17/07/2021
আপনার রক্তের গ্রুপের নাম কি?
আমাদের প্রত্যেকের যেমন একটি সুন্দর নাম আছে তেমনি সবার রক্তেরও একটি নাম আছে ।সবার রক্ত দেখতে লাল হলেও সবার রক্তের গ্রুপ এক নয় ।তাই ইচ্ছা করলেই একজন আর একজনকে রক্ত দিতে পারে না ।রক্ত লেনদেন করতে হলে রক্তের গ্রুপ ম্যাচিং ও ক্রস ম্যাচিং করতে হয় ।কারন রক্ত গ্রহীতাকে তার নির্ধারিত গ্রুপ ছাড়া অন্য গ্রুপের রক্ত সঞ্চালন করলে গুরুতর পরিনতি (মৃত্যু) হতে পারে ।তাই সবার সঠিক রক্তের গ্রুপ জানা আবশ্যক ।আমরা সবাই আমাদের নাম জানি এবং সারাজীবন তা স্বযত্নে লালন করি অথচ রক্তের গ্রুপ জানবো না তাই কি কখনোও হয় ? আসুন আমরা জেনে নিই আমাদের শরীরে কি কি গ্রুপের রক্ত থাকে এবং কে কাকে রক্ত দিতে পারে এবং কে কাকে রক্ত দিতে পারে না ।
মানুষের শরীরের লোহিত কনিকার আবরনে উপস্থিত অ্যান্টিজেন অনুসারে রক্তের শ্রেনি বিভাগ করা হয় তিনভাবে –
• AB (এবি)শ্রেনি গ্রুপ নির্নয় করে ।
• MN (এমএন) শ্রেনী কেবলমাত্র পিতা বা মাতার পরিচয় প্রমানের জন্য প্রয়োজন হয় ।
• RH (আর এইচ) শ্রেনী- পজেটিভ ও নেগেটিভ নির্দেশ করে ।
আর এইচ শ্রেনী প্রথমে পাওয়া যায় রিসাস (Rhesus)জাতীয় বানরের দেহে ।
মানুষের লোহিত কনিকায় (RBC) “এ” বা “বি” অ্যান্টিজেন থাকতে পারে ।সেইভাবে রক্তরসে বিপক্ষ অ্যান্টিবডি তৈরী হয় । কোন কোন ক্ষেত্রে লোহিত কনিকায় এ ও বি উভয় অ্যান্টিজেনই থাকতে পারে । আবার কোন অ্যান্টিজেনই নাও থাকতে পারে ।রক্তে “এ” এবং “বি” অ্যান্টিজেন থাকা না থাকার উপর ভিত্তি করে মানুষের রক্ত চারটি শ্রেনিতে ভাগ করা হয় । প্রত্যেক শ্রেনীর আবার পজেটিভ এবং নেগেটিভ থাকে ।
রক্তের গ্রুপ আর এইচ ফ্যাক্টর
“এ” (A) গ্রুপ “A” পজেটিভ “A” নেগেটিভ
“বি” (B) গ্রুপ “B” পজেটিভ “B” পজেটিভ
“ও” (O) গ্রুপ “O” পজেটিভ “O” নেগেটিভ
“এবি” AB গ্রুপ “AB” পজেটিভ “AB” নেগেটিভ
Universal donnar বা দাতা গ্রুপ ঃ- যদি কখনও দেখা যায় যে এ (A) বা বি(B) বা এবি(AB) গ্রুপের জরুরী রক্তের প্রয়োজন কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না সেই ক্ষেত্রে ”ও” গ্রুপ জীবন বাচানোর তাগিদে তাকে সামান্য পরিমান রক্ত দিতে পারে, কিন্তু নিজের প্রয়োজনে “ও” গ্রুপ ছাড়া কারো কাছ থেকে রক্ত নিতে পারে না । তাই “ও” গ্রুপ কে বলা হয় সার্বজনীন দাতা বা Universal Donnar.
Universal Receipient বা সার্বজনীন গ্রহীতা ঃ- এবি রক্তের গ্রুপের কোন ব্যক্তির জরুরী রক্তের প্রয়োজনে যদি এবি গ্রুপের কোন ডোনার না পাওয়া যায় তাহলে রুগীকে বাচানোর তাগিদে এ বা বি গ্রুপ অথবা ও গ্রুপ এর যে কোন লোকের রক্ত নেওয়া যেতে পারে । কিন্তু নিজে আর একজন এবি ছাড়া অন্য কাউকে রক্ত দিতে পারে না। তাই এবি রক্তের গ্রুপকে বলা হয় Universal Receipient বা সার্বজনীন গ্রহীতা।
পজেটিভ গ্রুপের রক্ত কখনও নেগেটিভ গ্রুপকে এবং নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত কখনও পজেটিভ গ্রুপ কে দেওয়া যাবে না। যদি ভুল করেও দেওয়া হয় তাহলে দ্রুতই গ্রহীতার মৃত্যুর কারন হতে পারে ।
স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের রক্তের গ্রুপ একই শ্রেনির পজেটিভ ও নেগেটিভ হয় এবং গর্ভস্থ সন্তানের রক্তের গ্রুপ পজেটিভ হলে নবজাতকের লাল কনিকা ভেঙ্গে যেতে পারে ।ঐ সন্তান জন্মগতভাবে জন্ডিস এ আক্রান্ত হতে পারে এবং রক্ত স্বল্পতা দেখা দিতে পারে ।এমনকি সন্তান হতে পারে জন্মান্ধ, মৃত, হাবা-গোবা, শারিরীক ও মানুষিক প্রতিবন্ধী । সুতরাং বিপদ ও ঝুকি এড়াতে বিবাহের পুর্বে পাত্র ও পাত্রীর উভয়ের রক্তের গ্রুপ জেনে নিন এবং একই শ্রেনীর গ্রুপ বর্জন করুন ।
মানুষের মত অন্য প্রানীদেরও রক্তের গ্রুপ আছে।
1. ইদুর এর দেহে মানুষের মত ৪ প্রকার রক্তের গ্রুপ আছে।
2. বিড়ালের রক্তের গ্রুপ ২ প্রকার।
3. খরগোসের রক্তের গ্রুপ ৫ প্রকার।
4. কুকুর ও ভেড়ার রক্তের গ্রুপ ৭ প্রকার।
5. ঘোড়ার রক্তের প্রুপ ৯ প্রকার।
6. মুরগীর রক্তের গ্রুপ ১১ প্রকার।
7. গরুর রক্তের গ্রুপ ১২ প্রকার।
8. শুয়োর এর রক্তের গ্রুপ ১৬ প্রকার।
রেফারেন্স বুক-আধুনিক বিশ্বের বিজ্ঙান কি ?এবং কেন ?সম্পাদনা- আব্দুর রহমান রেন্টু।
কি কি কারনে রক্তের গ্রুপ জানা দরকারঃ
বিভিন্ন কারনে রক্তের গ্রুপ জানা দরকার। যেমনঃ-
দৈব দুর্ঘটনা, রক্তশুন্যতা, থেলাসেমিয়া, ডেলিভালী, অপারেশন, লাইসেন্স তৈরী, পাসপোর্ট তৈরী, পরিচয়পত্র তৈরী, বৈবাহিক ক্ষেত্রে সহ আরো অনেক কারনে রক্তের গ্রুপ জানা জরূরী ।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোক অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত এবং অসচেতন । আমরা অস্বুস্থতার কারনে চিকিৎসকের স্বরনাপন্ন হই এবং ডাক্তার এর পরামর্শ মত রক্তের অনেক রকম পরিক্ষা করাই কিন্তু রক্তের গ্রুপ পরিক্ষা করাই না।
