06/10/2020
হাই ফ্লাইয়ার কবুতর কি??
ন্যাশনাল পিজিয়ন এসোসিয়েশন বা NPA
এর শর্ত অনুযায়ী কোন কবুতরকে হাই
ফ্লাইয়ার হতে গেলে তাকে উর্ধ্ব আকাশে
কমপক্ষে আড়াই ঘন্টা একটানা উড়তে হবে। শুধু তাই নয় সেই কবুতরের তিন জেনারেশন, অর্থাৎ তার পেরেন্টস,ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনী কেও কমপক্ষে আড়াই ঘন্টা উড়তে হবে। সে যদি এই শর্তাবলি পূরণ করতেপারে,তবেই হাই ফ্লাইয়ার বলে স্বীকৃতি পাবে। এমনিতে কোন কবুতর যদি আড়াই ঘন্টা বা তার চেয়ে অনেক বেশী সময় উড়ে,সে কিন্তু হাই ফ্লাইয়ার ক্যাটাগরিতে পড়বে না!! উদাহরণ স্বরূপ, মাত্র ১৮০ টাকায় কেনা হোসাইন সিদ্দিকি ভাইয়ের একটা চুইনা নর চার ঘন্টার উপর উড়ে। তিনি যখন কবুতর উড়ান-কালদম উড়ে এক সময় নেমে পরে,কিন্তু তখনও চুইনা আকাশে একাই উড়তে থাকে।তাই বলে সে কিন্তু হাই ফ্লাইয়ার নয়।অনেক লো ফ্লাইয়ার কবুতরও আছে,ব্লাড ও স্ট্রেইন ভালো হলে সে অনেক সময় উড়তে পারে। হাই ফ্লাইয়ার বললেই হয়না,কোন কবুতর ভালো উড়লেই হাই ফ্লাইয়ার হয়না। হাই
ফ্লাইয়ার নামে আলাদা জাত আছে।।
যেমন: বুডাপেস্ট হাই ফ্লাইয়ার, সার্বিয়ান হাই ফ্লাইয়ার, পার্সিয়ান হাই ফ্লাইয়ার, টিপলার ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার এই জাত সমূহের অনেক উপজাত রয়েছে। যেমন: টিপলার বা Flying Tippler কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে যা ইংলিশ টিপলার ও পাকিস্তানী টিপলার নামে পরিচিত পাকিস্তানে অনেক ওস্তাদ এই টিপলারকে ডেভেলপ করেছেন। তারা তাদের এলাকার নাম অনুসারে নামকরণ করেছেন যেমন: রামপুরী, ফিরোজপুরী, সারানপুরী, কাশুরী, শিয়ালকটী, গোল্ডেন, থার্টি ফাইভ, ডোভওয়ালা,মতিওয়ালা, টিটলি, টেডি, বেনারস ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে সেরা হাই ফ্লাইয়ার খেতাব রয়েছে টিপলার ব্রিডের।
সেই ১৯০৫ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত
টিপলারের ফ্লাইং রেকর্ড ও রেজাল্ট হলো
২২ ঘন্টা ০৫ মিনিট। এবার আমাদের দেশে আসি। খুলনারসিনিয়র ওস্তাদরা কিছু হাই ফ্লাইয়ার জাত ডেভেলপ করে নতুন জাত বের করেছেন, যা খুলনা হাই ফ্লাইয়ার নামে পরিচিত। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য তাদের ব্রিডের ফ্লাই রেকর্ড ও রেজাল্ট ৯ ঘন্টার উপর। খুলনার জাতসমূহের মধ্যে লাল রঙের একটা জাত খুব জনপ্রিয়। এই ব্রিড গ্রীস্মের গরমেও সমান উড়তে পারে।খুলনার ওস্তাদগন এই জাতসমূহ যুগ যুহ ধরে সংরক্ষন করে আসছে। খুলনার ওস্তাদদের প্রতি বিনীত অনুরোধ তারা যেন NPA র কাছে তাদের
জাতের স্যাম্পল জমা দেয়। NPA অনুমোদন দিলে পৃথিবীতে খুলনার জাত একটি হাই ফ্লাইয়ার ব্রিড হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। সেই সাথে কবুতর সেক্টরে বাংলাদেশ ইতিহাস অর্জন করবে।
কবুতর উড়ানো একটা শৈল্পিক ব্যপার।
