হয়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ E. coli ব্যাকটেরিয়া কে , কোন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক মারবে এটা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয় ৷ E.coli ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত রেজিস্ট্রেন্স গ্রো করে। অন্য কোন ব্যাকটেরিয়া E. coli এর মত এত দ্রুত এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্রেন্স গ্রো করতে পারে কিনা তা আমার জানা নেই। তাই আপনার কখনই অনুমান করা উচিত নয় যে এক বার যা কাজ করেছে তা পরের বার কাজ করবে ৷ তবে এ জাতীয় প্যাথোলজিক্যাল টেষ্ট করাটা বর্তমানে আমাদের দেশের সাধারন শৌখিন পালকদের জন্য অসম্ভব তাই যারা সৌখিন পালক কিংবা ক্ষুদ্র খামারী তাদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে E.coli প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া। তবে যারা ইমর্পোটার, ট্রেডার, বড় ব্রিডার কিংবা শৌখিন পালক হলেও আর্থিক স্বচ্ছলতা আছে। আমি মনে করি যে সমস্যাগুলির কথা আলোচনা করা হলো সেগুলো যদি আপনার লফটে দীর্ঘদিন যাবত চলতে থাকে তবে আপনি অবশ্যই আপনার লফটের কবুতরের বিষ্ঠা বা ব্লাড স্যাম্পল কিংবা মৃতদেহ প্যাথোলজিক্যাল টেষ্ট করান কারন আনুৃমানিক ভাবে একটা সমস্যাকে সমাধান করা চেষ্টা করার চেয়ে শিওর হয়ে সমাধান করার চেষ্টা করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে আমি মনে করি ।।
© Fahad Ahammed