উন্নত বিশ্বের লোকেরা এত বেশি সচেতন যে একটা মানব শিশু জন্মগ্রহন করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটা কাজ করে । যেমনঃ-
(১) জন্ম নিবন্ধন (২) এপেন্ডিক্স অপারেশন (৩) রক্তের গ্রুপ (৪)ইন্সুরেন্স বা বীমা ।
জন্ম নিবন্ধনঃ- জন্ম নিবন্ধন শিশুর জন্মগত অধিকার ।আমরা আনেকে জানিনা কবে, কখন সর্বপ্রথম এই পৃথিবীর আলো দেখেছিলাম, তাই জানতে পারিনা আমাদের প্রকৃত বয়স কত । ফলে ইচ্ছা ও সামর্থ থাকার পরও একদিকে যেমন(বোর্ড রেজিষ্ট্রেশনের জন্য দেওয়া তারিখ) জন্মদিন পালন কুন্ঠিত হই,তেমনি অন্যদিকে জানতে পারিনা কোন রাশির জনক । এই সুযোগে ১২/১৩ বছরের মেয়েকে ১৮ বছর বানিয়ে বাল্য বিবাহ আইনের চোখে বৈধ করা হয়। এফিডেবিট করে অনেকে বয়স ইচ্ছামত কমিয়ে বা বাড়িয়ে সুযোগ সন্ধানীরা অনেক ফায়দা আদায় করে । সুখের কথা বাংলাদেশে বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন এর কার্যক্রম সরকারিভাবে শুরু হয়েছে ।আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই কার্যক্রমে সহযোগিতা করা ।
এপেন্ডিক্স অপারেশনঃ- এপেন্ডিক্স প্রত্যেকের শরীরে থাকে ।এই অঙ্গটি তেমন কোন কাজে লাগে না ।থাকলে কোন ক্ষতি নেই না থাকলেও তেমন কোন সমস্যা নেই । কিন্তু যদি কোন কারনে বৃদ্ধি হয় তখন অনেক ধরনের শারিরীক সমস্যার কারন হয় আর তখন অপারেশন করে ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোন গত্যান্তর থাকে না ।উন্নত বিশ্বে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে একটি ভ্যাকসিন দিয়ে এপেন্ডিক্স নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়,ফলে সারা জীবনে আর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে না ।
রক্তের গ্রুপঃ- রক্তের গ্রুপ অপরিবর্তনীয় । জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একই গ্রুপ থাকে ।শরীর থেকে সম্পুর্ন দুষিত রক্ত ফেলে দিয়ে নতুন রক্ত ঢুকানো যায়।কিন্তু গ্রুপ পাল্টানো যায়না।
বীমা বা ইন্সুরেন্সঃ- বাংলাদেশে যেমন গাড়ীর ইন্সুরেন্স ছাড়া গাড়ীর রেজিষ্ট্রেশন পাওয়া যায় না, তেমনি উন্নত বিশ্বে বীমা বা ইন্সুরেন্স করা ছাড়া সরকারী কোন সাহায্য বা সহযোগিতা পাওয়া যায় না। তাই প্রত্যেকের বীমা করা বাধ্যতামুলক।
বিয়ের আগে রক্তের গ্রুপ পরিক্ষাঃ
বিবাহের পুর্বে পাত্র-পাত্রী উভয়ের রক্তের গ্রুপ জানা জরুরী ।কারন রক্তের গ্রুপ এ ম্যাচিং না হলে দাম্পত্য জীবনে অনেক বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয় ।আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত সহ অনেক উন্নত দেশে বিবাহের পুর্বে পাত্র-পাত্রী উভয়ের রক্তের গ্রুপ পরিক্ষার মাধ্যমে রক্তের গ্রুপ, হেপাটাইটিস, ডায়াবেটিস, এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, ইত্যাদি জেনে নেওয়ার পর বিবাহে সম্মতি প্রদান করা হয় ।কিন্তু আমাদের দেশে সবচেয়ে সহজ রক্তের গ্রুপটাই পরীক্ষা করা হয়না, জানাও হয়না, এমনকি যাচাইও করা হয়না । তাই বেশির ভাগ পরিবারে ভুলবোঝাবুঝি এবং দাম্পত্য কলহ প্রায় লেগেই থাকে ।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কলহের কারন থাকে অজানা ।অথচ বিয়ে এখন আর নিয়তি নির্ভর নয় ।সংসার ধর্মের সব বিধি নিষেধ পেরিয়ে চিকিংসা বিজ্ঞানের অনেক সতর্কবানীর মুখোমুখি হয়েছে বিয়ে।
বিবাহ মানে আজন্ম সুখ দুঃখের সাথী ।তাই বলে জেনেশুনে অসুস্থ স্বামী নিয়ে ঘর করতে যেমন নববধু প্রত্যাশা করে না তেমনি স্ত্রী অসুস্থ বা অক্ষম হলে তার প্রতি স্বামীর প্রেম ভালবাসা জন্মায় না ।মনে করা হয় বিবাহের পুর্বে অস্বুস্থতার কথা গোপন করে তার সঙ্গে প্রতারনা করা হয়েছে ।শুরু হয় দাম্পত্য কলহ ।যদি সংসার টিকেও যায় তবে তার সুদুর প্রসারী প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের উপর পড়ে ।তাই বিবাহ, প্রজনন, সন্তান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরোগ ও স্বুস্থ শিশুর জন্মলাভের জন্য প্রয়োজন যথার্থ চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্য ও সতর্কতা ।
সুতরাং স্বুস্থ শরীর ও সুখী জীবনের প্রত্যাশ্যা যদি থাকে তাহলে উভয়ের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শারিরীক পিটনেস এর প্রতি নজর দেওয়া উচিত ।
