03/09/2021
খাবারের দাম যেহেতু বেশি তাই কমদামে হোক পুষ্টিকর খাবার।
শুরুতে খাদ্য উপাদান
খাদ্য অনেকগুলো রাসায়নিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এ রাসায়নিক উপাদানগুলোকে খাদ্য উপাদান বলা হয়। এভাবে উপাদান অনুযায়ী খাদ্যবস্তুকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যথা-
১. আমিষ বা প্রোটিন - ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন ও দেহ গঠন করে।
২.কার্বোহাইডেট, শর্করা বা শ্বেতসার - শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
৩. স্নেহ বা চর্বি - তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে।
এছাড়া তিন প্রকার অন্যান্য উপাদান বিশেষ প্রয়োজন। যথা-
১. খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন - রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়, বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উদ্দীপনা যোগায়।
২. খনিজ লবণ - বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।
৩. পানি - দেহে পানির সমতা রক্ষা করে, কোষের গুণাবলি নিয়ন্ত্রণ।
আপনার কবুতরের জন্য দামী খাবার নয় দরকার পুষ্টিকর খাবার। যেহেতু কবুতরের খাবারের দাম বেশি তাই কম দামে পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য যে খাবার গুলি দেয়া যেতে পারে। কবুতরের সুস্থতার জন্য যে তিনটা জিনিস দরকার তা হলো
কার্বোহাইড্রেট বা শক্তি বা উড়ার জন্য চালিকা জাতীয় খাবার: বাজরা, চিনা, গম, ধান, চাল, ভুট্টা, জব, বাকহুইট
ইত্যাদি যেহেতু কমদামে পুষ্টি উপাদান দরকার তাই ভুট্টা, গম, ধান বেছে নিতে পারেন।
আমিষ বা প্রোটিন শরীর গঠনের জন্য : ডাবলি, মুশারী, হেলেন, ছোলা, খেসারি, মটর, হেম্পসীড, কালি মটর
যেহেতু কমদামে পুষ্টি দরকার তাই ডাবলি, খেশারি বেচে নিতে পারেন৷
তেল জাতীয় খাবার বা শরীল গরম রাখতে, শক্তি উৎপাদন করতে ঠান্ডা থেকে লাগবের জন্য : সূর্যমুখী ফুলের বীজ, সরিষা, কুসুম বীজ, বাদাম, তিসি, তিল, কালোজিরা।
কমদামের তেলবীজ সরিষা, তিসি, বেচে নিতে পারেন।
বাচ্চা উৎপাদন ও পালক পাল্টানোর সময়ে আমিষ বা প্রোটিং এর চাহিদা বেশি থাকে। শীতে তেল জাতীয় খাবারের চাহিদা বেশি। আমিষের চাহিদা কম।
আমি ব্রিডিং কবুতরকে (শতকরা % অনুপাতে)
খাবারের জন্য ৫৫% কার্বোহাইড্রেট ৪০% প্রোটিন ৫% তেল জাতীয়।
পালক পাল্টানোর এর সময় প্রোটিং জাতীয় খাবারটা বেশি দেই। (৫০%+৪৫%+৫%)
শীতে প্রোটিং কমিয়ে তেল জাতীয় খাবারটা বাড়িয়ে দেই। (৫০%+৩০%+২০%)
গরমে তেল জাতীয় খাবারটা একেবারে কমিয়ে দেই বা দেই না। দিলে ২% বা ১ %
দাম বেশি এমন খাবারের বদলে যে খাবার দামে কম কিন্তু খাদ্যগুণ বেশি তা দিতে পারি।
দেখে নেই খাদ্য মানের তালিকায় কমদামের কোন খাবারের খাদ্যমান বেশি
ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টি মান বেশি
