07/09/2022
পোষা পাখির বমির কারণ ও প্রতিকার:-
হ্যান্ড ফিড বেবি থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের পাখি এমনকি সুস্থ পাখিকেও হঠাৎ করে বমি করতে দেখা যায়৷ পাখি বমি করার অনেক কারণ রয়েছে। ইনফেকশন থেকে, ক্ষতিকর কিছু খেলে, শরীরের অর্গানে কোনো রোগ হলে পাখি বমি করে।
পাখি বমি করার কিছু সাধারণ কারণ নিচে দেওয়া হল।
১। বদহজমঃ-
অতিরিক্ত হ্যান্ড ফিড করালে বাচ্চা পাখির বদহজম হয়, পাখি বমি করে। আবার গরম পানি তে খাবার মিক্স করে না খাইয়ে নর্মাল পানিতে মিক্স করে খাওয়ানোর ফলে খাবার হজমে সমস্যা হয়।
২। ইনফেকশন ঃ- ইনফেকশন হল সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলির মধ্যে একটি। খাবারে জীবানু থাকলে বা খাবার পানিতে পাখি পুপ্স করে পানি দুষিত হলে , কিংবা বিশুদ্ধ পানি পাখিকে খেতে না দিয়ে সাধারণ পানি দিলে এসব খাবার পানিতে থাকা গ্রাম পজেটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পাখির শরীরে প্রবেশ করে। আর এই ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন পাখিদের বমির অন্যতম একটি কারণ;
ক্যানকারঃ- ট্রাইকোমোনিয়াসিস নামক প্রোটজোয়া জীবাণুর মাধ্যমে এই রোগটি হয়। এটি পাখির সাইনাস, গলা, খাদ্যনালী ও ক্রুপে সংক্রমণ করে। ক্যানকার হলে পাখির মুখ থেকে লালা পড়ে, জিহব্বাতে ঘা হয়, মুখে ও গলাতে ছোট ছোট গুটি দেখা যায়। এই গুটি গুলোর কারনে খাদ্যনালী বন্ধ হয়ে যায়। এই গুটি গুলো লিভারেও ঘা তৈরি করে, মুখে ও গলায় হলুদাভ ননীর ন্যায় পদার্থ জমা হয়। এই পদার্থ অনেক সময় খাদ্যনালীর পথ বন্ধ করে দেয় ফলে ক্রুপ ফুলে যায়৷ আর তাই ক্যানকার হলে বাচ্চা পাখিকে খাওয়ানোর সময় বমি করে দেয়৷ এডাল্ট পাখি খাওয়া কমিয়ে দেয়।
ব্যাকটেরিয়া: মাইকোব্যাকটেরিয়াম, মেগাব্যাকটেরিয়া, সালমোনেলা এবং অন্যান্য অনেক গ্রাম-পজেটিভ এবং গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন হলে পাখি বমি করে। ব্যাকটেরিয়া জনিত কারনে পাখি বমি করলে বমির পাশাপাশি সবুজ, কালো ধরনের পুপ্স করে৷
ফাংগাল: ক্যান্ডিডা, এস্পারজিলোসিস, এসব ফাংগাল ইনফেকশন পাখির রেস্পেরেটরি ট্র্যাক সহ অন্যান্য কলাকেও আক্রমন করে।
ফাংগাল ইনফেকশন হলে পাখির শাসকষ্ট হয় আর ঝিমায়, খাবার খেতে চায় না, শুকিয়ে যায়। ফুসফুসে আক্রমণ করে ফুসফুসে ছোট হলুদাভ গুটি দেখা যাবে।
বাচ্চা পাখির খাবার হজম হয় না, ক্রুপে খাবার পচতে থাকে পরে খাওয়ানোর সময় বমি করে।
পরজীবীঃ-
ক্যাপিলারিয়া, প্লাজমোডিয়াম, টেপওয়ার্ম, ট্রাইকোমোনাস, গিয়ার্ডিয়া, রাউন্ডওয়ার্ম, ইত্যাদি ক্রিমিজনিত কারণেও পাখি বমি করে।
আঘাতঃ- উড়ে গিয়ে দেয়ালে বাড়ি খেয়ে বা অন্য প্রাণীর কামড় যা অভ্যন্তরীণ রক্তপাত বা সংক্রমণের কারণেও পাখির বমি হতে পারে।
নিউট্রিশনঃ-
অল্পবয়সী পাখিরা খাবারের তাপমাত্রা এবং সামঞ্জস্যের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল এবং কি পরিমান খাবার খাওয়ানো হচ্ছে তার প্রতি ;
অতিরিক্ত ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ালে একসময় কিডনি লিভারে সমস্যা হয়। এসব সমস্যার ফলে পাখি হঠাৎ বমি করা শুরু করে।