পাত্রপাত্রী উভয়ের রক্তের গ্রুপ একই শ্রেনীর পজেটিভ ও পজেটিভ এবং একই শ্রেনীর নেগেটিভ ও নেগেটিভ হলে তেমন একটা সমস্যা নেই । কিন্তু স্বামী পজেটিভ এবং স্ত্রী নেগেটিভ হলে ভাবনার আছে । কারন নেগেটিভ নারীর গর্ভস্থ সন্তান পজেটিভ হলে সন্তানের রক্ত কনিকা মায়ের শরীরে প্রবেশ করে এক প্রকার ইমিউন এন্টিবডি তৈরী হয় আর এর ক্ষতিকর প্রভাব গর্ভস্থ শিশুর উপর পড়ে । শিশুর রক্ত কনিকা অস্বাভাবিকভাবে ভাঙ্গতে থাকে ও বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় । এতে শিশুর মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি ও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে । এছাড়াও সদ্যজাতর জন্ম থেকে জন্ডিস, হেপাটাইটিস-বি, রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে, হতে পারে শারিরীক ও মানুষিক প্রতিবন্ধী ।রক্তের বনিবনা না হওয়ায় বন্ধাত্বও দেখা দিতে পারে ।
সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় কোন প্রকার লক্ষন দেখা যায়না । কোন প্রকার অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়না ।তাই যদি অজ্ঞতা বা ভুলবশতঃ একই শ্রেনীর পজেটিভ ও নেগেটিভ বিবাহ হয় তাহলে গর্ভাবস্থায় ২৮ ও ৩৪ তম সপ্তাহে ২ টি ইনজেকশন নেওয়া উচিৎ অথবা শিশুর জন্মের ৭২ ঘন্টার মধ্যে প্রসুতি মাকে এন্টিবডি ইমিউনো গ্লোবিউলিন ইনজেকশন দেওয়া জরূরী ।
রক্ত পরিক্ষার মাধ্যমে থেলাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া রোগ সম্পর্কে আগেই জানা সম্ভব । থেলাসেমিয়া ও হিমোফিলিয়া জেনেটিক রোগ ।পাত্র-পাত্রী দুজনেই থেলাসেমিয়ার বাহক হলে পরবর্তীতে তাদের সন্তান ধারনের ক্ষেত্রে ঝুকি থেকে যায় ।নারীরাই শুধুমাত্র এই রোগের বাহক এবং পুরুষরাই আক্রান্ত হয় ।আক্রান্ত পুরুষ যখন বিয়ে করবে তখন তার কন্যা সন্তানের বাহক হওয়ার আশংকা রয়েছে । রক্তস্বল্পতা এই রোগের প্রধান লক্ষন। তাই রক্ত প্রদান করাই এই রোগের প্রধান চিকিৎসা ।
থেলাসেমিয়া রোগ নিরাময়ের থেকে এর প্রসার বন্ধ করা অনেক সহজ এবং জরুরী । এই রোগ নির্মুল করতে হলে বিবাহের আগে পাত্র-পাত্রীর রক্ত পরিক্ষার প্রয়োজন । একই কারনে আপন চাচাত, ফুফাত, মামাত, খালাত ভাই বোনের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক না করাই উত্তম ।কারন এদের ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি ঘটতে দেখা যায় ।
রক্ত পরিসঞ্চালন(Blood Transfusion)
মুমর্ষ রুগিকে রক্ত দান করে জীবন বাচানো আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার এক প্রধান অঙ্গ । প্রথম মহাযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) সময় থেকেই এর প্রচলন শুরু হয় ।প্রায় ৩০০ বছর আগে ফরাসি চিকিৎসক জিন ব্যাপিষ্ট ডেনিস (Jean Baptist Deris) সর্ব প্রথম ভেড়ার রক্ত মানুষের দেহে সঞ্চালন করে তার জীবন বাচানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন । এজন্য তাকে তৎকালিন শাসক ও যাজক সম্প্রদায়ের বিরাগভাজন হতে হয়েছিল । তারপরও চেষ্টা থেমে থাকেনি । এক সময় একজন মানুষের রক্ত অন্য মানুষের দেহে সঞ্চালন করে প্রান বাচাতে সফল হোল ।সাথে সাথে এটাও জানা হয়ে গেল যে, সব মানুষের রক্ত সবাইকে দেওয়া যাবে না। একই শ্রেনীভুক্ত হতে হবে । একই শ্রেনীভুক্ত হলেই চলবে না ক্রস মেচিং করে দেখথে হবে রক্তের কোন পরিবর্তন হয় কিনা ।
মানুষের রক্তের প্রায় ৫০০ গ্রুপ আছে । তার মধ্যে ৪টিই প্রধান যা অন্যের দেহে সঞ্চালন করা যায় । বাকিগুলি অন্যের দেহে সঞ্চালন করা যায়না ।তাই হিসাবের মধ্যে ধরা হয়না ।তাছাড়া সবার ষাথে এই চারটার মধ্যে কোন না কোন একটার সঙ্গে মিলে যায় ।
প্রতি বৎসর সারা বিশ্বে যে পরিমান রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন তার অর্ধেকও কালেকশান হয়না ।এর অন্যতম কারন ভয় ও সচেতনতার অভাব।তাই রক্ত দানে উৎসাহিত করার জন্য ব্যাপক সচেতনতামুলক প্রচার প্রচারনা প্রয়োজন ।সরকারী বেসরকারী সংস্থা এবং সামাজিক ও পেশাগত সংগঠনের আরো বেশি তৎপর হওয়া দরকার ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রয়োজনের তুলনায় রক্তের ঘাটতি পুরনের জন্য নানামুখী ব্যবস্থার কথা চিন্তা করছে । যেমনঃ-
I. রুগীর নিজের রক্ত আগে থেকে নিয়ে রাখা (Auto Transfusion) রাশিয়া ছাড়া অন্য কোন দেশে এই ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়নি ।
II. ফেলে দেওয়া রক্ত থেকে আবার রক্ত তৈরী ।
III. কৃত্রিম রক্ত তৈরী ।
উপরিউক্ত সব ব্যবস্থাই এখনও পরিক্ষামুলক স্তরে রয়েছে ।
রক্ত সঞ্চালনের পুর্বে সতর্কতাঃ-
রক্ত লেনদেন এর সময় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি যেমনঃ- সুচ, ব্লেড, সিরিন্জ ইত্যাদি জীবানুমুক্ত কিনা?
