29/05/2022
গরুর জাত উন্নয়নে কৃত্রিম প্রজননের গুরুত্ব, সমস্যা ও প্রতিকার।
কৃত্রিম প্রজননের গুরুত্ব*
বর্তমানে সারা বিশ্বে গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের জন্য যেসব পদ্ধতি আছে তার মধ্যে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি বহুলভাবে প্রচলিত। গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ছাড়া তার উৎপাদন বৃদ্ধি ও গুণগতমান পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। বংশগত কারণে গাভী নির্দিষ্ট মাত্রায় দুধ উৎপাদন করে । শুধুমাত্র খাদ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। বেশি উৎপাদশীল জাতের ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ করে গাভীকে প্রজনন করা হলে উন্নত গুণাবলী তার বাচ্চার দেহে সঞ্চারিত হয়। উন্নত দেশ থেকে ষাঁড়ের পরিবর্তে উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ করে এদেশে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন করার একমাত্র মাধ্যম কৃত্রিম প্রজনন। বর্তমানে আমদের দেশেও এ পদ্ধতি চালু আছে। গৃহপালিত পশুর ওপর মানুষের নির্ভরশীলতার ইতিহাস অতি প্রাচীন হলেও পশুর জাত উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতার ইতিহাস খুব প্রাচীন নয়। সর্ব প্রথম আরব দেশে ঘোড়ায় কৃত্রিম প্রজননের সূত্রপাত হয়। ইটালীর একজন বিজ্ঞানী ল্যাজানো স্প্যালানজানী সফল কৃত্রিম প্রজননের আবিস্কারক। এ দেশে গাভীর জাত উন্নয়নের জন্য ১৯৩৬ সালে বৃটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড লিনলিথগো উত্তর পশ্চিম ভারতীয় অঞ্চল থেকে কিছু হারিয়ানা ষাঁড় সংগ্রহ করে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঢাকা অঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেছিলেন। ত্রিশের দশকে সিলেটের টিলাগড় এবং তেজগাঁয়ে শাহিওয়াল, সিন্ধি ও থারপারকার জাতের গাভী ও ষাঁড় দ্বারা ২টি দুগ্ধ খামার স্থাপিত হয়। তখন থেকেই বাংলাদেশে গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের সূচনা হয়। বাংলাদেশে ১৯৫৮ সালে ৩টি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কৃত্রিম প্রজনন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়ঃ
* উন্নত মানের যাঁড়ের পরিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
* যৌন রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ।
* সহজ উপায়ে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন করা ।
কৃত্রিম প্রজননের সুবিধা
* একটি ষাঁড় থেকে একবার সংগৃহীত বীজ দ্বারা ২০০-৬০০টি গাভীকে প্রজনন করানো যায়। ফলে ষাঁড়ের ব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। একটি ষাঁড়ের সারা জীবনের সংগৃহীত বীজ দ্বারা এক লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ গাভীকে প্রজনন করানো সম্ভব।
* অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উন্নত জাতের ষাঁড় নির্বাচন করা যায়।
* উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীজ দ্বারা অতি দ্রুত এবং ব্যাপকভিত্তিতে উন্নত জাতের গবাদিপশু উৎপাদন করা সম্ভব।
* এ পদ্ধতিতে শুক্রাণুর গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়।
* নির্বাচিত ষাঁড়ের বীজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনমত যে কোনো সময় ব্যবহার করা যায়।
* ভিন্ন ভিন্ন জাতের গবাদিপশুর মধ্যে প্রজনন ঘটিয়ে সংকর জাত সৃষ্টি করা যায়।
* প্রয়োজন হলে বিদেশ থেকে উন্নত জাতের ষাঁড়ের পরিবর্তে অল্প খরচে ষাঁড়ের বীজ আমদানি করা যায়।
* অনুন্নত ষাঁড় এবং অপ্রয়োজনীয় ষাঁড় বাতিল করতে সুবিধা হয়।
* ষাঁড়ের জন্মগত ও বংশগত রোগ বিস্তার প্রতিরোধ করা য়ায়।
* প্রজনন কাজে ব্যবহারের জন্য বাড়তি ষাঁড় পালনের প্রয়োজন হয় না।
* যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে কৃত্রিম প্রজনন করা যায়।
* কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে কম খরচে অনেক বেশি গাভীকে পাল দেয়া যায়।
* যৌন রোগের সংক্রমণ রোধ করা যায়। প্রাকৃতিক উপায়ে প্রজননের সময় বিভিন্ন যৌন রোগ যেমন- ব্রুসেলোসিস, ভিব্রিওসিস, ট্রাইকোমনিয়াসিস, ইত্যাদি মারাত্মক রোগসমূহ ষাঁড়ের মাধ্যমে আক্রান্ত গাভী থেকে অন্যান্য গাভীর মধ্যে সংক্রামিত হতে পারে।
* গাভীর জন্মগত ত্রুটি কিংবা রোগ-ব্যাধি থাকলে তা নির্ণয় করা সম্ভব ও সহজ হয়।
* প্রজনন ক্রিয়ায় অক্ষম ষাঁড় থেকে বীজ সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করা যায়।
* ষাঁড় ও গাভীর দৈহিক অসামঞ্জস্যতার কারণে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে প্রজননের সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।
* যে সমস্ত গাভী ষাঁড়কে ওপরে উঠতে দেয়া পছন্দ করে না সে সমস্ত গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে পাল দেয়া যায়।
* উন্নত পালন পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক পরিসংখ্যান রাখা যায়।
কৃত্রিম প্রজননের সীমাবদ্ধতা
=> সুষ্ঠুভাবে প্রজনন করানো, বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হয়।
=> গাভীর উত্তেজনা কাল সুষ্ঠুভাবে নির্ণয় করতে হয়।
=> প্রজননের জন্য রক্ষিত ষাঁড়ের বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন হয়।
=> ষাঁড় যাতে যে কোনো ধরনের যৌন রোগ থেকে মুক্ত থাকে সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হয়।
=> গর্ভবতী গাভীকে ভুলক্রমে জরায়ুর গভীরে প্রজনন করালে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
=> কৃত্রিম প্রজননের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি।
=> কৃত্রিম প্রজনন কাজের সহায়ক গবেষণাগারের প্রয়োজন হয়।
কৃত্রিম প্রজননের নিয়মাবলী
=> ডাকে আসা বা গরম হওয়া গাভী/বকনাকে ট্রাবিস বা খাঁচার মধ্যে আবদ্ধ করতে হবে।
=> গাভী/বকনার যোনীদ্বার ও পার্শ্ববর্তী স্থান পরিষ্কার করতে হয়।
=> হাতে হ্যান্ড গ্লাভস্ পরতে হবে।
=> গ্লাভস পরা হাত গাভীর মলদ্বারের ভেতর প্রবেশ করাতে হবে।
=> মলদ্বারে হাত ঢুকিয়ে যোনীপথ ও জরায়ুগ্রীবা খোলা কিনা সনাক্ত করতে হবে।
=> যোনীপথের ওপরের দেয়াল বরাবর অন্য হাত দ্বারা “এআই গান” প্রজনন অঙ্গে প্রবেশ করাতে হবে। যোনীপথের নীচেই মূত্রনালীর মুখ দিয়ে যেন এআই গান না ঢুকে সেদিকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
=> মলদ্বারে প্রবিষ্ট হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল জরায়ুগ্রীবা বা সার্ভিক্সের মুখে রাখতে হয় এবং এই গানসহ অন্য হাত জরায়ু গ্রীবার খোলা মুখ দিকে ঢুকাতে হয়। এআই গান জরায়ু গ্রীবার (সার্ভিক্সের) মধ্যে সহজভাবে প্রবেশ করলে বুঝতে হবে তৃতীয় রিং পার হয়েছে। এ সময়ে এআই গান পেছনে টেনে তৃতীয় রিংয়ের মাথায় স্থাপন করতে হয়। এরপর আস্তে আস্তে পিস্টনে চাপ দিয়ে বীজ তৃতীয় রিংয়ের ভেতর প্রবেশ করাতে হয়।
* কোনো ক্রমেই পিস্টনে জোরে চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়।
* জরায়ু শিং এ বা খুব গভীবে প্রবেশ করানো হলে গর্ভধারণের হার কমে যায়।
* বীজ প্রবেশ করানোর পর পিস্টনের ওপর চাপ রেখে এআই গান বের করে আনতে হবে।
* এআই গান থেকে এআই সীথ আলাদা করতে হবে এবং সিমেন স্ট্র বের করে ফেলতে হবে।
* স্ট্র বের করার পর স্ট্র-এর গায়ে লেখা তথ্যাবলী এআই কার্ডে লিখতে হবে এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
* পুনরায় প্রজনন করার পূর্বে এআই গান ও হ্যান্ড গ্লাভস্ পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
কৃত্রিম প্রজনন ফলপ্রসূ না হওয়ার কারণ