ভিটামিন জাতীয় সমস্যাঃ-
ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট অতিরিক্ত দেয়ার ফলে এবং ভিটামিনের অভাব হলেও পাখি বমি করে
যেমনঃ-
১। উচ্চ প্রোটিন খাদ্য দিলে
২। অতিরিক্ত ভিটামিন ডি খাওয়ালে
৩। ভিটামিন এ এর অভাবে
৪। ভিটামিন ই বা সেলেনিয়ামের অভাব হলে আবার অতিরিক্ত ভিটামিন ই বা সেলেনিয়াম খাওয়ালে।
৪। উচ্চ আয়রন জাতীয় খাবার খেলে
৫। ভুল তাপমাত্রায় অতিরিক্ত খাওয়ানো। যেমন গরম কালে ডিম বেশি খাওয়ালে পাখি বমি করতে পারে, হজমে সমস্যা হয়।
ভারী ধাতু: তামা, সীসা, দস্তা জাতীয় ইত্যাদি জিনিস মুখে দিলে।
খাবার: চকলেট, লবণ, ছাঁচযুক্ত বা নষ্ট খাবার, অ্যাভোকাডো, অ্যালকোহল।
গৃহস্থালী পণ্য: অ্যালকোহল, ডিটারজেন্ট, পাইন পটাসিয়াম ক্লোরাইড (ম্যাচ), ইত্যাদি মুখে দিলে বা খেলে।
পাখির বমি হলে করনীয় ঃ-
বমির কারন খুজে তারপর পাখিকে ট্রিট-মেন্ট করাতে হবে।
যেমন ব্যাকটেরিয়া জনিত হলে এন্টিবায়োটিক দিতে হবে, ফাংগাল জনিত হলে এন্টিফাংগাল দিতে হবে,
অ্যান্টিবায়োটিক: ডক্সিসাইক্লিন, পলিমিক্সিন বি, ট্রাইমেথোপ্রিম, সালফাডিমেথক্সিন, এনরোফ্লক্সাসিন
অ্যান্টিপ্যারাসাইটিকস: ফেনবেন্ডাজল, প্রাজিকুয়ান্টেল, লেভামিসোল
এন্টি ফাংগাল ওষুধ: ফ্লুকোনাজোল,
ক্যানকার ওষুধ ঃ- টু প্লাস, মেট্রোনিডাজল গ্রুপের যেকোনো একটি।
পাখির পাখির বমির সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে বিস্তারিত জানার প্রয়োজন হবে, যেমন :
কখন থেকে বমি শুরু হলো
কত ঘন ঘন এটা ঘটে
পাখিকে কি খাওয়ানো হয়
কিভাবে পাখি রাখা হয়।
শেষ কথাঃ-
পাখির বমি জনিত সমস্যা না হওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে
১।পাখির বাচ্চাকে হ্যান্ড ফিড করালে ভালো মানের হ্যান্ড ফিড দিয়ে করাতে হবে, ক্রুপ খালি হলে তারপর খাওয়াতে হবে। ঘন ঘন বেশি খাওয়ানো যাবে না।
২। ব্রিডিং এ দেয়ার আগে ক্যানকার, ক্রিমির, কোর্স করিয়ে ফেলতে হবে।
৩।খাবারে ফাংগাস আছে কিনা দেখতে হবে, পানির বাটি, খাবার বাটি পরিষ্কার করে দিতে হবে।
১।পাখির বাচ্চাকে হ্যান্ড ফিড করালে ভালো মানের হ্যান্ড ফিড দিয়ে করাতে হবে, ক্রুপ খালি হলে তারপর খাওয়াতে হবে। ঘন ঘন বেশি খাওয়ানো যাবে না।
২। ব্রিডিং এ দেয়ার আগে ক্যানকার, ক্রিমির, কোর্স করিয়ে ফেলতে হবে।
৩।খাবারে ফাংগাস আছে কিনা দেখতে হবে, পানির বাটি, খাবার বাটি পরিষ্কার করে দিতে হবে।
৪। খাবার আর পানি ফ্রেশ দিতে হবে।
৫। ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নিয়ম মত দিতে হবে। প্রতিমাসে দিতে হয় এইটা ভুল।
৬। পাখির এভিয়ারি, খাচা, সব পরিষ্কার রাখতে হবে।
৭। সফট ফুড গরম কালে দিলে ২ঘন্টার বেশি রাখা যাবে না
৮। গরম কালে এগ ফুড বেশি দেয়া যাবে না।
৯। হজম জনিত সমস্যা হলে বাচ্চা পাখিকে লেবুর রস, আদার রস খাওয়াতে হবে। অথভা হজম জনিত ওষুধ যেমন নিউট্রিপ্লেক্স, মাল্টিযাইম বিটি, এসবের যেকোনো একটি খাওয়াতে হবে।
১০। বাচ্চা পাখি বমি করলে হ্যান্ড ফিডের পাশাপাশি রাইস সেলাইন খাওয়াতে হবে। আর বমির কারন খুজে উপোরক্ত ট্রিটমেন্ট দিতে হবে।