রক্ত দাতা বা ডোনার কোন সংক্রামক ব্যাধি ,ডায়াবেটিস, এইডস্, বি ভাইরাস, কিডনি, রক্তচাপ বা যৌন রোগে আক্রান্ত কিনা ? নেশা করে কিনা ? ইত্যাদি ।
রক্ত দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের রক্তের ক্রস ম্যাচিং করা হয়েছে কিনা ? ইত্যাদি।
রক্তের বিকল্প কেবলমাত্র রক্তঃ-
বৈজ্ঞানিক সংঙ্গা অনুযায়ী রক্ত হলো মানব দেহের তরল কোষের সমষ্ঠি, যার মধ্যে একজন মানুষের বেচে থাকার জন্য অপরিহার্য সব উপাদান থাকে ।রক্ত তৈরী করা যায়না ।এটি এমন একটি উপাদান যা পৃথিবীর কোন বিজ্ঞানীই আজ পর্যন্ত তৈরী করতে পারেন নি ।কাজেই কারোর রক্তের প্রয়োজন হলে কেবলমাত্র আরেকজন স্বুস্থ মানুষই সেই রক্তের জোগান দিতে পারেন । রক্তের কোন বিকল্প নেই ।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে , আমাদের দেশে প্রতি ৩ সেকেন্ডে একজন মানুষের রক্তের প্রয়োজন হয় ।৬০% মানুষের জীবনের কোন না কোন সময়ে রক্তের প্রয়োজন হতে পারে, অথচ মাত্র ৫% মানুষ রক্ত দানে এগিয়ে আসে ।একজন রক্ত দাতার কাছ থেকে পাওয়া রক্ত হতে পারে রক্ত –সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত একজন মানুষের জীবনের স্পন্দন, হতে পারে একটি ছোট্র নবজাতকের বেচে থাকার লড়াইয়ের অস্ত্র । আপনার দেওয়া রক্ত হাসি ফোটাতে পারে এমন একজন মায়ের মুখে যার শিশু সন্তানটি হয়তো থেলাসেমিয়ার রোগী ।
রক্ত দানের সুবিধাঃ-
1. স্বাস্থ্য পরিক্ষার সুযোগঃ- একজন মানুষ যখন রক্ত দান করতে যাবেন তখন চিকিৎসক বা নার্স তার রক্তচাপ পরিক্ষা করবেন । এক্ষেত্রে সাধারন স্বাস্থ্য পরীক্ষার সাথে সাথে রক্তদাতার রক্তের কিছু স্ক্রিনিং পরিক্ষাও করা হয়ে থাকে ।যার মাধ্যমে রক্ত দাতার কোন রোগ থাকলে সে সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন ।দেখা গেছে, এভাবে রক্ত দিতে গিয়ে অনেকের অনেক জটিল রোগ ধরা পড়েছে যা জানা না গেলে বিরাট ক্ষতি হয়ে যেত ।
2. হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসঃ- বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, রক্ত দানের ফলে হ্রদরোগ বা হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় । গভেষনায় দেখা গেছে যারা রক্ত দান করেন না তাদের চেয়ে যারা নিয়মিত রক্ত দান করেন তাদের হার্টের অসুখ কম হয় ।USA Today পত্রিকায় ড. হার্ভে ক্লেইন লিখেছেন, নিয়মিত রক্তদান শরীরের স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহে লৌহ বা আয়রন – এর পরিমান কমিয়ে দেয় । যদিও আয়রন মানবদেহের জন্য একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান, অতিরিক্ত আয়রন হার্ট এবং রক্তনালিগুলোর চুড়ান্ত ক্ষতির কারন হতে পারে । নিয়মিত রক্তদান করে রক্তে আয়রন এর পরিমান সঠিক রাখা যায় এবং এতে হার্টের অসুখ হওয়ার ঝুকি কমে যায় ।
3. শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি হ্রাসঃ এক ব্যাগ রক্ত (৪৫০ মিলি) দান করার ফলে একজন রক্তদাতার শরীরের অতিরিক্ত ৬৫০ ক্যালোরি ব্যয় হয় ।এতে শরীরের অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি অপসারন হয় এবং স্বাস্থ ভালো থাকে ।
4. শরীরে নতুন রক্ত তৈরী হওয়াঃ- রক্তদানের পর শরীরে রক্তকনিকার পরিমান কমে যায়, যার ফলে শরীরের অস্থি-মজ্জাগুলোতে নতুন কনিকা তৈরী হয় এবং এভাবেই শরীরের রক্ত তৈরী করার ক্ষমতা বাড়ে ।
5. পুরুষ রক্তদাতার সুবিধাঃ- মহিলাদের প্রতিমাসে ঋতুস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত আতিরিক্ত আয়রন বের হয় কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত আয়রন শরীরেই জমা হয়ে থাকে ।এই অতিরিক্ত আয়রন শরীরের প্রধান অঙ্গগুলোর ক্ষতিসাধন করে ।তবে নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে একজন পুরুষ তার শরীরের অতিরিক্ত আয়রন অপসারন করতে পারেন ।
কখন জরুরী রক্তের প্রয়োজন হয়
1. সড়ক দুর্ঘটনার ফলে অনেক রক্তক্ষরন হলে।
2. বড় কোন অপারেশনের সময় ।
3. সিজারিয়ান অপারেশনে ।
4. এক্টপিক প্রেগস্যান্সি,বার্স্ট অ্যাপেন্ডিক্স প্রভৃতির মত জরুরী অবস্থায় ।
