15/03/2021
কবুতর প্রেমিরা আসুন খাবার সম্পর্কে জানি:
"ধৈর্য্য সফলতার চাবিকাঠি"
(এখানে কবুতরের খাবারকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে)
খাদ্য:
আমরা যে সব বস্তু আহার এর মধ্যে যা দেহের [পুষ্টি] ও বৃদ্ধি সহায়ক এবং তাপশক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে তাকে খাদ্য বলে।
খাদ্যের প্রকারভেদ:
জীবদেহে খাদ্যের কার্যকারিতা অনুযায়ী খাদ্য কে দু'ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন-
দেহ-পরিপোষক খাদ্য : যে সব খাদ্য দেহের গঠন, বৃদ্ধি ও শক্তি উৎপাদনে সহায়কারী, তাদের দেহ-পরিপোষক খাদ্য বলে। যেমন : শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট, আমিষ বা প্রোটিন এবং স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট বা লিপিড।
দেহ-সংরক্ষক খাদ্য : যে সব খাদ্য দেহকে রোগ সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে, শক্তি উৎপাদনে সহায়ক নয়, তাদের দেহ-সংরক্ষক খাদ্য বলে। যেমন : খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, খনিজ পদার্থ বা মিনারালস।
খাদ্যের উপাদান:
খাদ্যে ছ'টি উপাদান থাকে, যথা- শর্করা, আমিষ বা প্রোটিন, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ, খনিজ লবণ এবং পানি।
১. শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট:
উপাদান : কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন—এই তিনটি উপাদান নিয়ে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট গঠিত। শর্করায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২:১ অনুপাতে থাকে।
উৎস : ধান বা চাল, গম, ভূট্টা, বাজরা, চিনা ইত্যাদিতে শর্করা পাওয়া যায়।
পুষ্টিগত কাজ :
দেহে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাপ শক্তি উৎপাদন শর্করার প্রধান কাজ।
২আমিষ বা প্রোটিন:
উপাদান : কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন সমন্বয়ে প্রোটিন গঠিত। অনেক সময় সালফার এবং ফসফরাসও প্রোটিনে থাকে। প্রোটিন-অণু অসংখ্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের সমন্বয়ে গঠিত হয়।
উৎস : মশুর, সবুজ মটর,সাদা মটর,রেজা, সকল ডাল জাতীয় খাবার, সয়াবিন ইত্যাদিতে প্রোটিন পাওয়া যায়।
পুষ্টিগত গুরুত্ব বা কাজ :
দেহের বৃদ্ধি, কোষ গঠন ও ক্ষয়পূরণ হল প্রোটিনের প্রধান কাজ।
তাপ শক্তি উৎপাদন।
দেহস্থ উৎসেচক, হরমোন ইত্যাদি সৃষ্টি করা।
অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করা হল প্রোটিনের অন্যতম কাজ।
৩.স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট:
উপাদান : কার্বন, হাইড্রোজেন, এবং অক্সিজেন নিয়ে স্নেহপদার্থ বা ফ্যাট গঠিত হয়। এখন অক্সিজেন অনুপাত শর্করা তুলনায় কম এবং শর্করার মত হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২:১ অনুপাতে থাকে না। ফ্যাট প্রকৃতপক্ষে অ্যাসিড এবং গ্লিসারলের সমন্বয়ে গঠিত এস্টার বিশেষ।
উৎস : বাদাম, সরিষা, কুসুম ফুলের বীজ, সূর্যমূখী বীজ ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ ফ্যাট থাকে।
পুষ্টিগত গুরুত্ব বা কাজ :
তাপ শক্তি উৎপন্ন করা ফ্যাট জাতীয় খাদ্যে প্রধন কাজ॥
ফ্যাট প্রানিদেহের তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ফ্যাট মেদরুপে ভবিষ্যতের খদ্যের উৎস হিসাবে সঞ্চিত থাকে।
ফ্যাট ভিটামিনকে দ্রবীভূত রাখে এবং এদের শোষণে সাহায্য করে।
ফ্যাট যকৃৎ থেকে পিওরস এবং অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসরণে সাহায্য করে।
স্নেহপদার্থ মলাশয় ও পায়ু পিচ্ছল করে মল নিঃসরণে সহায়তা করে।
কোলেস্টেরল নামক ফ্যাট থেকে ভিটামিন-ডি, ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরণ নামক হরমোন উৎপন্ন হয়।
৪.খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন :
যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারণ খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে, তাকে ভিটামিন বলে।