দ্রুত জাত উন্নয়নে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির বিকল্প নেই। ভালো জাতের বাছুর পাওয়ার বাসনা থেকেই কৃষক/খামারীদের মাঝে কৃত্রিম প্রজনন এতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং মাঠপর্যায়ে এটা সম্প্রসারিত হয়েছে। তবে কৃত্রিম প্রজননের ক্ষেত্রে একই বকনা / গাভীকে বার বার প্রজনন করানোর মতো সমস্যাও হয়। দেখা গেছে, কৃত্রিম প্রজননের চেয়ে প্রাকৃতিক প্রজননের ক্ষেত্রে পুনরায় প্রজনন করার হার কম এবং গর্ভধারণের হারও বেশি। বর্তমানে মাঠপর্যায়ে কৃষক / খামারীগণ এক বা দু’বার কৃত্রিম প্রজননে ভালো ফল না পেয়ে প্রাকৃতিক প্রজনন করে সফল হচ্ছেন। ফলে আমাদের দেশের গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কৃত্রিম প্রজননে অনেক সময় গর্ভধারণের হার কম হওয়ার কারণসমূহ নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা করা হলো।
প্রধানত ৫ টি কারণে গাভী গর্ভধারণ করে না। সেগুলো হলঃ
১। বীজের গুণাবলী (Semen quality)ঃ বীজ ভালো না হলে যেমন ক্ষেতে ফসল ভালো হয় না তেমনি বীজ ভালো না হলে বাচ্চা উৎপাদনের হারও তেমন ভালো হয় না।
* মৃত শুক্রাণুযুক্ত বীজ ব্যবহার।
* দুর্বল শুক্রাণুযুক্ত বীজ ব্যবহার।
* স্ট্র বা বীজ ভায়ালের মধ্যে প্রয়োজনের তুলনায় শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকা।
* বীজের পরিমাণ কম দেয়া।
* অনুর্বর ষাঁড়ের বীজ ব্যবহার।
* বীজ পরীক্ষা না করে ব্যবহার।
* জীবাণু দ্বারা শুক্রাণু সংক্রামিত হওয়া।
* বীজের গুণগতমান সঠিক না থাকা।
২। সিমেন স্ট্র/ ভায়াল
* ত্রুটিপূর্র্ণভাবে স্ট্র বা ভায়াল পরিবহন।
* ত্রুটিপূর্ণভাবে স্ট্র / ভায়াল সংরক্ষণ
* ক্রটিপূর্ণভাবে সিমেন ক্যান থেকে স্ট্র বের করা।
* সিমেন ক্যানে লিকুইড নাইট্রোজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া।
* সিমেন ক্যানের ঢাকনির সাথে সংলগ্ন লাল সিলের ত্রুটি।
* হিমায়িত বীজ ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতিতে গলানো (thawing)।
* তরল বীজ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ফ্রিজে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ না থাকা।
৩। প্রজননকারী
* প্রজননকারীর অনভিজ্ঞতা।
* ত্রুটিপূর্ণ ও অদক্ষভাবে প্রজনন করা।
* প্রজনন অঙ্গের ভেতর ভুল স্থানে শুক্রাণু স্থাপন।
* গাভীর ইস্ট্রাস বিষয়ে ভুল ধারণা।
* প্রজননের পর গাভীকে বিশ্রাম না দেয়া।
৪। গাভী
=> গাভী সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া।
=> যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়া।
=> জননাঙ্গে যে কোনো প্রকারের প্রদাহ থাকা।
=> অনিয়মিত ঋতুচক্র।
=> পুনঃপুনঃ গরম হওয়া ও গরম হওয়ার ভ্রান্ত লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া।
=> হরমোন নিঃসরণের অভাব।
=> হরমোন নিঃসরণে ভারসাম্যহীনতা।
=> অপ্রকাশিত/নীরব ইস্ট্রাস (গরম হওয়া)।
=> অধিক বয়স।
=> পুষ্টির অভাব।
৫। প্রজননের সময়
=> বকনা / গাভী ডাকে আসার ১২-১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজনন না করা।
=> ত্রুটিপূর্ণ গরমের লক্ষণ চিহ্নিত করা।
=> প্রজনন ব্যবস্থাপনা পালন না করা।
=> সকালে গরম হলে সকালেই প্রজনন করানো।
=> বিকালে গরম হলে ওই দিন বিকালেই প্রজনন করানো।
=> প্রজননের জন্য উপযুক্ত সময় না মানা।
বর্ণিত ৫টি কারণে বকনা বা গাভী গরম হওয়ার পর প্রজনন করালেও গর্ভধারণে ব্যর্থ হয়। এছাড়া আরো অনেক কারণ আছে যে কারণে কৃত্রিম প্রজনন ফলপ্রসু হয় না। তবে বীজের গুণাবলী, সিমেন স্ট্র বা ভায়াল, প্রজননকারী ও গাভীর যেসব ত্রুটির কথা বলা হয়েছে তা যথাযথভাবে সমাধান করা হলে গর্ভধারণের হার বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। কারণ হলো-শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর যৌথ মিলনে জাইগোট তৈরি হয় যা হয়ে থাকে স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের ফেলোপিয়ন টিউবের ৪টি অংশের একটি নির্দিষ্ট অংশে। অর্থাৎ জাইগোট তৈরি হয় গাভীর এম্পুলা বা এম্পুলো ইস্তমাস জাংশনে। আর বকনা বা গাভীর ডিম্বাণুক্ষরণ হয় গরম হওয়ার ৮-১০ ঘন্টা পর এবং তা বেঁচে থাকে মাত্র ৮-১২ ঘন্টা। অপরপক্ষে জরায়ুর পরিবেশ ভালো থাকলে শুক্রাণু ২৪-৪৮ ঘন্টা বেঁচে থাকে। আবার ফেলোপিয়ান টিউবের নির্দিষ্ট স্থানে ডিম্বাণুর ভেতর প্রবেশ করতে শুক্রাণুর ক্যাপাসিটাইজেশন প্রয়োজন। ডিম্বাণু ও শুক্রাণু যাতে সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে পারে এ জন্য সঠিক সময়ে প্রজনন করতে হয়।