5. রক্তশুন্যতায় আক্রান্ত নবজাতকদের ।
যাদের নিয়মিত রক্ত গ্রহন করতে হয়
কিছুকিছু রোগী আছে যাদেরকে বেঁচে থাকার জন্য নিয়মিত রক্ত গ্রহন করতে হয় ।
1. লিউক্যামিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারঃ- এধরনের রোগীদের রক্তে শ্বেত কনিকা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় । রক্তকনিকার ভারসাম্য রক্ষার জন্য এদের নিয়মিতভাবে রক্তের প্রয়োজন হয় ।
2. থ্যালাসেমিয়াঃ- এধরনের রোগীদের রক্তের হিমোগ্লাবিন পর্যাপ্তভাবে তৈরী হয়না ।এসব রোগী রক্তশুন্যতাজনিত বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থসমস্যায় ভোগে। তাই নিয়মিতভাবে রক্ত নিতে হয় ।
3. প্যানসাইটোপেনিয়াঃ- এধরনের রোগদের শরীরে রক্তের কোষগুলো সঠিক মাত্রায় তৈর হয়না, ফলে রক্তের হিমোগ্লোবিনে ঘাটতিসহ বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন হয়ে থাকে । এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে ।তাই তাদেরকে নিয়মিতভাবে রক্ত নিতে হয় ।
4. থ্রম্বোসাইটোপেনিয়াঃ- এধরনের রোগীদের রক্তের প্লাটিলেট কম থাকায় এদের রক্ত জমাট বাঁধতে অসু্বিধা হয় । এর ফলে রক্তপাত বন্ধ হতে দেরি হয় ।তাই রক্তের দরকার হয় ।
5. হিমোফিলিয়াঃ- এধরনের রোগীদের অস্থিসন্ধিতে রক্তক্ষরন হয়ে ফুলে ওঠে ।সহজে রক্তপাত বন্ধ হয়না । আতএব রক্ত নিতে হয় ।
6. অ্যানিমিয়াঃ- এধরনের রোগদের সাধারন রক্তস্বল্পতা থাকে ।তবে তার মাত্রা বিভিন্ন রকমের হতে পারে ।অতিমাত্রায় অ্যানিমিয়ায় রক্তের প্রয়োজন পড়ে ।
7. ভিটামিন ‘K’-র স্বল্পতায় ভুগছেন এমন ব্যাক্তিকে নিয়মিত রক্ত নিতে হয় ।
8. রক্তের জমাট বাঁধা এবং রক্তপাত সংক্রান্ত জটিলতা আছে এমন ব্যাক্তি ।
কারা রক্ত দান করতে পারবেন
রোগমুক্ত যেকোন প্রাপ্তবয়স্ক মানুস একজন রক্ত দাতা হতে পারবেন । তবে রক্তদানের ক্ষেত্রে সাধারনত যেসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা উচিত সেগুলো হোল-
রক্ত দাতার বয়স-১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে ।
ওজন- কমপক্ষে ৫০ কেজি থাকতে হবে ।
নাড়ীর গতি- মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ থাকতে হবে ।
রক্তচাপ- সিষ্টোলিকঃ ১০০ থেকে ১৬০ মি.মি পারদ
ডায়াষ্টোলিকঃ ৬০ থেকে ১০০ মি.মি পারদ থাকতে হবে ।
দেহের তাপমাত্রা- ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস (৯৮.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট)।
রক্তদাতাকে যেসব বিষয় জানতে হবে
1. একজন রক্তদাতা একবার রক্ত দেওযার পর পরবর্তী চারমাসের মধ্যে আর রক্ত দেবেন না ।যদিও রক্ত দেওযার পর শরীর তার হারানো রক্তের ঘাটতি এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যেই পুরন করে ফেলে, তবুও রক্তের লোহিত কনিকায় হিমোগ্লোবিন সঞ্চিত হতে প্রায় সাড়ে তিন মাস সময় লাগে ।
2. রক্ত দেওয়ার আগে সঠিকভাবে স্ক্রিনিং টেষ্ট করিয়ে কিছু রোগের অনুপস্থিতি নিশ্চিত হয়ে তবেই রক্ত দিতে হবে ।এ-রোগগুলো হলো এইচআইভি এইডস, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, ম্যালেরিয়া এবং গনোরিয়া ও সিফিলিস জাতীয় যৌণরোগ ।
কারা রক্ত দিতে পারবেন না
মহিলারা কখন রক্ত দিতে পারবেন না ।
গর্ভপাত হলে পরবর্তী ৬ মাস ।
গর্ভাবস্থায় পুরা সময়টিতে
স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে শিশুর জন্মদানের পর ১২ মাস ।
ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে ।
পুরুষ ও মহিলা উভয়েই কখন রক্ত দিতে পারবেন না
৬ মাসের মধ্যে রক্ত গ্রহনের ইতিহাস থাকলে ।
৩ মাসের মধ্যে ছোটখাট অপারেশনের ইতিহাস থাকলে ।
টাইফয়েড থেকে আরোগ্য লাভের পর ১২ মাস পর্যন্ত
ম্যালেরিয়া থেকে আরোগ্য লাভের পর ৩ বছর পর্যন্ত
কোন টিকা ইন্জেকশন নেওয়ার পর ১ মাস পর্যন্ত ।
প্লাটিলেট দানের ক্ষেত্রে ৩ দিনের মধ্যে অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ সেবনের ইতিহাস থাকলে ।
যারা কখনো রক্ত দান করতে পারবেন না
