14/10/2020
আমরা যাকে এমোনিয়া মনে করি আসলে সে TAN! তাহলে এতদিন ভুল জেনেছি!
আমরা সাধারনত এমোনিয়া টেস্ট কিট দিয়ে পানি টেস্ট করে প্রাপ্ত ফলাফল কে এমোনিয়ার পরিমান বলে মনে করি। কিন্ত বাজারের অধিকাংশ টেস্ট কিট যে ফলাফল দেয় তা এমোনিয়াম (NH4+) এবং এমোনিয়া (NH3) এর যোগফল, যা TAN (Total Ammonia Nitrogen)বলে পরিচিত । TAN থেকে এমোনিয়া (NH3) বের করার জন্য আপনাকে এমোনিয়া ফেক্টর চার্টের সহয়তা নিতে হবে। আপনার ট্যাঙ্কের পানির পি এইচ ও তাপমাত্রা অনুযায়ী ফেক্টর চার্ট (সংযুক্ত) হতে প্রাপ্ত ফেক্টর ভ্যালু দিয়ে গুন করে আমনিয়ার পরিমান বের করতে পারবেন।
সুত্রঃ
TAN X Factor value = Ammonia(NH3),
TAN - Ammonia(NH3) = Ammonium(NH4+)
মনে করি আমার ট্যাঙ্কে টেস্ট কিটের ফলাফল ৪, তার মানে আমার TAN = ৪ ppm,
যদি আমার তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি হয় এবং পি এইচ ৮ হয় তবে আমার ফেক্টর ভ্যালু ০.০৬৯৯০০ (ছবি সংযুক্ত)
সেইক্ষেত্রে এমনিয়ার পরিমান ৬ X ০.০০৬৯৯০০ = ০.৪১৯৪ ppm
অর্থাৎ ০.৪১৯৪ মিলিগ্রাম পার লিটার।
এমোনিয়া নিয়ন্ত্রণের সব থেকে সহজ উপায় হলো কার্বোন এবং নাইট্রোজেনের অনুপার ঠিক রাখা।
C N Ratio/কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত বিভিন্ন নিয়মে মেইনটেইন করে থাকে, কেউ কেউ নিয়মিত ট্যাংক থেকে ময়লা (স্লাস) গুলো বের করে দেয় এবং পাশাপাশি ট্যাংকে প্রোবায়োটিকও ব্যবহার করা হয়, এটাকে পুরোপুরি বায়োফ্লক বলা ঠিক হবেনা, এটা সেমি বায়োফ্লক বলা যায়, সুতরাং আমাদের আলোচনা আমার মনে হয় পানির পরিবর্তন ছাড়া কিভাবে C N Ratio/কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত মেইনটেইন করা যায়। কোন পানি পরিবর্তন করা ছাড়া যারা বায়োফ্লক করতে পারেন তারাই বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফল বলা যায়।
C N Ratio/কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত দুইভাবে হিসেব করে বের করা যায়:
১) মাছকে কি পরিমাণ খাবার দেওয়া হয় তার উপর ভিত্তি করে C N Ratio বা কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত বের করা
২) ট্যাংকির পানিতে বিদ্যমান এমোনিয়া TAN এর মান বের করে C N Ratio/কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত বের করা
১) মাছকে কি পরিমাণ খাবার দেওয়া হয় তার উপর ভিত্তি করে C N Ratio বা কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত বের করা ; আসুন আমরা আলোচনা করি আমাদের ট্যাংকে কি পরিমাণ খাবার দিলে কি পরিমাণ কার্বন এবং কি পরিমাণ নাইট্রোজেণ পাওয়া যায়, ধরা যাক আপনার ট্যাংকে ৬০০ কেজি মাছ আছে। মাছের ওজনের ৩% হারে খাওয়া দিলে খাবার লাগবে ১৮ কেজি বা ১৮,০০০ গ্রাম। এই খাবারে অনেক উপাদান দিয়েই তৈরী করা হয় যাতে প্রোটিন এবং কার্বহাইড্রেড দুটাই আছে। মৎস্য খাদ্য বিশেষজ্ঞদের গভেষনায় দেখা যায়ে ৯০% সলিড খাবার এবং ১০% থাকে আদ্রতা । তাহলে আমরা বলতেই পারি এই খাবারে সলিড (আসল) খাবারের পরিমাণ ১৮ কেজি - ১.৮ কেজি(১০%) = ১৬.২ কেজি বা ১৬,২০০ গ্রাম, এবার দেখা যাক এতে কি পরিমাণ খাবার হজম হয়, ১৬.