শ্রেণীবিভাগ : দ্রাব্যতা অনুসারে ভিটামিনগুলিকে দুভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
১. তেল বা স্নেহপদার্থে দ্রবনীয় ভিটামিন :যে সব ভিটামিন তেল বা স্নেহপদার্থে দ্রবীভূত হয়, তাদের স্নেহপদার্থে দ্রবনীয় ভিটামিন বলে। যথা: A, D, E, K।
২. জলে দ্রবনীয় ভিটামিন :যে সব ভিটামিন জলে দ্রবীভূত হয়, তাদের জলে দ্রবনীয় ভিটামিন বলে॥ যথা: B, C এবং P।
উৎস : ভিটামিন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, প্রানীদের যকৃৎ, মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল, মাখন, উদ্ভিজ্জ তেল, বাদাম, ঢেঁকিছাটা চাল, লাল আটা, ছোলা, মুগ, বীট, গাজর, মটরশুঁটি, পালংশাক, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লেবু, আম, আমলকি, আপেল ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। ভিটামিনের এই সব উৎসের মধ্যে দুধ, ডিম, পালংশাক, টমেটো, মটরশুঁটি, কলা, আপেল ইত্যাদিতে বেশীর ভাগ ভিটামিন পাওয়া যায়। ভিটামিন A এবং D এর উৎস মোটামুটি এক, যেমন : কড্, হ্যালিবাট যকৃত নিঃসৃত তেল (লিভার অয়েল), মাখন, দুধ, ডিম,গাজর, বাঁধাকপি, ইত্যাদি। নারিকেল, সরষে, রেড়ী বীজ, তুলা বীজ ইত্যাদিতে উদ্ভিজ্জ ফ্যাট এবং মাখন, ঘি, চর্বি ইত্যাদিতে প্রাণিজ ফ্যাট থাকে। সাধারন উত্তাপে যে সমস্ত ফ্যাট তরল অবস্থায় থাকে, তাদের তেল বলে।
(এই ভিটামিন যুক্ত খাবারগুলো কবুতরকে খাওয়ানো যায়না তাই প্রতিমাসেই তিন দিন ভালো মানের মাল্টিভিটামিন খাওয়াতে হয়)
পুষ্টিগত গুরুত্ব বা কাজ :
তাপ শক্তি উৎপন্ন করা ফ্যাট জাতীয় খাদ্যে প্রধান কাজ।
ফ্যাট প্রাণীদেহের তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ফ্যাট মেদরুপে ভবিষ্যতের খাদ্যের উৎস হিসাবে সঞ্চিত থাকে।
ফ্যাট A, D, E, K ভিটামিনকে দ্রবীভূত রাখে এবং এদের শোষণে সাহায্য করে।
ফ্যাট যকৃৎ থেকে পিত্তরস এবং অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসরণে সাহায্য করে।
স্নেহপদার্থ মলাশয় ও পায়ু পিচ্ছিল করে মল নিঃসরণে সহায়তা করে।
৫.খনিজ লবণ:
খনিজ লবণ হল খাদ্য উপাদন এরা শক্তি সরবরাহ করে না। খনিজ লবণ হল অজৈব।
খনিজ লবণের প্রয়োজনীয়তা-
১৷ পুষ্টি - জীব দেহের স্বাভাবিক পুষ্টির জন্য খনিজ লবণের প্রয়োজনীয়তা আছে।
২৷ বৃদ্ধি - জীব দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খনিজ লবণের প্রয়োজন।
৩৷ রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা - রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অর্জনের জন্য খনিজ লবণের গ্রহণের প্রয়োজন আছে।
৬. পানি:
পানি খাদ্যের একটি উপাদান। মানবদেহের জন্য পানি অপরিহার্য। দেহের গঠন এবং অভ্যন্তরীণ কাজ জল ছাড়া চলতে পারে না। আমাদের দৈহিক ওজনের ৬০-৭০% পানি। আমাদের রক্ত মাংস, স্নায়ু, দাঁত, হাড় ইত্যাদি প্রতিটি অঙ্গ গঠনের জন্য পানি প্রয়োজন। দেহকোষ গঠন ও কোষের যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো পানি ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
আমাদের করনীয়:
খাবার: গম 30%, ভুট্টা ভাঙা/ পর্পকর্ণ 20%, বাজরা 10% রেজা+সবুজ মটর+সাদা মটর+ডাবলি+মশুর 30%, সরিষা+সূর্যমূখীবীজ+কুসুম ফুলের বীজ 10% মিশিয়ে খাদ্য তৈরী করুন। (শীতে তৈলবীজ 10%ও গরমে তৈলবীজ 5%)
গ্রিট:
ইটের গুড়া20%,লাইমস্টোন20%, কাঠ কয়লা 2%, ডিমের খোসা ও ঝিনুকের গুড়া 50%(সিদ্ধ করে শুকানো), আয়োডিন লবন 1%, বিট লবন 1%, হলুদ গুড়া1%, দারুচিনি গুড়া 1% , নিমপাতা গুড়া 1% , সজিনা পাতা গুড়া 2% মিশিয়ে গ্রিট তৈরী করে কবুতরকে খেতে দিন ।
ভিটামিন:
বেশিরভাগ ভিটামিন যুক্ত খাবারগুলো কবুতরকে খাওয়ানো যায়না তাই প্রতিমাসেই তিন দিন ভালো মানের মাল্টিভিটামিন খাওয়াতে হয় এতে ভিটামিন এর অভাব জনিত রোগ গুলো হয়না।
পানি: পরিস্কার পাত্রে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করুন।
(সংগ্রহিত)