20/06/2023
উআজকে মধ্যরাতের জ্ঞান-
ইনস্টাগ্রামে একটা ভিডিও দেখলাম। একজন তার পোষ্যকে(কুকুর) সকালের ব্রেকফাস্টে আলুর পরোটা খাওয়াচ্ছে। ভালো কথা। আলুর পরোটায় গাজর,আলু,বিনস,নুন দিয়ে ফিলিং বানানো হল আর নরমাল আটার খোল। তারপরে সেটাকে সেঁকে, হাফ স্পুন ঘী মাখিয়ে দই-য়ের সাথে সার্ভ করা হল।
আমার ইন্টারেস্ট থাকে কমেন্ট সেকশনে, সেখানে অনেকেই দেখলাম বিরোধ করেছে, নুন দেবেন না,ঘী দেবেন না বলে। সেখানে, পে'জের ওনার, অর্থাৎ যে খাওয়াচ্ছে, সে যুক্তি দিচ্ছে, ঘী খাওয়ানো ভালো কারণ, কোকোনাট অয়েল খাওয়ানো যায়, নুন দেওয়া ভালো কারণ নাহলে সোডিয়াম ডেফিসিয়েন্সি হয়। এবং, যদি কুকুরদের এটা-ওটা না-ই দেওয়া যায়,তাহলে রাস্তার কুকুরেরা কিকরে সবকিছু খেয়ে দিব্যি ১৪-১৫বছর বেঁচে থাকে।রিতীমত সবার সাথে ঝগড়া করছে যে সে কতটা ঠিক। এবং তার যুক্তি কতটা অকাট্য।
পুরোটাই দেখলাম, চিন্তা করলাম। এই প্রসঙ্গে এক সমুদ্র কথা বলা যায়। আজকে খুব শর্টে কিছু কথা বলি। পয়েন্ট ওয়াইজ-
১. টেবিল সল্ট দেওয়ার প্রয়োজন পোষ্যদের নেই।
নুন মানুষের মতনই, পশুদের জন্যই খুবই ইম্পর্টেন্ট। কিন্তু সেটা ওরা ওদের রোজকার ডায়েটের মাছ/মাংশ/ডিম থেকে পেয়ে যায়। এবং সেটাই সবথেকে সেইফ অপশন। টেবিল সল্ট সম্পূর্ণ এভয়েড করুন। ক্যানাইন/ ফেলাইন ও.আর.এস খাওয়ান নিজেদের বাচ্চাদের। ডায়েট সুষম রাখুন। তাহলেই আর কিছুর ডেফিশিয়েন্সি হবেনা।
টেবিল সল্ট খাওয়া মানুষের জন্যই যথেষ্ট ক্ষতিকর। পোষ্যদের দিয়ে নিজের আর ওদের চাপ বাড়াবেন না।
প্রয়োজনে নিজের ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
২. নরমাল আটা বা ময়দা, গ্লুটেনের একটা পাওয়ারহাউস বলা চলে। গ্লুটন প্রথমত সকলে সহ্য করতে পারে না, এবং এর দ্বারা যে ক্ষতি হয় সেটা সুদূরপ্রসারী।
তাই আটা বা ময়দা এভয়েড করে ওটসের আটা বানান। দিন, ওটস কমপ্লেক্স কার্ব। তবে কোনোওকিছুই অতিরিক্ত ভালো না। যা দেবেন, সেটা মডারেশনে দেওয়াই ভালো। ওরা কাঁচা মাছ,মাংশ খাওয়ার জীব। আমরা নিজেদের সুবিধার্ধে এমন অনেক কিছু ওদের দিই, যার প্রয়োজন ওদের শরীরে নেই। কিন্তু তবু, এসব দেওয়ার কি খুব প্রয়োজন?
