10/09/2024
যদি আমরা সত্যিকারের দৃশ্যমান পরিবর্তন (সংস্কার) চাই, সাথে নিজেদেরও পরিবর্তন করতে হবে,
সৎ, যোগ্য, দরদী, বুদ্ধিমান, জবাবদিহিতার সদিচ্ছা সম্পন্ন মানুষের যে বড্ড অভাব, হোক সেটা নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের বা সাধারণ পর্যায়ে,
তা আমাদের দেশের দিকে তাকালেই প্রতীয়মান হয়।😢
--------------------- ---------------------------------------------
বাঙালি যখন হেলিকপ্টার বানায়, আমি তখন খুবই আগ্রহ নিয়ে ব্যাপারটা দেখি।
প্রথম হেলিকপ্টার বানাতে দেখি বছর দশেক আগে। খুলনা বা বাগেরহাট বা অন্য কোনো প্রত্যন্ত এক গ্রামে, এক কিশোর হেলিকপ্টার বানিয়েছেন। সেটা নিয়ে লোকাল মিডিয়ায় তখন সাংঘাতিক হৈ চৈ। একটা টেম্পুর মাথায় সিলিং ফ্যান উল্টা করে লাগানো হয়েছে। সুইচ দিলে সেই সিলিং ফ্যান ঘুরছে। টেম্পুর গায়ে লাগানো হয়েছে বাংলাদেশ বিমানের লোগো। লোগোর পাশে পরিষ্কার লেখা : বাংলাদেশ হেলিকপ্টার, মেকার: হানিফ।
হাজার হাজার মানুষ সেটা দেখতে এসেছে। সাংবাদিকরা আবেগঘন গলায় সেই হেলিক্পটারের বর্ণনা দিচ্ছে। ফেসবুকে সেই ভিডিও শেয়ার দিচ্ছেন লাখ খানেক মানুষ। সবার কথা একটাই, বাঙালি আসলে মেধাবী। শুধু বাংলাদেশে জন্মানোর কারণে তার মেধার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না। ইউরোপ আমেরিকা হলে এই বাঙালি ফাটিয়ে দিতো।
সর্বশেষ হেলিকপ্টার বানানো দেখলাম দিন তিনেক আগে। স্টিলের রড দিয়ে হেলিকপ্টারের মতো একটা বডি বানানো হয়েছে। মাথার উপর দুই ব্লেডের পাখা। হেলিকপ্টারের মেকার নিজেই পাইলটের সিটে বসে সুইচ দিয়ে পাখা চালু করলেন। হাজার হাজার মানুষ হাততালি দিলো। সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করলেন, হেলিকপ্টারে বসার সিট একটা কেন?
পাইলট কাম হেলিকপ্টার মেকার উত্তর দিলেন, টাকার অভাবে একটা সিট রাখছি। সরকারি সাহায্য পেলে দশ সিট বসাতে পারবো।
ভিডিওতে হাজারো বাঙালির কমেন্ট, ইউরোপ আমেরিকা হলে ... শুধু বাংলাদেশ বলে আমরা আগাতে পারছি না ...
তবে এবার নতুন ধরণের কিছু কমেন্ট চোখে পড়লো। একজন লিখেছে, প্রায়ই দেখি আপনারা হেলিকপ্টার বানান। কিন্তু এইসব হেলিকপ্টার উড়ে না ক্যান? বিষয়টা কী?
আসল প্রশ্ন এটাই। হেলিকপ্টার উড়ে না ক্যান। দেখতে হেলিকপ্টারের মতো, উপরে পাখাও ঘুরে, বডির গায়ে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা হেলিকপ্টার। তবুও কেন এইসব হেলিকপ্টার উড়ে না ???
বাংলাদেশে যখন কেউ সংস্কারের কথা বলে, তখন আমার এইসব হেলিকপ্টারের কথা মনে পড়ে।
সংস্কারের কথা প্রথম জোরেশোরে শুনি এক এগারোর সময়। দেশে ব্যাপক সংস্কার আনা হবে। বিচার বিভাগ পৃথক হবে। স্বাধীন জুডিশিয়াল হবে। হ্যান হবে, ত্যান হবে। শেষমেষ যেটা হলো, সেটা হচ্ছে একটা হেলিকপ্টার। বাংলা হেলিকপ্টার। এই বস্তুর ঘুরন্ত পাখা আছে, বডি আছে এমনকি লেখাও আছে যে এই যন্ত্রটি হেলিকপ্টার। কিন্তু এটি উড়ে না।
আমাদের অনেকেরই ধারণা, সিস্টেম বদলালেই বোধহয় পরিবর্তন আসে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা যারা বড় হয়েছি, তারা জানি, শুধু সিস্টেম দিয়ে কোনো পরিবর্তন আসে না। ভালো সিস্টেমের মধ্যে ভালো মানুষ, যোগ্য মানুষ, সৎ, বুদ্ধিমান ও দরদী মানুষ দরকার।
ষোল বছর পর আবারো সংস্কার শব্দটা উজ্জ্বল হয়ে জাতির সামনে এসেছে। এবার নাকি আমূল সংস্কার হবে। এরই দুই মাস পার হয়েছে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, আমি এবারো জোরেশোরে একটা হেলিকপ্টারের নির্মাণের আয়োজন দেখছি। আমি দুঃখিত এই কথাটি বলার জন্য। সত্যি দুঃখিত।
আপনাদের নিয়ত নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আপনারা আন্তরিকতা নিয়েও আমার কোনো দ্বিধা নেই। আপনাদের অনেককেই আমি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি।
শুধু এই পছন্দের তাগিদে বলি। আর হেলিকপ্টার বানায়েন না।
এই দেশের মানুষরা ক্লান্ত। তারা সত্যিকারের ম্যাজিক চায়। সত্যিকারের হেলিকপ্টার চায়, যেটা সত্যি সত্যি উড়ে।
This country needs to fly.
- আসিফ এন্তাজ রবি