24/10/2022
Topic:
Dead In Shell অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম আমাদের কাছে।
আজকে Dead In Shell অর্থাৎ ডিমের ভিতরে বাচ্চা মারা যাওয়ার কারণ গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, পাশাপাশি সমাধান ও জানিয়ে দিবো।
in Shell অর্থাৎ ডিমের ভিতরে বাচ্চা মারা যাওয়ার কারণঃ
১. ইনব্রিডিং(inbreeding)- একই জীন পরস্পরের সাথে মিলিত হওয়ার ফলে ভ্রূণ(Embryo) এতটাই দূর্বল হয়ে যায় যে, যার ফলে অনেক সময় ডিমের ভিতরেই বাচ্চা মারা যায়।
২. অপুষ্টি(malnutrition)- অপুষ্টির জন্য পিতার শুক্রাণু দূর্বল থাকলে সেই শুক্রাণু প্রজননে ব্যঘাত ঘটায়। দূর্বল শুক্রাণু দ্বারা জন্মানো বাচ্চা অনেক সময় ডিম থেকে বের হতে না পেরে ডিমের ভিতরেই মারা যায়।
৩. আর্দ্রতা(Humidity)- আর্দ্রতা অতিরিক্ত কম কিংবা বেশি হওয়ার ফলে ডিমের ভিতরের অক্সিজেনের মাএা ঠিক থাকে না। যার ফলে বাচ্চা ডিমের ভিতরের মারা যায়।
৪. বক্সের সাইজ খুব বেশি বড় বা ছোট- বক্স বেশি বড় হলে পাখির নেস্টিং করতে সমস্যা হয়। যার ফলে যথাযথ নেস্টিং হয় না এবং ডিম ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। ডিমে ঠিকমতো তা না পড়লে এই সমস্যাটি হয়।
৫. অপরিষ্কার নেস্টিং মেটারিয়াল- নোংরা ও অপরিষ্কার নেস্টিং মেটারিয়ালে অনেক জীবানু, ব্যাকটেরিয়া থাকে যা ডিমের খোসার উপর আলগা আবরণ সৃষ্টি করে এবং ডিম নস্ট হয়ে যায়।
৬. অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ব্যবহার- পাখির শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ব্যবহার করলে ডিমের খোসা বেশি শক্ত হয়ে যায়, যার ফলে বাচ্চা ডিম ফেটে বের হতে না পেরে ভিতরেই মারা যায়।
৭. ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাল সংক্রমণ- ব্যাকটেরিয়াল আক্রমণের ফলে ডিমের ভীতরের ভ্রুন দূর্বল হয়ে যায়। যার ফলে বাচ্চা ডিমের ভিতরেই মারা যায়।
৮. বক্সে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাচ্চার উপস্থিতি-
আগের ব্রীডের বাচ্চা বক্সে থাকলে কিংবা বক্সে আসা যাওয়া করলে এই সমস্যাটি হতে পারে। কারণ ওইসব বাচ্চারা বক্সে থাকা ডিম নিয়ে খেলতে থাকে এতে ডিমের ভ্রুনের ক্ষতি হয়। তারপর এরা ডিমের উপর পায়খানা করে এতে ব্যাকটেরিয়া ডিমের উপর লেগে যায়। আবার অনকে সময় ডিম ছিদ্র করে ফেলে যার ফলে ভিতরে বাতাস প্রবেশ করে এবং বাচ্চা মারা যায়।
৯. কম বয়সি পাখি- কম বয়সের পাখিকে ব্রীডে দেওয়া হলে অনেক রকমের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন কম বয়সি ফিমেলকে ব্রীডে দিলে অনেক সময় ডিম আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ঠিক তেমনি কম বয়সি মেলের শুক্রানু শক্তিশালী না হওয়ার কারণে অনেক সময় ডিম ফার্টাইল হলেও দুর্বল শুক্রানুর ফলে বাচ্চা সম্পূর্ণ পুষ্ট হতে না পেরে ডিমের ভিতরেই মারা যায়।
