07/04/2020
ঘটনাটি দিলকে নাড়া দেয়!
মাওলানা তারিক জামিল(পাকিস্তানী)।
---------------------------------------------------
আমি পৃথিবীর অনেক গুলো রাষ্ট্রের মধ্যে,
কয়েকটি রাষ্ট্র সফর করেছি, এর মধ্যে
জর্ডান সফরের একটা অংশ তুলে ধরছি।
আমি আর আমার স্ত্রী যখন জর্ডানে পৌঁছে
গেলাম, তখন তাবলীগ জামাতের আমীর
সাহেব, আমাদেরকে তাদের বাসায় নিয়ে
গেলেন।
আমরা দুজনেই ভীষণ অবাক হলাম,
মাত্র দু কক্ষ বিশিষ্ট একটা ঘর, ঘরের মধ্যে
এক পাশে কিছু থালা বাসন, তরকারির
ঝুড়ি, একটা কাঠের উপর জড়ো করা কয়েকটি
কাপড়, আর আরাম করার জন্য একটা মাদুর, ও
দুই খানা ইট।
আমার স্ত্রীকে নিয়ে এক কক্ষে আর আমাকে আরেক কক্ষে নিয়ে গেলেন। উনার মোট ছয়টি মেয়ে, যারা
সবাই পরিপূর্ণ পর্দা করে, আর একটা খুব
ছোট ছেলে বাচ্চা কোলে।
ছেলেটির বয়স যখন একদিন, তখনই তার মা, কালো একটা কাপড় দিয়ে বাচ্চার চোখ বেঁধে দুধ পান
করায়। এখন ওর বয়স এক বছর, ওর যখন দুধ
খাওয়ার নেশা চাপে, তখনই কালো কাপড়
টা মায়ের হাতে তুলে দেয়। বোনদের সাথে
কিতাবের উপর হাত দিয়ে পড়ার চেষ্টা
করে।
আমার স্ত্রীকে খাবার দেওয়ার পর, তিনি
এইসব দৃশ্য দেখে দোয়া না পড়েই খাবার
মুখে দিতে গেলেন। ৪ বছরের পিচ্চি মেয়ে,
আমার স্ত্রীর হাত চেপে ধরলেন, আর
বললেন দোয়া না পড়লে খাবার খেতে
দেবোনা।
এইসব দৃশ্য আমি খুব উপভোগ
করছিলাম আর জুতা পায়ে দিচ্ছিলাম,
পিচ্চি টা দৌঁড়ে এসে বললো, চাচা আপনি
তো বাম পায়ের জুতা আগে পায়ে দিছেন,
এখন খুলে আবার ভাল করে দোয়া পড়ে জুতা
পায়ে দিন।
আমি চিন্তায় বিভোর হয়ে গেলাম, এটা
কেমন মা, যার ৪ বছরের মেয়ে, আমার মতো
মাওলানার ভুল ধরিয়ে দেয়। আমি আমির
সাহেবের সাথে রাস্তায় বের হয়ে একটা
গাড়িতে উঠলাম, ড্রাইভার মাতাল থাকার
কারনে হঠাৎ এ্যাকসিডেন্ট করে গাড়িটি।
এবং আমার চোখের সামনেই আমির সাহেব
ইন্তেকাল করেন।
সবাই মিলে ধরাধরি করে লাশটা নিয়ে
এলাম, উনার স্ত্রী, কন্যা লাশ দেখে
দোয়া পড়লেন, যেখানে আমারই ইচ্ছা
করছে চিৎকার করে কান্না করতে, সেখানে
উনার পরিবারের কারোরই কান্নার
আওয়াজ শুনতে পেলাম না।
আমার স্ত্রী এসে হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে
বললেন, ভাবী ভাইয়ের দাফনের ব্যবস্থা
করতে বলেছে দ্রুত!
আমি সবকিছু এনে দেখি, আমার স্ত্রী
একা একা কান্না করছে, আমাকে দেখে
জড়িয়ে ধরে ভীষণ জোরে-জোরে কান্না
শুরু করে দিলো, আমি তার মুখ চেপে ধরে
আওয়াজ বন্ধ করলাম, বললাম কি হয়েছে?
আমাকে বললো, ওগো আমাকে ক্ষমা করো,
তোমার উপযুক্ত স্ত্রী আজও হতে পারিনি,
ঐ দেখো, ভাইয়ের পরিবারের সবাই
নামাজে দাঁড়িয়ে কান্না করছে, আল্লাহর
কাছে তার মাগফেরাত কামনা করছে।
ওগো এতো ধৈর্যশীলা পরিবার ও কি এখনো
আছে। আমি আমার স্ত্রীকে সান্ত্বনা
দিয়ে বাহিরে এসে, লাশের বাকিটুকু কাজ
সমাধান করলাম।
রাতের বেলায় হঠাৎই ঘুম ভেঙ্গে গেলো
কান্নার শব্দে।
আস্তে-আস্তে উঠে গিয়ে দেখি, ভাবী সাহেবা তার
ছয় মেয়েকে নিয়ে তাহাজ্জুদ সালাতে
কান্না করছে।
কি অবাক করা বিষয় এই ৪
বছরের বাচ্চা মেয়েও মায়ের সাথে সমানে
দোয়া করে যাচ্ছে, মনোযোগ দিয়ে দোয়া
করা শুনতে লাগলাম।
এতো দারুণ দোয়া যে,
শুনতে শুনতে কখন যে, আমার চোখের পানি
দাড়ি ভিজে মাটিতে পড়ছিল, তা নিজেও
জানিনা।
আল্লাহর কাছে বললেন, তার
বিয়ের উপযুক্ত মেয়েকে যেন আল্লাহ দ্রুতই
কোন ব্যবস্থা করে দেন ,,,, আর ও বললেন,
ইয়া আল্লাহ আমাদেরকে উত্তম রিযিক
দান করো।
আমি ফজরের সালাতের পরে একটু ঘুমিয়ে
পড়লাম, ঘুম থেকে উঠে শুনি, শহরের নাম
করা তিন জন হুজুর প্রচুর পরিমাণে
মোহরানা নিয়ে, তার তিন মেয়েকে
বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, উনি রাজি
হওয়ায়, দুপুরে বিয়ে।
আমার খুব কান্না চলে আসলো, উনি কেমন রমনী, যে কিনা রাতের
বেলায় দোয়া করতেই ভোর বেলায় ফল পেয়ে যান!!
আল্লাহ তায়ালা এধরনের পরিবার
আমাদেরকেও দান করুন।
আমিন
সংগৃহীত