প্রতিকার
উপরোক্ত সমস্যাসমূহ প্রতিকারে যা করণীয় তা নিম্নে দেয়া হলোঃ
* বীজের গুণাগুণ আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। বীজের ভেতর শুক্রাণুর মটিলিটি, পরিমাণ, সংখ্যা, ইত্যাদি সঠিক হতে হবে। সে জন্য প্রজননের ষাঁড় বাঁছাই ও ছাটাই পদ্ধতি প্রজনন মানের (Estimated breeding value) ভিত্তিতে করা উচিত।
* বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন এবং যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা এবং এদের মান ঠিক আছে কিনা তা প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করা উচিত।
* তরলীকৃত বীজ পরিবহনে অসুবিধার ক্ষেত্রে তার পরিবর্তে তরল নাইট্রোজেন স্ট্র (Straw) সিমেন পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
* কৃত্রিম প্রজনন করার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রজনন করার পূর্বে বীজের গুণগত মান ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নেয়া প্রয়োজন।
* কৃত্রিম প্রজননে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
* প্রজননক্ষম বকনা বা গাভী হতে হবে সকল রোগ থেকে মুক্ত এবং প্রজননতন্ত্র হতে হবে জীবাণুমুক্ত এবং ত্রুটিমুক্ত।
* হিট বা গরমের সময় সঠিকভাবে নির্ণয় করে ডাক আসার ১২-১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজননের ব্যবস্থা করতে হবে।
* কৃত্রিম প্রজনন এবং এর মাধ্যমে গাভীর ঊর্বরতা বৃদ্ধির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কৃত্রিম প্রজনন সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার জন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগযোগ করা প্রয়োজন।
পরিশেষে বলা যায়, কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থা আমাদের মত দেশে গাভীর জাত উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তাই তো শহর ও শহরতলী এমনকি গ্রামাঞ্চলে চোখ মেললেই দেখা যায় দেশী গরুর পাশাপাশি সাদা-কালো গায়ে ছাপ অথবা ফিকে লাল রং এর বড় আকারের সংকর জাতের গরু। আবার কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জাত উন্নয়নের ফলেই চোখে পড়ে মিল্কভিটা, প্রাণ, আড়ং, ফ্রেশ ডেইরীর বড় বড় কুল ভ্যান /লরী। কৃত্রিম প্রজননের কিছুটা সুফল পাওয়ার কারণে ১৬ কোটি লোকের প্রোটিনের ঘাটতি একটু একটু করে কমে আসছে এবং গড়ে উঠেছে ছোট ছোট সংকর জাতের ডেইরী খামার। এসব খামার গড়ে ওঠার কারণে অনেক লোকের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবার ব্যবস্থা হয়েছে। যদি সরকার এ খাতে আর একটু নজর দেন তাহলে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার দুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না। দুধ ও মাংসের চাহিদা মেটাতে পারলে জাতি মেধাসম্পন্ন হয়ে ওঠার সুযোগ পাবে এবং উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
ড. মোঃ জালাল উদ্দিন সরদার
অধ্যাপক
এনিমেল হাজবেন্ড্রী এন্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
ও
সভাপতি
বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি।
#আমেরিকান_ডেইরী_লিমিটেড #হলিস্টাইন_ফ্রিজিয়ান #ফ্রিজিয়ান #ফ্রিজিয়ান_গরু #লাল_সাদা_গরু #দুধের_গাভী #ব্রাহমা #লালগরু #ফ্লেকভি #বড়গরু #দুধের_গরু #লালগরু #কৃত্রিম_প্রজনন_কেন্দ্র #গজালিয়া 🐂🐂🐂🧬