যারা নিম্নোক্ত রোগগুলোই ভুগছেন তারা কখনোই অপরকে রক্ত দিতে পারবেন নাঃ-
হেপাটাইটিস বি
হেপাটাইটিস সি
এইডস
সিফিলিস, গনোরি
হার্টের অসুখ
কিডনির অসুখ
ব্যাপকমাত্রার আলসার
এপিলেন্সি বা মৃগিরোগ
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
ধমনীর অসুখ
পলিসাইথেমিয়া
একবার রক্তদানে কতজন মানুষ উপকৃত হয়
একজন রক্তদাতার কাছ থেকে একবারে সর্বোচ্ছ ৪৫০ মি.লি রক্ত নেওয়া যায়, যা থেকে তিনজন রোগী উপকৃত হতে পারেন । এক ব্যাগ রক্তকে মেশিনের মাধ্যমে আলাদা করে তিনটি উপাদানে ভাগ করা যায় এবং তা একই সাথে তিনজনের জীবন বাচাতে পারে । আবার তিন চা চামচ রক্ত একটি অপরিনত শিশুর জীবন রক্ষা করতে পারে ।
রক্ত দানের মাধ্যমে আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে একজন মুমুর্ষ মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারি । একই সাথে নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে আমরা নিজেরাও ভালো থাকতে পারি । রক্তদানের এই মহৎ কাজে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ।মনে রাখতে হবে, আমাদের দেওয়া যাদের জীবন বাঁচাতে ব্যবহৃত হবে তারা আমাদেরও বন্ধু-বান্ধব, নিকট-আত্বীয়, প্রতিবেশি বা আপনজন । বলাতো যায়না কখন আপনার আমারও দরকার হতে পারে । তাই আমাদের সবার এই ব্যাপারে সাহায়্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে ।
রক্তঝরা দিনগুলি
বাংলাদেশে রক্তঝরা অসংখ্য দিন আছে ।যেদিনগুলি হয়তো কেয়ামত পর্যন্ত ইতিহাস হয়ে থাকবে ।যেমন ৫২ র ভাষা আন্দোলন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ । দেশ স্বাধীন করার জন্য এদেশের বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন শ্রেনীর লোক জীবন দিয়েছিল । সেই সব গৌরব মাখা রক্তাক্ত ভয়াবহ দিনগুলি স্বরনীয় করে রাখার জন্য বিভিন্ন প্রকার উদ্দ্যোগ
লোক চেনার সহজ উপায় রক্তের গ্রুপঃ
আমার আলোচনার বিষয় একজন মানুষের রক্তের গ্রুপ জানলে জানা যাবে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট যেমন তার রাগ কেমন, মেধা কেমন ইত্যাদি ।হয়তো অনেকে ভাবছেন,মানুষ চেনা কি অত সহজ ?
দীর্ঘদিন এক বিছানায় এক ছাদের নীচে বসবাস করেও প্রায় ক্ষেত্রে স্বামী বোঝেনা স্ত্রীর মন আর স্ত্রী বোঝে না স্বামীকে ।আর সেখানে রক্তের গ্রুপ জানলে একজন মানুষ সম্পর্কে জানা কিভাবে সম্ভব ?নানা মুনির নানা মত ।পথও ভিন্ন, চাওয়া পাওয়া ভিন্ন । কেহ না পেয়ে শুধু দিয়ে খুশি কেহ অল্পতে খুশি কেহবা রাশি রাশি পেয়েও তুষ্ট নয়, তার আরো চাই ।
রাশিচক্রের মাধ্যমে ভাগ্য গননা করে মানুষের জীবনের ভুত ও ভবিষ্যৎ বলে দেওয়ার মত যোগ্যতা আমার নেই ।জ্যোতিষ শাস্ত্রের প্রতি আমার আগ্রহ কোনদিন ছিল না, এখনও নেই ।তাই আমার ধারনা নেই ভাগ্য গননা মানুষের জীবনে কতটুকু সত্য হয় এবং ভাগ্যের কতটুকু পরিবর্তন হয় কিম্বা আদৌ হয় কিনা ।কিন্তু আমি সম্পুর্ন নতুন এবং জটিল একটি বিষয় নিয়ে গভেষনা শুরু করেছি ।
নানা মুনির নানা মত পথও ভিন্ন ।চাহিদার মধে্যেও বিস্তর ফারাক ।কেহ অল্পতে তুষ্ট কেহবা আছে ভুরি ভুরি – তবুও রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি ।কেহ দিলদরিয়া কেহ আবার নেব তবে দেব না ।রুচি না থাকলেও অনেককে বাচাঁর জন্য খেতে হয় ।কাইকে আবার পছন্দ না হলেও কর্মের খাতিরে মিশতে হয়, ছালামও দিতে হয় ।এটাই নিয়তি ।একই বিষয় প্রত্যেকে তার নিজের মত চিন্তা ও কাজ করে ।কেহ সফল হয় কেহ ব্যার্থ হয় । কিন্তু প্রায়ই ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারন থাকে অজানা । অনেক কিছুই আমাদের করতে ইচ্ছা হয় কিন্তু করতে পারি না আবার অনেক কিছুই করি যা করতে মন সাড়া দেয় না ।এমন অবস্থার জন্য রক্তের গ্রুপ অনেকটাই দায়ী ।