কবুতর সেক্টরে এসে নতুনরা বিশেষকরে হাই ফ্লাইয়ার সেক্টরে এসে একটা প্রশ্ন,অভিযোগ, সমস্যার কথা বলে। আমি অমুকের কাছ থেকে বেবী এনেছিলাম এদের পেরেন্টস চার-পাচ ঘন্টা উড়ে,কিন্তু আমার কাছে এক ঘন্টার বেশী উড়ে না। ফেসবুক খুললেই প্রতিদিন ই এমন পোষ্ট সচরাচর চোখে পরে। তাদের প্রশ্নের উত্তর : এটা কৈতরের দোষ না, এটা আপনার দোষ। হাই ফ্লাইয়ার আপনি খাচায় বা দাপড়িতে রাখলেন আর দিনের বেলায় ছেড়ে দিলেন। কৈতর ঘন্টার পর ঘন্টা আকাশে উড়বে। এমনটি আশা করা ভুল। সিনিয়ররা শুনলে হাসবে। হাই ফ্লাইয়ার উড়াতে গেলে আগে আপনার হাতের জোশ দরকার, অভিজ্ঞতা দরকার, আর দরকার আপনার সঠিক লফট ব্যবস্থাপন। আপনার সেটআপ এক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। আপনার সেটআপ, কি খাবার ও কতটা পরিমানে দিবেন,ব্রিডিং ব্যবস্থাপনা,উড়ানোর পদ্ধতি ইত্যাদির সঠিক সমন্বয় হলে,তবেই আপনি ভালো ফ্লাইং পাবেন। এই সবকিছু ঠিক রাখলে আপনার লো ফ্লাইয়ার কবুতরও ভালো উড়বে, চমকে যাবেন আপনি। এবার আসি ব্রিডিং ব্যবস্থাপনায়। আপনি ফুল ফ্রেশ কালদম, মুসলদম বা ব্রিডের কবুতর কিনলেন, ফ্লাইং পারফরমেন্স ভালোই পেলেন। মহাআনন্দে ব্রিডিং করালেন আর মার্কিং ফাটা বেবী পেলেন। মনে করেন, কালদমের পেরেন্টস একুরেট,বেবীর লেজে একটা বা দুইটা পালক সাদা বের হলো। আপনার স্বাধের কবুতর ফাটা বাচ্চা জন্ম দিল। আপনার কষ্ট মাটি হয়ে গেল। যার কাছ থেকে জাত কিনেছিলেন তার উপর দোষের বোঝা চাপালেন। কিন্তু ভাই,এতেও কিন্তু কবুতরের দোষ নেই, যার কাছ থেকে কিনেছিলেন তার ও দোষ নেই, সেও তো আরেক জনের কাছ থেকে কিনেছে। এক্ষেত্রে দোষ আমাদের সবাই। আমরা কবুতর কিনি,কিনে বয়স ছয় মাস না হতেই ডিম-বাচ্চা করানোর জন্য লাগিয়ে দেই। দশ ফেদার ঝড়া পর্যন্ত কয় জন আমরা অপেক্ষা করি। এটাই নিয়ম। এটা আমার কথা নয়, ন্যাশনাল পিজয়ন এসোসিয়েশন এই কথা কয়। কবুতরকে বাল্যবিবাহ না দিতে বলে।আপনার গাছের মেওয়া ফল তো আপনিই খাবেন। একটু অপেক্ষা করলে পেকে মিষ্টি হবে,সময়ের আগে খেতে চাইলে কাচা অথবা আধা পাকা খেতে হবে। সবুরে মেওয়া ফলে। ভালো পেরেন্টস এর বেবী মার্কিং ফাটা হলে দেশী কবুতরের দামে বিক্রি করতে হয়। মার্কিং ভালো হলেও সেই বেবী আশানুরূপ উড়বে না। ঘুরে ফিরে উত্তর একটাই হলো। বলে রাখা ভালো,দশ ফেদার ঝড়ার পর ব্রিডিং করলেও এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। কারন আপনি যার কাছ থেকে এনেছেন হয়ত সে ব্রিডিং রুলস্ মানেনি। সেক্ষেত্র আপনি সেটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এক দুইবার হওয়ার পর ঠিক হয়ে যাবে। আরেকটা কথা না জেনে ব্লাড ভাঙতে যাবেন না। একেক ব্লাডের কবুতর একেক রকম। কোনটা বড় রাউন্ড করে উড়বে কোনটা ছোট রাউন্ডে উড়বে মাথার উপর থাকবে,আবার কোন ব্লাডের কবুতর এলোপাথাড়ি উড়বে যাকে আমরা দৌড়ানো বলি। মনে রাখবেন, অভিজ্ঞতা কিনতে পাওয়া যায়না,আবার একদিন বা এক বছরেও অর্জন করা যায়না। সব সময় সিনিয়রদের টিপস্ নিবেন,তাদের লফট পরিদর্শন করবেন,তাদের উড়ানোর কৌশল দেখবেন।।