১০. ব্যায়ামের অভাব- ব্যায়ামের অভাবে পুরুষ পাখির শুক্রানু আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে যায়। যা পরবর্তীতে ডিম ঠিকমতো জমাতে পারে না অথবা ডিম জমালেও বাচ্চা ডিম থেকে বের হওয়ার মতো শক্তি পায় না, যার ফলে বাচ্চা ভিতরেই মারা যায়। কিছু কিছু বাচ্চা ডিম থেকে বের হতে পারলেও খুব দূর্বল থাকে এবং বৃদ্ধি ঠিক মতো হয় না।
১১. বাতি জ্বালানোর ভুল পদ্ধতি- আমরা অনেক সময় ময়লা হাতে ডিম ধরি চেক করার জন্য। তখন আমাদের হাতে থাকে জীবানু ডিমের গায়ে লেগে যায়। এতে করে নানা রকমের ব্যাকটেরিয়া ডিমের ভীতরে প্রবেশ করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে ডিমের ভ্রুন ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ডিম নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া বার বার ডিম নাড়াচাড়া করার ফলেও ডিমের ক্ষতি হয়।
১২. ডিম ধোয়া- আমরা অনেকেই এই ভুলটা করে থাকি যে আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে বার বার ডিম ভিজাতে থাকি। এতে করে ডিমের ভিতর ও বাইরের তাপমাএার ব্যাঘাত ঘটে। যার ফলে বাচ্চা মারা যায়।
in Shell অর্থাৎ ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় গুলোঃ
১. ইনব্রিডিং করানো যাবে না।
২. পাখির খাবারের পুষ্টির গুনাগুন ঠিক রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে সকল প্রকারের ভিটামিন, মিনারেল, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি যেন সঠিক মাএায় থাকে।
৩. আর্দ্রতা ৬০-৬৫ ডিগ্রী রাখতে পারলে সব থেকে ভালো।
৪. বক্সের আদর্শ কিছু মাপ রয়েছে। যেমনঃ ৬”৮”৭” / ৭”৭”৯” / ৬”৮”৯” (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা অনুসারে)
৫. প্রতি ব্রীডের পর বাচ্চা বড় হয়ে গেলে বক্স ভালো মতো জীবানুনাশক দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে ব্যবহার করতে হবে।
৬. আমরা সবাই জানি, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। পাখিদের কোনো ভাবেই প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত মেডিসিন দেওয়া যাবে না। যতটুকু সম্ভব প্রাকৃতিক খাবারের উপর জোর বাড়াতে হবে।
৭. পেয়ারের কারো ভাইরাল কিংবা ব্যাকটেরিয়াল জনিত সমস্যা থাকলে ভ্রুন দুর্বল হয়ে যায়। এজন্য ব্রীডে দেওয়ার আগে প্রোবায়োটিক ব্যাবহার করা যেতে পারে।
৮. বাচ্চা বড় হয়ে গেলে বাচ্চা সরিয়ে তারপর পুনরায় ব্রীডে দেওয়া যাবে। আর বক্সে বাচ্চা থাকা অবস্থায় ফিমেল পুনরায় ডিম দিয়ে ফেললে বাচ্চা সরিয়ে অন্য পেয়ারকে দিতে হবে কিংবা হেন্ডফিডিং করাতে হবে।
৯. কম বয়সি পাখি দিয়ে ব্রীড করানো ঠিক না। ব্রীড করানোর জন্য মেলকে অবশ্যই ৮/৯ মাস হতে হবে, ফিমেলকে ১০মাস+ হতে হবে। সবথেকে ভালো হয় বয়স ১ বছর+ হলে।
১০. পাখিকে অবশ্যই ব্যায়াম করতে দিতে হবে। ব্রীডিং কেজ সাইজ ছোট হলে অফ সিজনে পেয়ারকে বড় ফ্লাইং কেজে দিতে হবে। কেজে কিছু খেলনা, দোলনা দিতে পারলে বেশি ভালো হয়।
১১. ডিম জমেছে কিনা সেটা চেক করার জন্য ছোট টর্চ লাইট ব্যবহার করতে হবে যেটার দ্বারা ডিমে হাত না সরাসরি চেক করা যাবে।
১২. আর্দ্রতার তারতম্যের কারণে কোনো ভাবেই ডিম ভেজানো যাবে না। প্রাকৃতিক ভাবে পাখি নিজেই গোসল করে ডিমে বসে পরে।