07/09/2024
C-section in Cow!
গাভীর সিজারিয়ান অপারেশন!
ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে ক্যারিয়ারের এই পর্যন্ত গরুর জটিলতম অপারেশনের মধ্যে যে কয়টি পেয়েছি তার মধ্যে সিজারিয়ান অপারেশন অন্যতম। বিভিন্ন কারণে প্রসব জনীত জটিলতায় (জরায়ুতে প্যাচ, জরায়ুমুখ না খোলা, বড় আকারের বাছুর, অপরিপক্ক যোনীপথ ইত্যাদি) সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারি একটি মানবিক পন্থা (Fetotomy অমানবিক মনে হয় বরাবই)। আমাদের দেশে প্রায়ই খামারীদের উদ্ভুদ্ধ করা হয়, ১০০% এর সিমেন (HF) দেয়ার ব্যাপারে। তবে এসব ব্যাপারে যেসকল বিষয় মাথায় রাখা দরকার, যেমন-গাভীর গঠনগত বৈশিষ্ট্য (parity), পূর্বে বাচ্চা দেয়ার ইতিহাস (P1, P2 ইত্যাদি), পুষ্টিগত বৈশিষ্ট্য নানাদিক যা একটি গাভীকে বাচ্চা ধারণ ও প্রদানে উপযোগী করে সেসব জিনিস তোয়াক্কা না করেই শতভাগ উচ্চমাত্রার সিমেন প্রয়োগ করা হয়, যার ফলে ধারণক্ষমতার অত্যাধিক আকারের বাছুর তৈরি হয়ে প্রসব জটিলতা তৈরি করতে পারে৷
এসব বড় আকারের বাছুর ডেলিভারিতে প্রায়ই দেখা যায়, অমানবিক টানাটানিতে বাছুর মারা যায়, বাছুর খালাস করতে গিয়ে গাভী ক্ষতিগ্রস্ত হয় (যোনীপথ ছিড়ে যাওয়া, জরায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, কোমড়ের হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, এমনকি মৃত বাছুর খালাস করতে গিয়ে কাটাকাটি করেও সমাধান না করতে পেরে গাভী মারা যাওয়া).
এই দীর্ঘ সময়ে প্রথম অভিজ্ঞতা ছিল ২২ মার্চ, ২০২২ তারিখ আহরন্দ, বাসুদেব ইউনিয়ন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় যেখানে একটি গাভীর প্রসবজনীত জটিলতায় টানাটানির শেষ পর্যায়ে বাছুর মারা যায়। টানাটানি করেও খালাস না করতে পেরে বাছুর পচন শুরু হয়ে গেলে ২ দিনে সিজার করা হয়।
সর্বশেষ (২০ তম সিজার) অভিজ্ঞতা ছিল, গাভী সময়ে পেরিয়ে যাওয়ার আগেই বাছুরের নড়াচড়া বন্ধ ছিল ২ দিন। প্রসবব্যাথা প্রশমিতকরণে ডেলিভারি করা প্রস্তুতি নেয়া এবং প্রয়োজনীয় মেডিসিন (induce parturation) প্রয়োগ করে নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করে ডেলিভারি না হলে সিজারের প্রস্তুতি নিতে বলা হলেও খামারী অন্য কারো প্ররোচনায় সময়ের বাইরে আরো ২ দিন অপেক্ষা করেন। কোন উন্নতি না দেখে সিজারের সিদ্ধান্ত নেন। ফলাফল, বাচ্চা মৃত এবং সেপ্টিসেমিয়ার দ্বারপ্রান্তে গাভীর জীবন সংটাপন্ন হয়।
এর মাঝে বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় সময় পার করেছি। বাছুরে মাথা কেটে নিয়ে এসেছে কিংবা পচা গলা বাছুরের সাথে জরায়ুতে পচন, জরায়ুর পচা এমনিওটিক ফ্লুইড এবডোমিনা গহ্বরে ছড়িয়ে পড়া, শরীর ভিতরে থাকায় পচন প্রক্রিয়া শুরু এবং সেপটিসেমিয়া উন্নীত হওয়ায় সিজার পরবর্তীতে গাভী মারা যাওয়া!
আলহামদুলিল্লাহ, বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় এই দীর্ঘ সময়ে প্রাপ্তি হিসেবে সফলতা হিসেবে গাভীর সিজার করাটা মোটেও জটিল কিছু নয়। এবং প্রাণির প্রতি মানবিক হতে চাইলে সিজার হতে পারে প্রসব জটিলতা লাগবের বিকল্প পথ! তথ্যগুলো আমাদের গ্রামীণ সমাজে, খামারীরের বিকল্প পথ অনুসরণ করতে পারে।
মোট সিজার: ২০ টি
সিজার পরবর্তী গাভী সুস্থতা লাভ/সফলতা : ১৬ টি
গাভী মৃত্যু: ৪ টি (সেপ্টিসেমিয়া -তেলিনগর, তালশহরপূর্ব/যাত্রাবাড়ী, রামরাইল/নবীনগর/ ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা)
ডা: নূর মোহাম্মদ শাফী
ডিভিএম, এমএস (মেডিসিন)
লাইভস্টক এক্সটেনশন অফিসার