আমি ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রায় ৫০০ স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় রক্তের রক্তের গ্রুপের উপর সেমিনার ট্রেনিং করেছি, অসংখ্য লোকের সাক্ষাতকার নিয়ে এমন কিছু তথ্য উপাত্ত পেয়েছি যার অভিজ্ঞতার বিবরন এই বইতে সন্নিবেশিত হয়েছে ।যদি কেহ রক্তের গ্রুপের বৈশিষ্টগুলি পড়ে অনুশীলন করে অথাৎ তার পরিচিত লোকদের পর্যবেক্ষন করে, তাহলে মানুষ সম্পর্কে ধারনা পাল্টে যেতে পারে, অনেক অনাকা্ঙ্খিত কষ্ট লাঘব হতে পারে, মানুষ চেনা সহজ হতে পারে, এমনকি নিয়ে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে করা যায়, সংশোধন করা যায়, অন্যকে ক্ষমা করা যায়, পারষ্পরিক ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ অবিশ্বাস ও দাম্পত্য কলহের অবসান হতে পারে । সর্বোপরি জীবনের একটা অর্থ খুজে পাওয়া যেতে পারে ।
ইদানিং আমার পরিচিত অপরিচিত যে কোন লোকের সঙ্গে দেখা হলে, কথা হলে জানতে ইচ্ছা করে তার রক্তের গ্রুপ কি ?তাছাড়া আমার সঙ্গে বা আমার উপস্থিতিতে কেহ কারো সঙ্গে অযথা, ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি বা গালমন্দ করলে মোঠেই রাগ হয়না বরং জানতে চেষ্টা করি তার রক্তের গ্রুপ কি । কারন প্রায় ক্ষেত্রে এমন আচরন সে মন থেকে করে না, করে তার রক্তে ।
মানব দেহে সবার রক্তের গ্রুপ যেমন এক নয়, তেমনি সবার আচার আচরনও এক নয় ।কারন রক্তের গ্রুপের উপর একজন মানুষের চরিত্র অনেকটাই নির্ভর করে বলে গভেষনায় পাওয়া গেছে ।
আমি গভেষনা করতে গিয়ে অনেক লোকের হ্যান্ডশেক করে , কারো কারো আচরন পর্যবেক্ষন করে তার রক্তের গ্রুপ সঠিকভাবে বলে দিয়েছি । আমার অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকের গ্রুপ পরিক্ষা করার আগে তার গ্রুপ বলে দিয়েছি যা পরিক্ষা করে তাই হয়েছে ।
রক্তের ধারা ।
হয়তো দেখে থাকবেন অনেকে শিশু বয়সে বাবা মাকে হারিয়েছে । বাবা মায়ের
কথা মনে নাই কিন্তু তার আচার আচরন অনেকটা বাবা মায়ের মত হয় । তাই লোকে বলে বাপকা বেটা । আবার যদি আচরনে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় তাহলে লোকে বলে আলেমের ঘরে জালেম অথবা জালেমের ঘরে আলেম ।অনেক সময় লোকে তাকে সন্দেহের চোখে দেখে ।কিন্তু সহজ বিসয়টি হোল বাবা মায়ের রক্তের গ্রুপের সঙ্গে সন্তানের রক্তের গ্রুপের মিল থাকলে আচরনও মিল থাকে, আচরনে মিল না থাকলে আচরনেও অমিল তাকে ।তবে বেশির ভা্গই রক্তের গ্রুপের মিল থাকে ।
হয়তো বরতে পারেন ডিএনএ বংশগতি ও বৈশিষ্ট নির্নয় করে । হ্যা ডিএনএ যেমন বৈশিষ্ট নির্নয় করে তেমনি ডিএনএ রক্তের গ্রুপও নির্নয় করে ।
রক্তের গ্রুপ বদলানো যায়না তবে বয়স, শিক্ষা, পরিবেশ, পেশা, অভিজ্ঞতা ও সচেতনতার কারনে বৈশিষ্ঠ্য কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় ।
আমার গভেষনার বিষয়টি প্রায় অর্ধ লক্ষ লোকের সঙ্গে শেয়ার করেছি তার মধ্যে সকলে তার জীবনের সঙ্গে প্রায় ৮০% মিল খুজে পেয়েছেন ।
গভেষনা সমস্ত বিষয়ের উপর হয়না । একটা বিষয়ের উপর হয় । তাই আমি যদি একই গ্রুপের সকল লোকের মধ্যে যে কোন একটা আচরন যদি সঠিকভাবে মিল পাই তাহলে মনে করবো আমার কষ্ট সার্থক । যেমন ও গ্রুপের ১০০% লোকের মধ্যে কয়েকটি বিষয় কনফার্ম হওয়া গেছে ।তাদের শরীর হাত পা গরম থাকে, মাথা গরম, রাগ বেশি তবে অস্থায়ী ।এরা স্বেচ্ছাসেবি এবং বিশ্বপ্রেমিক হয় ।
এতদিন গভেষনা হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে আর তার পলাফল এই বইতে সন্নিবেশিত হয়েছে । এখন আরো বস্তিারিত, আরো ব্যাপোক এবং প্রতিষ্ঠানিকভাবে করা হচ্ছে তার জন্য নিম্নে বর্নীত কিছু উদ্দ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে । যেমনঃ-
(১) প্রাথমিকভাবে একহাজার পরিবারের সবার রক্তের গ্রুপ এর ডাটা কালেকশন এবং তাদের সাক্ষাতকার ও নিয়মিত পর্যবেক্ষন ।
(২) একই রক্তের গ্রুপের ১০০ জনকে নিয়ে দিনব্যাপি সেমিনার এর আয়োজন এবং তাদের মতামত সংগ্রহ ।
(৩) স্বামী স্ত্রী একই গ্রুপের বিবাহ হওয়ার পর তাদের পারিবারিক বা শারিরীক কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা।
(৪)রাজনীতিবিদ,পাগল,ভয়ংকর অপরাধি, জাদরেল অফিসার,নেশাখোর বহুবিবাহ ইত্যাদি প্রবনতা কোন রক্তের গ্রুপের লোকদের মধ্যে বেশি তা নির্নয় করা।
রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ কি করে চিনবেন ?
