05/02/2022
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়ালের কদর সবচেয়ে বেশি। বিড়াল শান্তশিষ্ট প্রাণী, তার মেজাজ-মর্জিও অন্যসব পোষা প্রাণী থেকে আলাদা। বিড়ালের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ যুগ যুগ ধরে অব্যাহত। ঠিক কবে থেকে বিড়ালকে পোষা প্রাণী হিসেবে রাখার প্রচলন শুরু হয়, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। প্রাক-ইসলামি যুগ থেকে শুরু করে নবী করিম (সা.)-এর জামানায় অনেকেই বিড়াল পুষতেন। এমনকি সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী (৫৩৭৫টি হাদিস তিনি বর্ণনা করেছেন) সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-কে বিড়ালের পিতা বলে ডেকেছেন নবী করিম (সা.)। তিনিও বিশ্ববাসীর কাছে আবু হুরায়রা নামে পরিচিত। তার প্রকৃত নাম আবদুর রহমান ইবনে সাখর।
‘আবু হুরায়রা’ (বিড়ালের বাবা) নামটির পেছনে একটি মজার কাহিনী রয়েছে। এক দিন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) জামার আস্তিনের নিচে একটি বিড়ালছানা নিয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হন। সে সময় বিড়ালটি হঠাৎ করে সবার সামনে বেরিয়ে পড়ল। এ অবস্থা দেখে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে রসিকতা করে, ‘হে বিড়ালের পিতা’ বলে সম্বোধন করলেন। এরপর থেকে তিনি আবু হুরায়রা নামে খ্যাতি লাভ করেন। আর সেদিন থেকে তিনি নিজেকে আবু হুরায়রা নামেই পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন।
উপরোক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বোঝা যায়, ইসলামে বিড়াল পালনে কোনো বাধা নেই। যারা মসজিদের হারাম কিংবা মসজিদে নববিতে যান, তারা সেখানে প্রচুর বিড়াল ছোটাছুটি করতে দেখেন। আগত মুসল্লিরাও তাদের পানি কিংবা খাবার দিয়ে থাকেন।
অনেকেই জানতে চান, বিড়াল পালা কি জায়েজ? এর উত্তরে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, হ্যাঁ, বিড়াল পালা বৈধ। তবে তাকে কোনো ধরনের কষ্ট দেওয়া যাবে না। বিড়াল পুষতে চাইলে অবশ্যই তাকে পর্যাপ্ত খাদ্য-পানীয় সরবরাহ করতে হবে। বিড়ালের প্রতি যথাযথ দয়া-অনুগ্রহ দেখাতে হবে। বিড়ালকে কোনো ধরনের কষ্ট দেওয়া যাবে না। শুধু বিড়াল নয় কোনো প্রাণীর ওপর কোনো ধরনের অমানবিক নির্যাতন কিংবা অবিচার করলে গোনাহগার হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জনৈক মহিলাকে বিড়ালের প্রতি অমানবিক আচরণের কারণে আজাব দেওয়া হয়। সে বিড়ালটি বন্দি করে রাখে, এ অবস্থায় বিড়ালটি মারা যায়। এমনকি বন্দি করে রেখে পানাহার করায়নি এবং ছেড়েও দেয়নি, যাতে করে বিড়ালটি জমিনের পোকা-মাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে।’ সহিহ মুসলিম : ৫৭৪৫
বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেছেন, ‘এ হাদিস থেকে বিড়াল পালা ও বিড়ালকে বেঁধে রাখা জায়েজ বলে প্রমাণিত হয়, যদি তাকে খানাপিনা দেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি না করা হয়।’ ফাতহুল বারি : ৬/৪১২
এ ছাড়া আরও কিছু হাদিস রয়েছে, যা থেকে বিড়াল পালা জায়েজ প্রমাণিত হয়। সুতরাং পৃথিবীতে বিড়ালসহ আল্লাহর যত সৃষ্টি রয়েছে, সবকিছুর প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করতে হবে। কেননা, নবী করিম (সা.) নিজেও তা করেছেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন অজু করতেন তখন নিজের অজুর পাত্র থেকে বিড়ালকে পানি পান করাতেন। এ সম্পর্কে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দয়াবানদের ওপর দয়াময় আল্লাহও দয়া করেন। তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ আবু দাউদ : ৪৯৪১
দুনিয়ায় আল্লাহর যত সৃষ্টি রয়েছে সবকিছুর প্রতি দয়া অনুগ্রহ করতে হবে। বিশেষ করে, মানুষের পরম বন্ধু বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা বা মমত্ববোধ দেখাতে হবে। সমাজের অনেকেই আছে, যারা বিড়াল দেখলে তাড়িয়ে দেয়, অকারণে পেটায়, গায়ে গরম পানি ছুড়ে মারে এসব পাপের কাজ; যা মোটেও কাম্য নয়।