25/04/2024
প্রসঙ্গ: অতিরিক্ত গরমে পাখির যত্ন।
প্রচন্ড গরমে যখন মানুষের প্রান ওষ্ঠাগত, তখন ক্লিনিক এবং অনলাইনে এ আমার ধারনার থেকেও বেশি পাখি দেখতে হচ্ছে যাদের অসুস্থতা মুলত অতিরিক্ত গরম জনিত কারনে। এই গরমে আমাদের বোবা পাখি গুলো আমাদের থেকেও বেশি কষ্টে আছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে... অনেক পাখি হিট স্ট্রোক এ মারাও যাচ্ছে ইদানিং। তাই চলুন জেনে নেই হিট স্ট্রোকের লক্ষন কি কি এবং এর প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় গুলো কি...
হিট স্ট্রোকের লক্ষন:
১. দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস
২. পাখা ঝুলিয়ে রাখা
৩. দুই পা ফাকা করে দুর্বল ভাবে বসে থাকা
৪. কিছু ক্ষেত্রে পাখা উচু করে রাখতে পারে যাতে শরীর থেকে পাখা গুলো একটু দূরে থাকে এবং তুলনামুলক কম গরম লাগে
৫. মুখ হা করে শ্বাস নেওয়া
৬. জিহবা উজ্জ্বল লাল বা ফ্যাকাসে হয়ে থাকা
৭. মুখ থেকে লালা পড়া
৮. বমি- ডায়রিয়া করা
৯. টালমাটাল করে হাটা।
১০. বাইরের কার্যক্রমে রেস্পন্স না করা
১১. সব শেষে খিচুনী আসা বা প্যারালাইজড হয়ে পড়ে থাকা এবং মারা যাওয়া।
প্রতিকার:
হিট স্ট্রোকে খুব বেশি সময় হাতে পাওয়া যায় না আসলে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন পাখিকে চেপে ধরতে গিয়ে বা টানা হেচড়া করতে গিয়ে আমরা আরো বেশি স্ট্রেসড করে না ফেলি...
১. দ্রুত পাখিকে তুলনামুলক ঠান্ডা জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে তবে এসি বা অতরিক্ত ঠান্ডা জায়গায় নেওয়া যাবে না
২. পাখা এবং পা গুলো ট্যাপের পানিতে ভিজিয়ে দিতে পারেন
৩. আক্রান্ত পাখিকে একটা ভেজা টাওয়েল এর উপর দাড় করিয়ে রেখে ট্যাপের পানি স্প্রে করতে পারেন।
৪. পাখার নিচে পানি দিয়ে ভেজানো তুলা দিয়ে দিতে পারেন।
৫. দ্রুত নিকটস্থ ভেটেরিনারিয়ান এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।।
প্রতিরোধ:
এটাই আজকের প্রধান আলোচ্য বিষয়। কারন হিট স্ট্রোক হওয়ার আগেই যা করার করা যায়... একবার হয়ে গেলে খুব একটা কিছু করার থাকে না হাতে.... তাই নিচের ব্যপার গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে গরম কালে:
জায়গা: প্রথমত, পাখিকে গরমের কষ্ট থেকে দূরে রাখতে হলে অবশ্যই ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে... আমরা যারা ছাদে পাখি পালি অথবা বারান্দায় পাখি পালি, অবশ্যই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাখি কে সম্ভব হলে বাসার ভেতর রাখতে হবে। একান্তই অপারগ হলে ছায়াযুক্ত এবং পর্যাপ্ত বাতাস আছে এমন জায়গায় রাখতে হবে... সেটাও সম্ভব না হলে অবশ্যই কৃত্তিম ভাবে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে
বাতাস: খাচায় পর্যাপ্ত বাতাস যাতে চলাচল করে সেই ব্যবস্থা করতে হবে... প্রয়োজনে ফ্যান দিতে হবে
খাচার আয়তন: পাখিকে অবশ্যই গরমে একটু বড় খাচা দিতে হবে... গরমে অনেকগুলা পাখি এক সাথে থাকলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
গোসল: গরমে একটু পানির ধারা পাখিদের জন্য প্রশান্তির কারন হতে পারে। তাই গরমে পাখির খাচার একপাশে ইচে দেওয়া ছবির মতো পানির ফোয়ারা বা ইলেক্ট্রিক স্প্রেয়ার দিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে এটা যেন পাখির অতিরিক্ত স্ট্রেস এর কারন না হয়। ইলেক্ট্রিক ফোয়ারা দেওয়া সম্ভব না হলে অবশ্যই দিনে দুই থেকে তিনবার পানি স্প্রে করে দিবেন যাতে করে পাখিগুল নিজের থেকে গোসল করতে পারে সেই পানিতে...
খাবার: অতিরিক্ত গরমে পাখির খাবার খাওয়ার হার কমে যায়। তাই পাখিকে অবশ্যই এই গরমের সময় সকালে সুর্য ওঠার আগেই খাবার এবং পানি দিয়ে দিতে হবে বা রাতে ঘুমানোর আগে খাবার পাত্র ভর্তি করে রাখতে হবে যাতে সকালে তারা ঠান্ডা সময় খাবার খেতে পারে। আবার একই ভাবে সন্ধ্যার পর কিছুক্ষন আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে যাতে পাখি গুলো সন্ধ্যার পর কিছুক্ষন ঠান্ডা পরিবেশে খাবার খেতে পারে।
পানি: গরমে পাখিদের পানির প্রয়োজন বাড়ে... তাই গরমের সময় পাখিকে পানি খেতে উৎসাহিত করার জন্য খাচায় পানির পাত্রের পরিমান বাড়িয়ে দিতে হবে। গরম কালে পানি যেহেতু একটু পর পর ই গরম হয়ে যায় এবং একই সাথে উষ্ণ পরিবেশ আর অতিরিক্ত আদ্রতায় ব্যাক্টেরিয়া ছত্রাক এগুলো বেশি জন্মায়। তাই গরম কালে একটু পর পর পানির পাত্র পরিস্কার করে নতুন শীতল পানি দিতে হবে।
স্ট্রেস: গরম কালে নতুন করে কোন স্ট্রেস ফ্যাক্টর যেন ট্রিগার না করে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত। যেমন কোন শিকারী প্রানী বা পাখি যাতে খাচার সামনে না আসে, অপরিচিত মানুষ বা বহিরাগত পাখি খাতা থেকে দূরে রাখা, খাচায় নতুন পাখি না ঢোকানো ইত্যাদি।
ওষুধ: গরমকালে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ পরিহার করে চলা ভালো। তবে পানিতে এন্টি স্ট্রেস সাপ্লিমেন্ট, ভিটামিন সি এগুলো দিয়ে রাখা যেতে পারে।
ইম্যিউন বুস্টার: গরমে পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাই সহজেই বিভিন্ন ভাইরাল ডিজিজ এ আক্রান্ত হয়। তাই এই সময় পানিতে নিয়মিত একটা ইম্যিউন বুস্টার দিয়ে রাখা উচিত।
ডা. আহমদ রাফি
সিনিয়র কনসালটেন্ট,
কেয়ার এন্ড কিউর ভেটেরিনারি ক্লিনিক,
ধানমন্ডি, ঢাকা।