যাদের রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ এরা খুবই মেধাবি, উচ্চাকাঙ্খি, কিছুটা ভিতু, লাজুক, মিশুক, রোমান্টিক, বন্ধুপ্রিয়, আড্ডাপ্রিয় ও অমিতব্যয়ী ।
মেধাবীঃ- এরা সেরা মেধাবী । মেধা বেশি হলে কি হবে এরাই আবার পরিক্ষায় বেশি ফেল করে । কারন এরা কিছুটা অলস এবং ফাঁকিবাজ হয় ।
খুবই চঞ্চল এবং দুষ্ট প্রকৃতির হয়।
বেশিরভাগ দুষ্টামী নিজস্ব পরিমন্ডলে বা পরিচিত লেভেলে সীমাবদ্ধ থাকে । বাইরে গেলে খুবই নম্র, ভদ্র, মার্জিত যেন কিছুই জানে না, কিছুই বোঝে না ।কিন্তু এরা এতই চঞ্চল যে সব সময গান,বাজনা, নাটক, সিনেমা, নভেল, টিভি, সংগঠন, খেলাধুলা অথবা আড্ডা বা দুষ্টামি কিছু না কিছু করবেই ।এরা যদি বেশি বেশি দুষ্টামির দিকে খেয়াল করে তাহলে পরীক্ষায় ডাব্বা মারে, যদি পড়ালেখায় বেশি মনোযোগী হয় তাহলে সবচেয়ে সেরা রেজাল্ট করতে পারে ।শিশু বয়স থেকে এদেরকে স্পেশিয়াল টেক কেয়ার করা উচিত, না হলে বখে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।বড় হলে ফেরানো কঠিন ।
স্পর্শকাতর বা আত্বভিমানীঃ
এরা একটুতেই স্পর্শকাতর এবং আত্বভিমানী হয় । তাই সহজেই এদেরকে বশ করা যায় ।গায়ে পড়া ভাবটা এদের মধ্যে বেশি ।সবাইকে ভালবাসে, আপনভাবে, বিশ্বাস করে তাই সহজে কারো মনে কষ্ট দেয়না । কষ্ট নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে । এদের কষ্ট কেহ বুঝতে চায়না তাই প্রায় সারা জীবন ফান এন্ড ভান করেই সবার সঙ্গে ব্যালেন্স করে চলতে চেস্টা করে ।
উচ্চাকাঙ্খি ও স্বপ্নবিলাসীঃ-
ড্রিম মেকার বা প্লান মেকার ।অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখে ।রাত জেগে তৈরী করে স্বপ্নের তাজমহল ।তবে বেশিরভাগ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়না বিভিন্ন প্রকার বাধার কারনে।বাধা তাদের থেকে বেশি পায় যাদের জন্য কাজ করেদের স্বপ্ন ।স্বপ্ন সফল না হওয়ার আরো একটা কারন হোল এরা তাদের স্বপ্নের কথা অন্যদের নিকট প্রকাশ করে সরল বিশ্বাসে প্রকাশ করে দেয় এবং তাদের থেকে বাধাগ্রস্থ হয়ে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় । যেমন কেহ হয়তো বলে – ছেড়া কাথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন ।কেহ হয়তো বলে তুমি পাগল হয়েছো তা বাড়ীর সবাই জানে ।কেহ হয়তো বলে তুমিতো অনেক বড় হবে- তোমার বাড়ী হবে, গাড়ী হবে, আমার অত স্বপ্ন নেই তবে তোমার গাড়ীর ড্রাইবারের চাকুরীটা আমাকে দিও অথবা তোমার বাড়ীর দারোয়ানের চাকুরীটা আমাকে দিও ।ইত্যাদি ।মনটা ভেঙ্গে যায়,হতাশ হয়, নিরাশ হয়, কাজের গতি কমে যায় এক সময় আর থাকে না।এইভাবে তার স্বপ্নগুরো ঝরে যায়, মরে যায় ।আবার নতুন স্বপ্ন দেখে ।তার স্বপ্ন বা আইডিয়া চুরি করে অন্যেরা বড় হয় আর তার স্বপ্ন একটার পর একটা রুপ বদলায় ।এরা শুধু নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেনা বা ভাবেনা, পারিপার্শ্বিক সবাইকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে ।এরা যদি ভাল গাইড পায় তাহলে দ্রুত সফল হতে পারে ।কিন্তু বেশিরভাগই এদের স্বপ্নের কথা মনুষ বিশ্বাস করে না,তাই সাহায্য করে না্।মনে কষ্ট নিয়ে একা একা পথ চলতে হয়, তাই সফল হতে অনেক সময় লাগে ।
স্বপ্ন পুরনের জন্য এরা রুচি বদলায়, বন্ধু বদলায়, প্রয়োজনে পেশা বদর করে । একদিন সবাই আপন করে কাছে টেনে নেবে এই আশায় সাময়িক আত্বীয়তা বা পারিবারিক বন্ধনও ছিন্ন করতে পারে ।
ভীতু, লাজুকঃ-
এদের ভয় এবং লজ্জা বেশি ।তাই মানবতাও বেশি ।হারানোর ভয়, প্রত্যাখ্যান হওয়ার ভয়, অপমান হওয়ার ভয় ।ভয় থেকে সৃষ্টি হয় লজ্জা। লজ্জা হারায় সাহস।সাহসের অভাবে হয় মানবতাবাদী ।তাই সব কষ্ট নিজের মধ্যে চেপে রাখে, প্রকাশ করে না, প্রতিবাদ করে না।প্রতিবাদ তখনই করে যখন ঠেকতে ঠেকতে আর পিছন ফেরার জায়গা থাকে না ।
প্রেমিকঃ
প্রথম জীবনে ছ্যাকা খায়, তাই সারা জীবন প্রেমের কাঙ্গাল থাকে ।একাধিক প্রেম করে তবে বেশিরভাগ প্রেমই অন সাইডেড ।কারন যাকে ভাল লাগে ভালবাসে তাকে লেখা অসংখ্য চিটি ড্রয়ারে অথবা বইএর মোলাটে জমা থাকে, দিতে সাহস পায়না।যদি সবাইকে বলে দেয়, অপমান করে, যদি আর কথা না বলে ইত্যাদি ।প্রিয়জনের সঙ্গে প্রায়ই দেকা হয় ,কথা হয়, একসঙ্গে চলাফেরা করে কিন্তু বলা হয়না মনের কথাটি, তাই এত কাছে পেয়েও তাকে হারাতে হয় ।শরৎচন্দ্র ঠিকই বুঝেছিলেন তাই এদের লক্ষ্য করেই বলেছিলেন বড় প্রেম শুধু কাছে টানে না, দুরেও ঠেলে দেয় ।যদি কেহ ভয় ও লজ্জার মাথা খেয়ে একবার বলতে পারে আই লাভ ইউ । তাহলে আর ঠেকায় কে ?
বন্ধু প্রিয়, আড্ডা প্রিয়,মিশুক ও অমিতব্যায়ীঃ-
কারো সঙ্গে একবার মিশলে খুব সহজে তাকে আপন করে নেয়,তাকে বিশ্বাস করে ।ফান এন্ড ভান খুব প্রিয় বিষয় ।প্রথম জীবনে অনেকটাই