06/07/2024
“কিভাবে আমি সফল ব্রিডার হলাম”- জহির মিনহাজ"
বিখ্যাত বাজেরিগার ব্রিডার জহির মিনহাজ ভাইয়ের লিখা একটি অসাধারন আর্টিকেল।
“কিভাবে আমি সফল ব্রিডার হলাম”
সুপ্রিয়,আমি তরুন পাখি পালকদের সাথে কিছু বিষয় শেয়ার করতে চাই। তোমরা খুব ভাগ্যবান। তোমাদের আছে সবচেয়ে ভালো মানের পাখি, খাঁচা, নেস্ট, ভিটামিনস, সারজিক্যাল সেক্সিং কৌশল, অন্যান্য ব্রিডারদের সাথে সম্পর্ক, ইন্টারনেট জগতে প্রবেশের সুবিধা, বই।
অতীতে আমাদের এইসব সুযোগ ছিল না। আমি আমার প্যারট ব্রিডিং এর উপর একটা আর্টিকেল লিখবো। যাই হোক, পৃথিবীটা তোমাদের জন্য উন্মুক্ত, মনকে প্রশস্ত কর, প্রচলিত ধারনার বাইরে চিন্তা কর, নতুন কৌশল খাটাও, পাখি পালনে ইতিবাচক হও, নিজের জ্ঞান অন্যদের সাথে ভাগ কর, কোন ব্রিডিং কৌশল লুকিয়ে রাখবে না, প্রশ্ন করতে লজ্জা কোরোনা, অন্য ব্রিডারদের হিংসা কোরোনা, অন্যদের থেকে কিছু আশা কোরোনা।নিজেকে পরিবর্তন করা খুব কঠিন কাজ কিন্তু তরুন পাখি পালকদের সাথে ভালো ব্যবহার কর। সবার জন্য রইলো শুভ কামনা।
শেষ কথা হল যেটা আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি, তুমি যতগুলা পাখির ঠিক ভাবে যত্ন নিতে পারবে ঠিক ততগুলো পাখি পালন কর। একটা জাত পছন্দ কর এবং সেটাতেই লেগে থাকো, সেটাতে বিশেষজ্ঞ হও, পৃথিবীতে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা কর। আল্লাহ তোমাদের সবার মঙ্গল করুক।
১ # কম বয়সী পাখি কেনো
যখন তুমি পাখি পালা শুরু করবে তখন কম বয়সী পাখি কিনবে। তাদের তোমার নিজের পরিবেশে বড় কর, তারা তোমার পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিবে, তোমার দেয়া খাবারে অভ্যস্ত হবে তবেই তারা আগত বছরগুলোতে তোমাকে সর্বোত্তম ফলাফল দিবে। আমি তোমাদের সাথে অস্ট্রেলিয়াতে প্রকাশিত একটি আর্টিকেল শেয়ার করতে চাই, তারা বিভিন্ন ফিঞ্চ ব্রিডারদের সাক্ষাতকার নেয় এবং দেখতে পায় যে, যারা নিজেদের খামারে পাখিকে বড় করে এবং ব্রিডিং করায় তারা সবচেয়ে বেশি সাফল্য লাভ করে। আমরা সাধারনত আমাদের প্রথম বাচ্চা বাজেরিগার বিক্রি করে দেই, কিন্তু তাদের নিজের কাছেই রাখো। তারাই তোমাকে সবচেয়ে বেশি ব্রিডিং ফলাফল দিবে।
২ # অন্য ব্রিডারদের সাহায্য কর
নতুন ব্রিডারদের সাহায্য কর। তাদের সাথে তোমার অভিজ্ঞতা শেয়ার কর, এতে আল্লাহ তোমাকে পুরস্কৃত করবেন। অন্যদের থেকে বেশি কিছু প্রত্যাশা কোরোনা। বন্ধু বানাও কিন্তু ব্যবসায়িক অংশীদার বানিওনা। কারন আমি দেখেছি অনেক অংশীদার আলাদা হয়ে যায়। তোমার ব্রিডিং কৌশল গোপন রেখোনা, তোমার ব্যর্থতা নিয়ে অন্যদের সাথে কথা বল। সহব্রিডারদের সাথে খাবার, ব্রিড, খাঁচা, ঔষধ নিয়ে কথা বলা খুব জরুরী।
৩ # নিয়মিত চেক
প্রতিদিন তোমার পাখিদের দেখতে যাও। প্রতিটা খাঁচার সামনে কিছু সময় কাটাও, কৌতূহলী হও, পর্যবেক্ষণ কর, দেখ তোমার পাখিরা খুশি আছে নাকি গা ফুলিয়ে এক কোণায় বসে আছে। যখন পাখির ঘরে ঢুকবে তখন কিছু নির্বাচিত শব্দ বারবার বলতে থাকো, এতে পাখিরা তোমার কন্ঠ চিনতে পারবে, তারা তোমাকে স্বাগতম জানাবে।
৪ # অন্যদের হিংসা কোরো না