২ কেজি বা ১৬,২০০ গ্রাম খাবারের মধ্যে মাছে খেয়ে হজম করতে পারে মাত্র প্রায় ৩০% খাবার মাত্র। বাদবাকি ৭০% অপচয় হয়ে যায়। মানে এই ৭০% খাবার পানিতে মিশে যায়, ৩০% হজম বা শরীরে মিশে যাওয়ার পর বাকি ৭০% খাবার থাকল যার পরিমাণ ১১ কেজি ৩৪০ গ্রাম বা ১১,৩৪০ গ্রাম। এই ১১,৩৪০ গ্রাম খাবারে একটা এভারেজ হিসেবে ধরে নেয়া যায় ৫০% কার্বন থাকে।, এই হিসেবে কার্বনের পরিমান দাঁড়ায় ১১,৩৪০ গ্রামের ৫০% দাঁড়ায় ৫৬৭০ গ্রাম। তাহলে এবার ফাইনালি ১৮ কেজি দেওয়া খাবার থেকে আমরা কার্বন পাই ৫৬৭০ গ্রাম, যা প্রতিদিন আমরা খাবারের মাধ্যমে পানিতে প্রয়োগ করি। আবার অপরদিকে, যেহেতু আমরা ট্যাংকে ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে ৫৪০০ গ্রাম খাবার থেকে মোট প্রাটিন পাই (১৮০০০ গ্রাম এর ৩০% হিসেবে) ৫৪০০ গ্রাম। পুষ্টি বিজ্ঞান মতে মৎস্য খাদ্যের প্রোটিনে প্রায় ১৬% নাইট্রোজেন থাকে, এই হিসেবে নাইট্রোজেন পাওয়া যাবে ৫,৪০০ গ্রাম এর ১৬% হিসেবে আসে প্রায় ৮৬৪ গ্রাম, এই নাইট্রোজেন যা ক্ষতিকর এমোনিয়া হিসেবে প্রতিদিন পানিতে মিশে যায় । তাহলে আমাদের ট্যাংকে ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ ৩০ কেজি খাবার দিলে কার্বন ও নাইট্রোজেন পেলাম যথাক্রমে , • কার্বন : ৫৬৭০ গ্রাম • নাইট্রোজেন : ৮৬৪ গ্রাম। তাহলে এই ফিডে বিদ্যমান কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত দেখা যাচ্ছে,
কার্বন:নাইট্রোজেন= ৫৬৭০ঃ ৮৬৪ বা ৬.৫৬২৫ঃ১ , তাই মোটামুটি আমরা বলতে পারি ৩০% প্র্র্রোটিন হিসেব খাদ্যে বিদ্যমান C N Ratio (কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত) ৭:১। মাছের খাবার নির্বাচন করার সময় কোন খাদ্যে কি পরিমান কার্বহাইড্রেড আছে তা হিসেব করে দেখা উচিত। বিভিন্ন খাবারের গুনগত মানের কারনে অনেক সময় C N Ratio (কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত) সঠিক রাখা সম্ভব হয়না। তাই আপনার ট্যাংককে ফ্লক সঠিক রাখার জন্য C N Ratio (কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত) ১২ঃ১ থেকে ১৫ঃ১ অনুপাতে ব্যবস্থাপনা মেনে চলতে পারেন এতে মাছর মরার হার কম এবং উৎপাদনও ভাল হতে পারে।
কার্বন বের করা সূত্রঃ মাছের খাদ্য ৯০% সলিড/ শুষ্ক খাবার (১০% জলীয় বাষ্প বাদে) X এই খাদ্যের ৭০% অপচয় হয় অর্থাৎ মাছে শুধু ৩০% খাবার হজম হয় X এই খাদ্যের ৫০% (কার্বহাইড্রেডে ৫০% কার্বণ থাকে) নাইট্রোজেন বের করার সূত্রঃ মাছের খাদ্য X ৯০%(শুষ্ক খাবার ১০% জলীয় বাষ্প বাদে) X ৭০% (অপচয় হয় অর্থাৎ মাছে শুধু ৩০% খাবার খেতে পারে) X ৩০% (খাদ্যে প্রোটিনের পরিমান ৩০%) * ১৬% (প্রোটিনে প্রায় ১৬ ভাগ নাইট্রোজেন থাকে)
এবার দেখব TAN এর মান বের করে কিভাবে সিএন রেশিও বের করা যায়:
পদ্ধতি ১: TAN হল Total Ammonia Nitrogen. এই টোটাল অ্যামোনিয়ার ২টা অংশ থাকে একটা হল অ্যামোনিয়াম (NH4) আরেকটা হল অ্যামোনিয়া (NH3)। যাই হোক প্রথমেই অ্যামোনিয়া কিড দিয়ে ট্যান এর মান বের করে নিতে হবে। অনেকেই আবার এটাতে অ্যামোনিয়ার মান হিসেবে ধরে নেয়। যা ভুল। যাই হোক, ধরে নিলাম ট্যান এর মান আসল ২ পিপিএম/লিটার। (ppm=parts per million বা milligram per liter)। মানে ১লিটার পানিতে ২ পিপিএম ট্যান আছে। আমাদের কাছে যদি ১০০০০ লিটার পানির ট্যাংক থাকে, তবে ট্যান এর মান হবে ২*১০০০০=২০০০০ mg বা ২০ গ্রাম ট্যান। কার্বন সোর্স যোগ করা: এখানে আমরা যদি কার্বন এবং নাইট্রোজেন রেশিও হিসেব করি ১৫:১ তবে ২০ গ্রাম ট্যান রূপি অ্যামোনিয়াকে বা নাইট্রেুাজেনকে নি:শেষ করতে হলে আমাদের মিশাতে হবে ১৫*২০=৩০০ গ্রাম কার্বন। এখন দেখব এই পরিমান কার্বনের জন্য কত গ্রাম মোলাসেস যোগ করতে হবে। আমরা আগেই জেনেছি মোলাসেসে কার্বনের পরিমান শতকরা ২২ ভাগ। তার মানে ২২ গ্রাম কার্বন থাকে ১০০ গ্রাম মোলাসেস। তাহলে আমাদেরকে কার্বনের সোর্স হিসেবে মোলাসেস যোগ করে হবে (১০০/২*৩০০ = ১৩৬৪) যোগ করতে হবে ১৩৬৪ গ্রাম। আর কেউ যদি ১০:১ ধরে তবে কার্বন মিশাতে হবে ১০*২০=২০০ গ্রাম। আর এক্ষেত্রে কার্বন সোর্স হিসেবে মোলাসেস মিশাতে হবে ৯০৯ গ্রাম।
পদ্ধতি ২: এই পদ্ধতিতে আমাদের বের করতে হবে পানির পিএইচ, পানির তাপমাত্রা এবং tan এর মান। ধরে নিলাম পিএইচ মিটার দিয়ে আমরা পিএইচ এর মান পেলাম ৮.২, থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা পেলাম ২২ ডিগ্রী সে. আর ট্যান এর মান তো আছে আমাদের কাছে ২পিপিএম। এখন পিএইচ এবং তাপমাত্রার ফ্যাক্টর টেবিল থেকে আমরা পাব ০.০৬৭৬। (এই টেবিলে বাম পাশে থাকে পিএইচ মান আর উপরের দিকে থাকে তাপমাত্রা। চার্টে পিএইচ এর মান পেলাম ৮.২, তাপমাত্রার সংযোগ স্থালে যে মান পাওয়া যাবে)। অতএব সূত্রানুসারে আমরা অ্যামোনিয়া পাব ০.০৬৭৬ * TAN=০.০৬৭৬*২=১.৩৫২ পিপিএম। এই মানটা পেলাম আমরা ১ লিটারের জন্য। আমাদের ট্যাংকে পানি আছে ১০০০০ লিটার। সুতরাং ১০০০০ লিটার পানিতে আসল অ্যামোনিয়া পাব ১০০০০*১.৩৫২=১৩৫২০ মিলিগ্রাম বা ১৩.৫২ গ্রাম। কার্বন সোর্স যোগ করা: এখানে আমরা যদি কার্বন এবং নাইট্রোজেন রেশিও হিসেব করি ১৫:১ তবে ১৩.৫২ গ্রাম অ্যামোনিয়াকে নি:শেষ করতে হলে আমাদের চাষের শুরুতে কিছুটা মাত্রা বাড়িয়ে কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত (২০ঃ১) যদি মেনে প্রয়োগ করা হয় তাহলে তা হেট্রোট্রপিক ব্যাকটেরিয়ার বংশ বৃদ্ধি এবং ব্যাক্টেরিয়ার চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। তাই মাছ ছাড়ার শুরুতে যদি C N Ratio (কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত) ২০ঃ১ হিসেবে চিটাগুড় প্রয়োগ করি তাহলে সেটা আপনার জন্য পজেটিভ ফল বয়ে আনবে।
চাষকালীন সময়ে C N Ratio (কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত) ৬ঃ১ থেকে ১০ঃ১ অনুপাতে চিটাগুড় প্রয়োগ করতে হবে, তবে তা এমোনিয়া TAN এর উপর নির্ভর করে।
C N Ratio এর ব্যাপারে সাধারন কথায় বলা যায় আপনার পুকুরে যে পরিমান এমোনিয়া আছে আর দশ থেকে ১৫ গুণ কার্বন দিতে হবে আপনার ট্যাংককে এমোনিয়া মুক্ত করতে তথা ব্যাক্টেরিয়ার বংশ বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে, এই ভাবেই আপনি আপনার ট্যাংকে C N Ratio মেইনটেইন করতে পারবেন।
যারা নিয়ন্ত্রন করতে হিমশিম খাচ্ছেন তাদের জন্য পরামর্শঃ
মোলাসিস বা চিটা গুঁড়ের পরিবর্তে তার অর্ধেক পরিমান লাল চিনি বা আখের গুঁড় ব্যবহার করুন দ্রুত ফল পাবেন।
- সংগ্রহীত