18/08/2021
লেয়ার মুরগি পালনে লাভজনক হতে হলে টাইটার টেস্ট খুবেই প্রয়োজন।দেশের বড় বড় নামি-দামি বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায় যে তারা নিজেদের ল্যাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুরগী পালন করছেন কিন্তু মাঠ পর্যায়ের খামারিরা সেই সেবা পাচ্ছেন না। তাই বর্তমানে প্রান্তিক খামারিদের এই সেবা প্রদানের জন্য পাশে আছেন নাহার ভেট কেয়ার সেন্টার, সাভার, ঢাকা। ল্যাবের সেবা নিন, মুরগীকে ভাল রাখুন, মুরগী পালনে খরচ কমান এবং লাভবান হোন।
টাইটার টেস্টের গুরুত্ব (কেন টাইটার টেষ্ট করাবেন)।
১.ভেক্সিন রিয়েকশন দূর করতে(৬০%ফার্মে মাইকোপ্লাজমা ও রাণীক্ষেত টাইটার ভাল থাকা অবস্থায় ভেক্সিন দেওয়া হচ্ছে এর ফলে ভেক্সিন রিয়েকশন হয়ে মুরগী অসুস্থ/মারা য়াচ্ছে)।
২.ধকল দূর করতে (ভেক্সিন দেওয়ার ফলে মুরগী ডিম পারার পাশাপাশি ভেক্সিনের বিপরীতে এন্টিবডি তৈরি করতে মুরগির শরীরে অতিরিক্ত কাজ শুরু হয়, ফলে ২টি কাজ একসাথে করতে মুরগির শরীরে ধকলের সৃষ্টি হয়।তাই টাইটার দেখে ভেক্সিন দিলে এই ধকলের সংখ্যা অনেক কমে যাবে। টাইটার ভাল তো নো ভেক্সিন, টাইটার খারাপ তো ভেক্সিন দিতে হবে)।
৩.ভেক্সিন দেওয়ার পর ভেক্সিনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাচাই করতে -লাইভ ভেক্সিন দেওয়ার ১৪-১৫ এবং কিল্ড ভেক্সিন দেওয়ার ২৫-২৮ দিন পর টাইটার টেস্ট করলে বুঝা যায় যে ভেক্সিনটি কতদিন রোগ প্রতিরোধ করতে পারবে। এক্ষেত্রে কাঙ্খিত টাইটার না আসলে বুঝতে হবে যে কোন কারনে ভেক্সিন ফেইলর হয়েছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করে ফার্মকে ভাল রাখা।অন্যদিকে ভেক্সিন ফেইলরের কারন খুঁজে বের করে পরবর্তীর জন্য সাবধানতা অবলম্বন করা।
৪. অনাকাঙ্খিত রোগ থেকে মুক্ত রাখতে- প্রায় সময়ই দেখা যায় ভেক্সিন দেওয়ার পর বিভিন্ন রোগ চলে আসে অর্থাৎ রোলিং ইনফেকশনে থাকা রোগগুলো খুব সহজেই ফার্মে প্রবেশ করে।
৫. ফার্ম নিরাপদ রাখতে।
৬. ভেক্সিন সিডিউল মেনে চললেও টাইটার দেখে ভেক্সিন দেওয়া উচিত কারন একই ভেক্সিন সব ফার্মে সমান প্রতিরোধ ক্ষমতা নাও তুলতে পারে (কম/বেশি)। ভেক্সিনের ভাল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উঠা অনেকটা ভাল ম্যানেজমেন্টের উপরও নির্ভর করে।
৭. আমরা প্রায়ই ১-২ মাস পরপর সালমোনেলা, মাইকোপ্লাজমা ও রাণীক্ষেতের ভেক্সিন দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেই, এটি কতটুকু সঠিক।খামারিদের যা করা ফার্মের জন্য ভাল তা হলো- মাইকোপ্লাজমা ও সালমোনেলা টেষ্ট পজিটিভ হলে ডোজ করানো, টাইটার কমে গেলে ভেক্সিন দেওয়া। তা না করে ভাল প্রোডাকশনের মুরগিকে এন্টিবায়োটিক এবং ভেক্সিন দিয়ে ইমিউনিটি ডাউন করে অন্যান্য বড় ধরনের রোগকে সাদর আমন্ত্রণ জানানো হয়।
৮.ফার্মের খরচ কমাতে-যেমন ধরি, ২০০০ লেয়ার ফার্মে মাইকোপ্লাজমা ও সালমোনেলার ডোজ করতে ৮০০০-১০০০০ টাকা লাগে,সেক্ষেত্রে ১০০০-১২০০ টাকা খরচ করে টেষ্ট করলে তার ৮০০০-১০০০০ টাকা নাও লাগতে পারে।
৯.গ্রোয়িং সময়ে মুরগী শুকিয়ে যায়, মারা যায়, কোন লক্ষন পাওয়া যায় না এই অবস্থায় টাইটার টেস্ট করা জরুরি কারন টাইটারের সমস্যা হলে এরকম হতে পারে।
১০.লিশন ও লক্ষন দেখে এ.আই ও রাণিক্ষেত আলাদা করা কঠিন, তাই টেষ্ট ই বেষ্ট।
১১.আমরা ফিল্ডে যতগুলো রোগ দেখি অনেকগুলোই রাণীক্ষেতের টাইটার না জেনে ভেক্সিন দেওয়ার কারনে হয় কারন আমাদের অজান্তেই টাইটার ৫ এবং তার নিচে চলে আসে বা টাইটার বিভিন্ন ধরনের হয় মানে মুরগির টাইটারের ইউনিফরমিটি খারাপ থাকতে পারে। রোলিং ইনফেকশন এবং মাইকোপ্লাজমা থাকা অবস্থায় লাইভ ভেক্সিন(লাসোটা)দিলে মর্টালিটি বেড়ে যায়। টাইটার টেস্ট না করার কারনে এই অবস্থায় ভেক্সিন দিয়ে মাথায় হাত রেখে বসে পড়ে খামারি আর অন্যদিকে বলা হয় এ.আই হয়েছে।
১২. অনেক সময় টাইটার ৭-১০(ভাল) থাকা অবস্থায় ভেক্সিন দেওয়া হয় এতেও সমস্যা হয়।ভেক্সন রিয়েকশনের কারনে ঠান্ডা লাগার মত হয়।এতে ৭-১৫ দিন বিভিন্ন মেডিসিন চলতে থাকে। অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক দেওয়ার কারনে ডিসব্যাক্টিরিওসিস হয়, মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।অন্যান্য রোগ চলে আসে।ক্রনিক রানীক্ষেত তিন(০৩) সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। অনেকদিন পর্যন্ত ঘড় ঘড় শব্দ করে, এন্টিবায়োটিক দিয়ে কাজ হচ্ছে না, ভেক্সিনও দেওয়া হয়েছে এর অর্থ টিকা কাজ করে নাই বা টাইটারের সমস্যা।
খামারি এবং পোল্ট্রির সাথে জরিত প্রাক্টিশনারগন সবাই নিয়মিত টাইটার টেষ্ট করি এবং খামারকে ভাল রাখি।