পাখি পালনকে একটা সখ হিসেবে নাও, তোমার সহব্রিডাররা যদি খুব ভালো ব্রিডার হয় তাহলে তাদের হিংসা করোনা। তাদের নামে বদনাম করার বদলে তাদের থেকে শেখার চেষ্টা কর। তুমি সব জাতের সর্বোত্তম ব্রিডার হতে পারবে না। কিছু জাত তোমার সাথে খাপ খাবে আর কিছু খাবে না। হিংসা তোমাকে ধ্বংস করে দিবে। অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করার আনন্দ উপভোগ কর।
৫ # পরের দিন বলে কিছু নেই
আমি অনেক পাখি হারিয়েছি কারন আমি গতকাল তাদের অসুস্থ্য দেখেছিলাম অথবা অসুস্থ্যতার লক্ষন ছিল, যেটা আমি আগামীকাল দেখবো বলে মনে করেছিলাম। বিশ্বাস কর, সেই আগামীকাল আর আসেনি। তোমার অসুস্থ্য পাখিদের অতিদ্রুত যত্ন নাও, আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করোনা, আজকেই কর।
৬ # অলসতা
আবার আমি অনেক পাখি হারিয়েছি তাদের প্রতিদিন দেখতে না যাবার কারনে। তাদের খাবার-পানি পরীক্ষা করিনি, তাদের হাড়িতে নজর দেইনি, তাদের বাচ্চাদের খেয়াল করিনি, তাদের অস্বাভাবিক আচরনের প্রতি মনোযোগ দেইনি। তোমার পাখিদের প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে চেক করতে যাও। অলসতা করে এটা ভেবো না যে আমি কাল আমার পাখিদের দেখতে যাবো। আবারো বলছি, পাখি পালনে আগামীকাল কখনো আসবে না।
৭ # সাধারন জ্ঞান, বিবেচনা ও বুদ্ধি
আমি এখনও কিছু বিষয়ে সাধারন জ্ঞান অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু এতোদিনের অভিজ্ঞতা লাভের পর বুঝতে পেরেছি যে সাধারন জ্ঞানের মাধ্যমে কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনলে বা প্রয়োগ করলে পাখি পালনে বিস্ময় সৃষ্টি করা যায়।
৮ # নতুন কৌশল শেখো
দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আমরা ভীষনভাবে বিশ্বাস করি যে আমরা আমাদের জেষ্ঠ্য ব্রিডারদের কাছ থেকে সব কিছু শিখে ফেলেছি। নতুন কৌশল শেখার চেষ্টা কর, সেগুলো প্রয়োগ কর, সেগুলো নিয়ে পড়াশুনা কর, সবার সাথে শেয়ার কর। পাখিপালনের রীতির পরিবর্তন হয়েছে। আমি যদি নতুন ব্রিডারদের সাথে আমার জ্ঞানের তুলনা করি, তাহলে তারা অনেক বেশি জানে। তাদের জানার অনেক সুযোগ রয়েছে যেটা আমাদের তরুন বয়সে ছিলনা। আমি এটা বলছিনা যে, আমি সহ অন্য জেষ্ঠ্য ব্রিডারদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে কিন্তু যদি সেটা যুগোপোযুগী না হয় তাহলে যুগোপোযুগী করে নিতে হবে। আমি ইন্টারনেট কে সালাম জানাই যে এর কারনে আমি অন্যদের কাছ থেকে শিখতে পারছি। বই পড়, তোমার সহব্রিডারদের দেখতে যাও, আলোচনা কর, তাদের থেকে কিছু জানতে লজ্জা বোধ কোরোনা। বল যে আমি একটা ভুল করেছি, কিভাবে সেটা সংশোধন করা যায়। পাখি পালনে ইতিবাচক হও, নেতিবাচক চিন্তা বাদ দাও।
আমার একটা ইচ্ছার কথা আমি সবার সাথে শেয়ার করতে চাই। আমার ইচ্ছা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর চিড়িয়াখানাটি আমার হবে। আমার এখন মনে হয় বন্দী প্রজননের মাধ্যমে আমাদের বন্য প্রানী সংরক্ষণ করতে হবে। আমি যখন মারা যাবো, মানুষ আমাকে একজন “ভালো ব্রিডার” হিসেবে মনে রাখবে। আল্লাহ সবার মঙ্গল করুক।আমীন।
@ এই আর্টিকেল অনেকদিন আগের লেখা!আমি মনে করি এই লেখা পাখালদের জন্য ডায়মন্ড নির্দেশিকা, তাই শেয়ার করুন।