23/06/2024
আমার নিজের ইউনিভার্সিটি সহ আরো অনেকগুলো ইউনিভার্সিটির ২০১৮ ব্যাচের গ্র্যাজুয়েশন শেষ। অনেকের একদম শেষ হওয়ার পথে। জীবনের পরবর্তী অংশে অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমানোর নিয়ত করছেন। হয় তো আগামী বছরের এই সময়ে আপনাদের কাছ থেকে শুনবো এক এক দেশের এক এক ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামে যাচ্ছেন।
আপনাদের সবার উদ্দেশ্যে এই অধমের অল্প কয়েকটা কথা। আমার দেখা বেশির ভাগ মানুষের বিদেশ পাড়ি জমানোর চিন্তার পেছনে সবচেয়ে বড় যেই মোটিভেশন, তা হল এই দেশের নানা দূর্নীতি,অনিয়ম,জুলুম থেকে তারা বের হতে চান। যেখানে একটা সাধারণ প্রশাসনিক কাজ করতে গেলেও হাজার হাজার টাকা ঘুষ দেয়া লাগে, সেই সিস্টেমে ঢুকে আপনাদের মেধার অবমূল্যায়ন হোক তা আপনারা চান না। হারাম উপার্জন থেকে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে হেফাজতের জন্য আপনাদের এই চিন্তাকে শ্রদ্ধা জানাই।
একই সাথে আপনাকে আরো একটা আশংকার কথা বলি। যেই শরীরকে আপনি হারাম থেকে বাঁচানোর জন্য বিদেশে পাড়ি জমাবেন, বিদেশ গিয়ে দেখবেন এখানেও হারাম আছে। হয়তো সেই হারামের ফর্ম ভিন্ন। দেশে যেমন একটা সোশ্যাল ব্যারিয়ারের কারণে হলেও সহজে নিজের নৈতিকতার সাথে কম্প্রোমাইজ করা থেকে বেঁচে যেতেন, এখানে সেই ব্যারিয়ারটা নেই। সবচেয়ে বড় যেই ক্ষতির সম্মুখীন হবেন,তা হল আপনার দ্বীন/জীবনব্যবস্থা নিয়ে আপনার মধ্যে সংশয় তৈরি হবে। "এদের কাছে দ্বীন নেই, অথচ এরা কত উন্নত! আর আমাদের দেশের লোকেরা নামাজ পড়ে ঘুষ খায়" এমন চিন্তা জমতে জমতে কে জানে আপনার বিদ্বেষের সীমানা কতটুকুই বা চলে যায়। কিংবা, নিজের বিশ্বাসকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে কোনো সময় লিবারেল আর কখনো ক্যাথলিক প্রচারকদের নানা জটিল প্রশ্নে আটকে যাবেন।
ভবিষ্যত প্রজন্মকে এমন একটা দ্বীনহীন পরিবেশে বড় করানোর ব্যাপারে আলিমরা নিরুৎসাহিত করেন। কারণ, তৃতীয় জেনারেশনে এসেই তাদের মধ্যে দ্বীন টিকে থাকা অসম্ভব প্রায়। তাই, স্থায়ীভাবে তাদের দেশগুলোতে বসবাসের ব্যাপারে আলিমদের কিছু ফতোয়া আছে। সেগুলো দেখে নেবেন।
আমার লিখার উদ্দেশ্যটা আপনাদেরকে বিদেশ যাওয়াতে বাঁধা দেয়া না। বরং, একটু রিমাইন্ডার দেয়া। এসব দেশে যেহেতু যাবেনই, একটা ভাল প্রিপারেশন নিয়ে যান। এমনভাবেই যান, যেন সেখানে দাঈ হিসেবে যাচ্ছেন। নিজের দ্বীনই শুধু হেফাজত করবেন না, বরং অন্য ৫ টা মানুষকে দ্বীন শিখিয়ে আসবেন, এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে যান।
এখন থেকেই পড়াশোনা শুরু করেন। কি পড়বেন?
- response to anti islam ওয়েবসাইটে ইসলামের ব্যাপারে নানা সময়ে তোলা নাস্তিক ও মিশনারীদের বিভিন্ন আর্গুমেন্টগুলোর খন্ডন সুন্দরভাবে করা আছে। ধরে ধরে আর্টিকেলগুলো পড়া শুরু করে দেন।
- অনেকে তো আইএল্টস এর প্রিপারেশন নেয়ার জন্য ডেইলি এক ঘন্টা করে পডকাস্ট শুনে থাকেন। তাহলে, একটা কাজই করেন না। ওই পডকাস্টটাকে ড্যানিয়াল হাকিকাতজু/হামজা জর্জিস/মোহাম্মাদ হিজাবের লেকচার/ডিবেইটগুলো দিয়ে রিপ্লেস করে দেন।
- স্পিকার্স কর্নারসহ আরো বিভিন্ন পাবলিক ডিবেইটগুলো ইউটিউবে পাওয়া যায়। অনেক এক্টিভিসিটরা ওইখানে কাজ করছেন। দেখেন, কত মানুষ শাহাদাহ পড়ে মুসলিম হয়ে যায় ওইখানে।
- বাংলা ভাষাতেই এখন অনেক সমৃদ্ধ বইয়ের ভান্ডার আছে, যেগুলোতে ইসলামের ব্যাপারে বিভিন্ন আপত্তিগুলোর খন্ডন পাওয়া যায়। একটা প্যাটার্ন ধরে আগান।
- পশ্চিমের বিভিন্ন ফিতনা ল্গ বত, ফেমিনiজম, লিব্রেল*ইজম এগুলোর ব্যাপারেও বাংলা ভাষায় প্রচুর বই এখন আছে। পড়া শুরু করেন৷ তখন রিয়েলাইজেশন আসবে যে, ওয়েস্টকে বাইরে থেকে যতই চাকচিক্যভরা মনে হোক, তার ভেতরটা অন্ত সারশূন্য। সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
- আলিমদের সাথে সম্পর্ক রাখেন। দেশে থেকেই একজন ইলম আর ইখলাস ওয়ালা আলিমের সাথে সম্পর্ক তৈরি করবেন। বাইরে গেলে নানা জিনিসের ফতোয়া জানা লাগবে। উনাদেরকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেন তখন।
- এখনো নবীজির সীরাত পড়েন নি? যেই মানুষটাকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসেন, তাঁর ব্যাপারে বিদেশে গিয়ে বলতে পারবেন তো ঠিকঠাকমতো?
কেই বা জানে! আপনার পিএইচডি শেষ হতে হতে আল্লাহ তা'আলা ৫ জন মানুষকে আপনার মাধ্যমে হেদায়েত দিয়ে দিবেন। নিজেকে এভাবে প্রস্তুত করেন। এবং আল্লাহর কাছে দু'আ করেন, "ইয়া রাব্বি! আপনি আমাদেরকে এমন হাদী বানিয়ে দিন, যারা নিজেরাও হিদায়াতের উপর থাকে"।
(আমার এই লিখার উদ্দেশ্য বিদেশ যাওয়াতে কাউকে উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিত করা কোনোটাই না। যারা যাবেন, তাদের সিদ্ধান্তে আমি হস্তক্ষেপ করছি না। শুধু অনুরোধ, যাচ্ছেনই যেহেতু, প্রস্তুতি ছাড়া যায়েন না। প্লিজ)
-ফারহান গনি