ভুট্টা: (শর্করা জাতীয়) বড় দানার আস্ত ভুট্টা কবুতর অভ্যাস করলেই খায় (পকপকর্ন বা ছোটটা না) বড় দানার ভুট্টা দামে কম ভাল মানের তবে বিড্রিং এ ভাঙ্গা দিলে ভাল হয়। তবে ছত্রাক যাতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মোট খাবারে শুধু ক্যালরির জন্য ২৫% দেয়া যেতে পারে প্রতি ১০০ গ্রামে হিসাবে ভুট্টায় আছে
ভুট্টা:
ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে। আমিষে প্রয়োজনীয় এ্যামিনোএসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমানে ভিটামিন এ আছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম ভুট্টায় খাদ্যমান
আমিষ ১২.১ গ্রাম,
শর্করা ৬৯.৪ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম ৪৮ মিলিগ্রাম,
লৌহ ১১.৫ মিলিগ্রাম,
ক্যারোটিন ২৯ মাইক্রোগ্রাম,
ভিটামিন বি-১ ০.৪৯ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন বি-২ ০.২৯ মিলিগ্রাম,
আঁশ ১.৯ গ্রাম,
খনিজ পদার্থ ২.৭ গ্রাম এবং
জলীয় অংশ থাকে ১২.২ গ্রাম
গম: (শর্করা জাতীয়) কমদামের মধ্যে গমের খাদ্য গুন
ক্যালোরি: ৩২৭
কার্বোহাইড্রেট: ৭১
প্রোটিং : ১.৫৪
ফ্যাট: ৪.৭৪
ধান : (শর্করা জাতীয় খাবার) উড়ানো কবুতরের জন্য দিতে পারেন। ব্রিডিং এ না দিলেই ভাল।
ক্যালোরি: ৩৫৮
কার্বোহাইড্রেট: ৭৮
আমিষ: ৯
চাল : (শর্করা জাতীয় খাবার)
ক্যালোরি: ৩৬২
কার্বোহাইড্রেট: ৭৬
আমিষ : ৭.৫
আমিষ বা প্রোটিং জাতীয় খাবার:
ডাবলি: ক্যালোরি: ৩৪১
কার্বোহাইড্রেট: ৬০
আমিষ : ২৫ অর্থাৎ চারটা ডাবলি একটা ডাবলির সমান গোস্ত।
ফাইবার: ২৬
ফ্যাট:১.২
দাম কমের ভালোমানের প্রোটিং যা রেজার বিকল্প হিসাবে উত্তম।
খেসারি:
প্রতি ১০০ গ্রাম খেসারি ডালে রয়েছে -
খাদ্যশক্তি- ৩২৭ ক্যালরি,
আমিষ- ২২.৯ গ্রাম,
চর্বি- ০.৭ গ্রাম,
শর্করা- ৫৫.৭ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ৯০ মিলিগ্রাম,
ফসফরাস- ৩১৭ মিলিগ্রাম,
লোহা- ৬.৩ মিলিগ্রাম।
মসুর ডালে পুষ্টিগুণ (Red Lentil or Masoor dal)
প্রতি ১০০ গ্রাম মসুর ডালে রয়েছে
ক্যালরি ৩৪৩ গ্রাম,
ফ্যাট ১.৫ গ্রাম,
সোডিয়াম ১৭ গ্রাম,
পটাশিয়াম ১৩৯২ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট ৬৩ গ্রাম,
প্রোটিন ২২ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম ১৩ গ্রাম,
ম্যাগনেসিয়াম ৪৫ গ্রাম,
ভিটামিন কমপ্লেক্সে ১০ গ্রাম এবং
ফাইবার ১৫ গ্রাম।
মুগ ডালের পুষ্টিগুণ (Nutritional value of Mung beans)
প্রতি ১০০ গ্রাম মুগডাল থেকে পাওয়া যায়
প্রোটিন ২৪ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট ৬৩ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম ১৩২ গ্রাম,
আয়রণ ৬.৭৪ গ্রাম,
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ২৫ গ্রাম,
ম্যাগনেসিয়াম ১৮৯ গ্রাম।
তেল জাতীয় খাবার
সরিষা
ক্যালোরি: ৩৫৪
কার্বোহাইড্রেট: ৬০
আমিষ : ২৬
খাদ্য মানের পুষ্টির তথ্য সূত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগ, কমিউনিটি নিউটেশন বই ড. আমিনুল হক স্যার।
পোস্টটি জনস্বার্থে করা হয়েছে।