৩. অনেকেই হয়ত জানে না। কিন্তু ঘী বা নারকেল তেল কিন্তু কুকুর দের জন্য খুব দারুন একটা জিনিস। কিন্তু এগেইন, মডারেশনে, নাহলে সুদূরপ্রসারী ফলভোগ করতে হবে। এমনকি সবাই ঘী বা নারকেল তেল সহ্য করতে পারে না, সুতরাং খুব সাবধান।
কতটা দিতে হবে, সপ্তাহে কতবার, কতটা এটা একমাত্র আপনার ভেটই আপনাকে বলতে পারে। আপনার বাচ্চার শরীরের অবস্থা অনুযায়ী।
এরকম ভিডিওতে ইন্টারনেট এখন ভর্তি। কাওকে কিছু করতে দেখেই আপনি প্রভাভিত হবেন না দয়া করে। সবসময় নিজের বাচ্চার মুখে কিছু তুলে দেওয়ার আগে, নিজে রিসার্চ করুন,ভেট কনসাল্ট করুন। আপনি যা নিজের বাচ্চার বা নিজের পেটে দিচ্ছেন, তার ফল যে সুদূরপ্রসারী হতে পারে সেটা আমরা জানি। সুতরাং, যা করবেন, চিন্তা করে। আর যা কিছু ওদের দেওয়া যায়, তাইই ওদের দিতে হবে, এমন মানে নেই।
আর নিজের বাড়ির পোষ্য, যে ২৪ঘন্টা এসিতে থাকে আর চেয়ারে বসে আলুর পরোটা খায়, ভ্যাক্সিন, ডিওয়ার্মড হয়, তার সাথে রাস্তার ষ্ট্রে ডগের তুলনা যে করে সে পাগল।
নেহাত ইন্সটাতে হ্যাজ নামানো যায় না, নাহলে সেই ব্যক্তিকে একটা প্রশ্ন করতাম, যাদের মাথার ওপরে ছাদ নেই, ফুটপাতে বা স্টেশনে থাকে, তারা আর আপনার বাড়ির বাচ্চা কি সেইম? ব্রেনটা ইউস না করে করে যে ঝুলগুলো পরেছে, সেগুলো ঝেড়েঝুড়ে একটু ব্রেনটাকে খাটিয়ে দেখুন, এই সহজ ব্যাপারটা অবশ্যই মাথায় ঢুকবে।
একটা অপেক্ষাকৃত ডগ-ফ্রেন্ডলি আলুর পরোটার রেসিপি দিয়ে গেলাম(এসব না খাওয়ালে এমন কিচ্ছু ক্ষতি হবেনা ওদের)-
সামগ্রী- ওটসের আটা(ওটস তাওয়ায় হাল্কা ড্রাই-রোস্ট করে গুঁড়িয়ে নিন),মিষ্টি আলু/আলু-গাজর-ফ্রেশ মটরশুঁটি (আলু/মিষ্টি আলু,গাজর,কুমড়ো ইত্যাদি সবজি আপনার বাচ্চা খেতে পারলে তবেই, যদি ডাক্তার পারমিশন দেন),
রেসিপি- ওটসের আটা জল দিয়ে মেখে নিন, সবজি সব হাল্কা ভাপিয়ে ম্যাশ করে ফিলিং বানান। টেস্টমেকার কিছু দেওয়ার দরকার নেই,পাম্পকিন পাউডার বা হোমমেড চিকেন পাউডার(চিকেন ডিহাইড্রেট করে পাউডার বানানো,প্রিসার্ভেটিভ ছাড়া) দিতে পারেন।
আটার লেইতে ফিলিং ভরে পাতলা বেলে সময় নিয়ে সেঁকে নিলেই রেডী।
বেস্ট হবে বাড়িতে পাতা দইয়ের সাথে পেয়ার করলে। আবার শশা,বিট দিয়ে রায়তাও বানিয়ে দিতে পারেন। সাথে অনেকটা ফ্রেশ জল।
* ঘী মাখানোর পরামর্শ রেসিপিতে দিলাম না, ডাক্তার এল্যাও করলে পরিমাণমতন মাখিয়ে নিতে পারেন।
বি.দ্র- ছবিতে বেগমের জন্য বানানো ওভারনাইট ওটস। এই বাটিটা অবশ্য আমার, বেগমের থেকেই নিয়ে বেশী করে ফল মিশিয়েছি।
বেগমকে দু'রকমের মিষ্টি ফল একসাথে আমরা কখনই দিই না। ও শুধু আম দিয়ে মাখা খেয়েছে।